সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘সাত মিনিটের সন্ত্রাস’ নিয়ে বড্ড চিন্তায় রয়েছে নাসা। আসলে চলতি সপ্তাহেই পৃথিবী থেকে সাত মাসব্যাপী মঙ্গলমুখী যাত্রার অবসান ঘটিয়ে গন্তব্যে পৌঁছবে নাসার ‘মার্স রোভার পারসিভিয়ারেন্স’ (Perseverece)। আরও স্পষ্ট করে বললে, লাল গ্রহের মাটিতে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ বৃহস্পতিবার অবতরণ করবে নাসার ‘মার্স রোভার পারসিভিয়ারেন্স’ যা আদপে হল একটি স্পেস ক্যাপসুলের ভিতরে পুরে দেওয়া রোবোটিক অ্যাস্ট্রো-বায়োলজি গবেষণাগার। কিন্তু সেই অবতরণ মোটেও সহজ, স্বাভাবিক, মসৃণ হবে না। ছ’চাকার রোভার মঙ্গলের আকাশ থেকে মাটিতে নামতে সময় নেবে পাক্কা সাত মিনিট। আর অবতরণের আগের এই সাতটা মিনিট অর্থাৎ ৪২০ সেকেন্ড সময়ই হল ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক’।
কারণ এই সাত মিনিটে অনেক অনর্থই ঘটে যেতে পারে, যার জন্য তীরে এসেও ডুবে যেতে পারে তরী। মুখ থুবড়ে পড়তে পারে নাসার স্বপ্নের এই অভিযান। এখন প্রশ্ন, কী কী বিপদ আসতে পারে রোভার পারসিভিয়ারেন্সের সামনে? প্রথমত, লাল গ্রহের ঠিক যে অংশে (জেজেরো ক্রেটার) রোভার নামতে চলেছে, সেখানে বেশ কয়েক কোটি বছর আগে কোনও সুবিশাল আগ্নেয়গিরির অস্তিত্বের জন্য বিশালাকার গর্ত বা ক্রেটার তৈরি হয়েছিল। গোটা এলাকাই পাথুরে, এবড়োখেবড়ো এবং উঁচু উঁচু পাহাড়ে ভরতি। কাজেই এখানে অবতরণ করতে গেলে নিখুঁত দক্ষতা প্রয়োজন। দরকার যথাযথ ‘টাইমিং’ আর সঠিক ও নিরাপদ জায়গা বেছে নেওয়ার বুদ্ধিরও। রোভার পারসিভিয়ারেন্স, নিজের পর্যবেক্ষণে ভর করে, নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কতটা নিখুঁতভাবে করতে পারবে, বিজ্ঞানীরা তা নিয়েই উদ্বিগ্ন। কারণ, কোনওভাবে অযোগ্য স্থানে অবতরণ করতে গেলে পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ক্যাপসুলটি ভেঙেও যেতে পারে। বা কোনও খাঁজে-গর্তে আটকে গিয়েও ব্যর্থতা ডেকে আনতে পারে।
[আরও পড়ুন: পৃথিবীর ওজোন স্তরে ফাটল ধরাতে পারে চিন! অশনি সংকেত গবেষকদের]
লস অ্যাঞ্জেলেসের জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) ‘ডিসেন্ট অ্যান্ড ল্যান্ডিং টিম’-এর প্রধান এআই চেনের কথায়, “সাফল্যের কোনও গ্যারান্টি নেই। কারণ আমরা সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে ভারী আর সবচেয়ে জটিল রোভার অবতরণ করাতে চলেছি। অবতরণ থেকে শুরু আরও একাধিক কাজ রোভারকে নিজে থেকেই করতে হবে। তাই ওই সাত মিনিট খুব জরুরি।”
[আরও পড়ুন: শতবর্ষ পরে ফের অবতীর্ণ ম্যান্ডারিন হাঁস! অসমে তাদের দেখে উচ্ছ্বসিত পরিবেশবিদরা]
আসলে এই যান মঙ্গলের আকাশ থেকে মাটিতে নামার পর পৃথিবীতে একটি রেডিও সিগন্যাল পাঠাবে। সেই সিগন্যাল, মহাকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছবে ১২৭ মিলিয়ন মাইল পথ অতিক্রম করে, ১১ মিনিটে। লস অ্যাঞ্জেলেসের জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীরা সেই সিগন্যাল পাবেন। এই গোটা বিষয়টা সফলভাবে সম্পন্ন হলে তবেই রোভারের অভিযানকে সফল বলা যাবে। ফলে এ কথা স্পষ্ট যে, যদি প্রথম সাত মিনিটে কোনও সমস্যা হয়, তাহলে ধাক্কা খাবে পরবর্তী অনুসারী ধাপগুলিও।