প্রীতিকা দত্ত: বেলাগাম সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যু। দেশে দু’সপ্তাহের সংক্রমণের রিপোর্ট কার্ড দেখলে চোখ কপালে উঠবে এমন অবস্থা। এক লক্ষ থেকে একলাফে তিন লক্ষ ভারতীয় করোনা আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন বা করোনা নিয়ন্ত্রণে কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থার দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। সে কথা ভেবে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে শনিবার নতুন নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
নির্দেশিকা বলছে, আক্রান্তদের শুরুতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া যেতে পারে। পরে রোগ আরও জটিল হলে ক্ষেত্রবিশেষে রেমডিসিভির। নাহলে টোসিলিজুমাব। কিন্তু কোনওভাবেই চিকিৎসার কোনও স্তরে রোগীকে অ্যাজিথ্রোমাইসিন দেওয়া যাবে না। আপাতত এই পথেই করোনা চিকিৎসার নির্দেশ বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। নয়া নির্দেশিকায় স্বাস্থ্যমন্ত্রক স্পষ্ট উল্লেখ করেছে, করোনা আক্রান্ত যাঁদের বয়স বেশি এবং অবস্থা স্থিতিশীল নয়, তাঁদেরও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে চিকিৎসককে রোগীর ইসিজি রিপোর্ট দেখা নেওয়া জরুরি। কেন্দ্র ভরসা রাখতে বলছে কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপিতে। এর আগে সার্স এবং ইবোলার চিকিৎসা এই প্লাজমা থেরাপিই অন্ধকারে দিশা দেখিয়েছিল। কিছুদিন আগেও অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া ড্রাগ এইচসিকিউ বা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে বিস্তর তরজা চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অবধি প্রথমে নেতিবাচক বলে পরে মেনে নিয়েছে এইচসিকিউতে কাজ হয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক এদিন জানায়, এইচসিকিউয়ের কার্যকারিতা নিয়ে রিসার্চ হয়েছে বহু। তবে এটা সত্যি যে, মৃত্যুহার কমানো বা করোনায় অন্য কোনও ক্লিনিক্যাল ক্ষেত্রে এইচসিকিউ তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি।
[আরও পড়ুন: করোনায় স্বস্তি দেবে ‘প্রন পজিশন’, চিকিৎসায় সিলমোহর কেন্দ্রের]
আপৎকালীন পরিস্থিতি উপস্থিত হলে যাঁদের অক্সিজেনের দরকার সেক্ষেত্রে রেমডিসিভির ভাল কাজ করতে পারে বলে আশাবাদী কেন্দ্র। তবে যাঁদের কিডনি বা লিভারের সমস্যা রয়েছে, যাঁরা অন্তঃসত্ত্বা বা ১২ বছরের নিচে বাচ্চাদের জন্য রেমডিসিভির নয়। রেমডিসিভির ইঞ্জেকশন দিতে হলে প্রথমদিন ২০০ মিলিগ্রাম পরে পাঁচদিন টানা একশো মিলিগ্রাম করে দিতে হবে। টোসিলিজুমাবের ক্ষেত্রে অবশ্য কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত, রোগীর অবস্থা খুব সঙ্গীন হলে এবং শ্বাসকষ্ট হাতের বাইরে গেলে এই ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে। নয়া নির্দেশিকা নিয়ে ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্ট ডা. আহসান আহমেদ বলেন, “করোনা চিকিৎসা তালিকায় রেমডিসিভিরের নাম উঠে এল। এবং হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ডোজেরও পরিবর্তন হয়েছে। এর আগে আমেরিকায় রেমডিসিভিরের প্রয়োগ হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে রেজাল্ট ভাল। তবে রাজ্যে কী হবে, সেটা দেখার বিষয়।”
কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকায় করোনা উপসর্গ নিয়েও লেখা হয়েছে। আগে জ্বর, গলাব্যথা, সর্দি, কাশির মতো একাধিক উপসর্গকে করোনার লক্ষণ বলে ধরা হত। এবার সেখানে ঘ্রাণশক্তি কমা এবং খিদে কম পাওয়াকেও করোনা উপসর্গের মধ্যে রাখা হয়েছে। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. সুস্মিতা রায়চৌধুরি জানাচ্ছেন, “কলকাতায় রেমডিসিভির মেলা কঠিন। তবে এখনও অবধি এমার্জেন্সি পরিস্থিতিতে টোসিলিজুমাব ব্যবহারে ফল ভাল। রোগী বুঝে এই ওষুধ ব্যবহার করতে পারলে ভাল ফল মিলবে।”
[আরও পড়ুন: চোখের জলেও লুকিয়ে থাকতে পারে করোনার বিষ? জানুন কী বলছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা]
The post মুখের স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারালেই এবার কোভিড টেস্ট, নয়া নির্দেশিকা কেন্দ্রের appeared first on Sangbad Pratidin.