গোবিন্দ রায়: বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কট করে, এজলাসের বাইরে বিক্ষোভের ঘটনায় হাই কোর্টের নির্দেশে ৮৬ জন আইনজীবীর নামের তালিকা জমা দিল হাই কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু এই তালিকায় খুশি নয় বিচারপতি টিএস টি.এস শিবাগননাম, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাসের বৃহত্তর বেঞ্চ। আদালত চায়, নির্দিষ্ট আইনজীবীদের নামের তালিকা, যারা ঘটনার দিন বিক্ষোভ কর্মসূচিতে থেকে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। এবং ইচ্ছুক আইনজীবীদের এজলাসে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল।
এনিয়ে এবার রাজ্য বার কাউন্সিলকে দায়িত্ব দিল আদালত। তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ জানিয়েছে, এবার হাই কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের পাশাপাশি, রাজ্য বার কাউন্সিলও বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের শনাক্ত করবে। এনিয়ে দুটি সংস্থা আলাদা আলাদা রিপোর্ট পেশ করবে। এবং জাতীয় বার কাউন্সিলের সঙ্গেও এই তথ্য দিতে হবে। একই সঙ্গে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আইনজীবীদের নিজেদের বক্তব্য হলফনামা আকারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
[আরও পড়ুন: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে পচা ডিম, শুকনো ভাত! বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন অভিভাবকরা]
হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এজলাসের বাইরে বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের নামের তালিকা দেবে বার অ্যাসোসিয়েশন। সেই নির্দেশ মতো এদিন ভরা এজলাসে ৮৬ জনের নামের তালিকা দেয় বার। তা নিয়ে বার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে বিচারপতি শিবাগননামের মন্তব্য, “এই ৮৬ জন আইনজীবী কখনই আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছিলেন না। অযথা এই মামলা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।” বিচারপতি জানান, “আমরা দেখেছি এজলাসের বাইরে বিক্ষোভের ঘটনায় ১০ থেকে ১২ জন যুক্ত ছিলেন। যারা প্রথম সারিতে থেকে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ছিলেন। আমরা চাইলেই কড়া পদক্ষেপ করতে পারি।” তিনি আরও বলেন, “রাজ্য বার কাউন্সিল আদালতকে সাহায্য না করতে পারলে আমরা জাতীয় বার কাউন্সিলের সাহায্য নেব। তখন সিদ্ধান্ত তাদের হাতে থাকবে। তাতে কি খুব ভালো হবে ?”
বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, “আমরা চাই প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষা করতে, কিন্তু সত্যিটা সামনে আসা দরকার। আমরা চাইলেই আদালত অবমাননার রুল জারি করতে পারি।” পাশাপাশি, এদিন আদালতে উপস্থিত বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষের উদ্দেশে বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ প্রশ্ন, “আপনি কি আদালতকে ভয় পান না? সম্মান করেন না ?” তবে এনিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বারের সভাপতি। এ প্রসঙ্গে এদিন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “তাঁরা ক্ষমাপ্রার্থনা করলে আমরা এই সমস্যার সম্মানজনক সমাধান করতে পারি। আমরা মুখবন্ধ খামে নাম দিতে বলেছিলাম। কারও পরিচয় প্রকাশ্যে আসত না।”
[আরও পড়ুন: পরামর্শ মানে না রাজ্য নেতৃত্ব! বঙ্গ বিজেপির সংগঠনে বদল চেয়ে শাহকে নালিশ শুভেন্দুর]
এদিন রাজ্যের তরফেও রিপোর্ট দিয়ে জানানো হয়, তদন্ত দ্রুত এগোচ্ছে। পোস্টার কাণ্ডে দু’টি প্রিন্টার থেকে বিতর্কিত পোস্টার ছাপা হয়েছিল। সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এর পরে বৃহত্তর বেঞ্চের জানায়, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল হাত জোড় করে তাদের সরে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা শোনেননি বলে তিনি জানান। যা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলেও জানান বিচারপতি টি.এস. শিবাগনানম। এদিন মহাভারত প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশের মন্তব্য, “সবার অবস্থা এখন পিতামহ ভীষ্মের মত, সবাই অবিচার দেখেছেন, কিন্তু কিছু করতে পারছেন না।”