গোবিন্দ রায়: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ মিটারের মধ্যে করা যাবে না ধরনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশকেই। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর দায়ের করা মামলায় নির্দেশ বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর। এর আগে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাও একই নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সোমবার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, “বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আদালতে আসেন। তাঁর অভিযোগ ২৩ নভেম্বর অফিসে ঢিল ছোঁড়া হয়। পুলিশকে জানানোর পরেও কোন কাজ হয়নি। রাজাশেখর মান্থা ব্যানার, পোস্টার সরিয়ে ফেলা এবং তিনজন পুলিশকর্মীর নিরাপত্তার কাজ দেখভালের নির্দেশ দেন। তা সত্ত্বেও সেন্ট্রাল লাইব্রেরির বাইরে ধরনা চলছে। ঘেরাও উঠেছে শনিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ মিটারের মধ্যে ধরনা চলছে। আদালত অবমাননার মামলা করেননি কেন?” উপাচার্যের আইনজীবী বলেন, “এরা আলাদা আন্দোলনকারী তাই অবমাননার মামলা করা হয়নি।” এরপর বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানিয়ে দেন, মান্থার নির্দেশ বহাল থাকবে। আলাদা কিছু বলার থাকলে নতুন করে জনস্বার্থ মামলা করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: দেশে প্রথম, এবার ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে মিলবে ডাউন সিনড্রোম চিকিৎসা]
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন ধরেই চরমে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অশান্তি। পড়ুয়াদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছর ধরে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন উপাচার্য। যাকে খুশি তাকে সাসপেন্ড করা, শোকজ করা, বদলি করা, কোনও কর্মীর বেতন বন্ধ করে দেওয়া যেন রোজনামচায় পরিণত করেছেন। বাদ যাননি পড়ুয়ারাও। উপাচার্যের রোষের শিকার হয়েছেন তাঁরাও। কাউকে হস্টেল থেক বহিষ্কার, তো কাউকে সাসপেন্ড করে শিক্ষাঙ্গন থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাঁর অফিসের সামনে যান পড়ুয়ারা। উপাচার্যের নির্দেশে নিরাপত্তারক্ষীরা পড়ুয়াদের দিকে কার্যত ধেয়ে আসেন। পড়ুয়ারাও তাঁদের দাবি জানাতে নাছোড়বান্দা। উপাচার্য নিরাপত্তারক্ষীদের পড়ুয়াদের উপর ‘গুলি চালানো’রও নিদান দেন বলেই অভিযোগ। এরপর পড়ুয়া ও নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
সেই ঘটনার পর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের বাসভবনের সামনে মঞ্চ করে আন্দোলন চালাচ্ছেন পড়ুয়ারা। যার জেরে গৃহবন্দি উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। মাঝে উপাচার্য বাড়ি থেকে বেরনোর চেষ্টা করেন। সেই সময় তাঁকে বাধা দেন পড়ুয়ারা, এমনটাই অভিযোগ। ফেরার সময়ও অশান্তি হয়। পড়ুয়াদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। নিরাপত্তারক্ষীরা ধরনা মঞ্চের আলো ভেঙে দেয় বলেও অভিযোগ। এরপর অন্ধকারে খুলে দেওয়া হয় ধরনা মঞ্চ। সরিয়ে ফেলা হয় চেয়ার টেবিল। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান আন্দোলনকারীরা। ধরনা মঞ্চ সরালেও লাভ হবে না বলেই সাফ বার্তা আন্দোলনকারীদের। এই পরিস্থিতিতেই নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।