অর্ণব আইচ: কলকাতার তিন জায়গায় অফিস খুলে ভুয়ো কল সেন্টার চালানোর অভিযোগ। এই কল সেন্টার থেকেই কলকাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় বিছানো হয় প্রতারণার জাল। বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কলকাতার প্রাণকেন্দ্রের তিনটি জায়গায় তল্লাশি চালায় সিআইডি। শহরের তিনটি বাণিজ্যিক বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেন সিআইডি আধিকারিকরা।
সিআইডির এক কর্তা জানান, মধ্য কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট এলাকা, বউবাজার এলাকা ও শেক্সপিয়র থানা এলাকার পার্ক স্ট্রিটের উপর তিনটি অফিসে চলে সিআইডির তল্লাশি। মোট ৩০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া উদ্ধার হয় একটি বিলাসবহুল গাড়িও। এছাড়াও অফিসগুলি থেকে প্রচুর ভুয়ো নথিপত্র, নোটবুক, রেজিস্টার খাতা, ডায়েরি, ভাড়া ও লিজের চুক্তিপত্র, বেশ কিছু মোবাইল, সিম কার্ড, ল্যাপটপ উদ্ধার হয়। শুক্রবার এই ভুয়ো কল সেন্টারগুলি থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ২০ জনকে পুরুলিয়ার সদর আদালতে তোলা হয়। তাদের ১৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
[আরও পড়ুন: ‘কেউ কাটমানি নিয়ে কাজ করেন? আমাদের জানান’, মমতার ছবি দিয়ে নেটদুনিয়ায় ঘুরছে ভুয়ো মেসেজ!]
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু প্রতারণার ঘটনা পুলিশের নজরে আসে। এই ব্যাপারে পুরুলিয়ার কেন্দা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। দেখা যায়, বিমার নাম করে শুরু হয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি। বিভিন্ন মানুষের কাছে ফোন যাচ্ছে। ‘কলার’রা নিজেদের দাবি করছে বিভিন্ন বিমা সংস্থার কর্মী বলে। তাঁদের বিভিন্ন আকর্ষণীয় পলিসির কথা বলা হচ্ছে।
ওই সংস্থায় লগ্নি করলে পলিসি অনুযায়ী অল্পদিনের মধ্যে প্রচুর টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আবার কখনও বা ফোন করা হয় ব্যাংকের নাম করে। বলা হয়, প্রায় কোনও শর্ত ছাড়াই দেওয়া হবে ঋণ। এই আকর্ষণীয় অফার দেখে কলকাতা ও জেলার বহু বাসিন্দা লগ্নি করতে শুরু করেন। বিশেষ কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় টাকা। আবার ঋণ দেওয়ার নাম করে আগাম সিকিউরিটি ডিপোজিট অথবা প্রসেসিং ফি চাওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকা নেওয়ার পর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় জালিয়াতরা। এভাবে প্রত্যেক জেলা থেকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হতে শুরু হয়।
পুলিশের ধারণা, এভাবে কোটি টাকার কাছাকাছি জালিয়াতি করেছে অভিযুক্তরা। এই ঘটনায় প্রথমে সিআইডি আধিকারিকরা রাজারহাটের একটি বহুতল আবাসনে হানা দিয়ে এই জালিয়াতি চক্রের মাথা সন্দীপ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেন। তাকে জেরা করে জানা যায় যে, কলকাতার তিনটি বাণিজ্যিক বাড়ির তিনটি অফিসে চলছে এই ভুয়ো কল সেন্টারগুলি। সেখান থেকেই কলাররা ফোন করে টাকা লগ্নি করতে বলছে। সূত্রের খবর, ওই বাণিজ্যিক বাড়ির অন্যান্য অফিসের কর্মীরাও পুলিশকে জানান, তাঁরা জানতেন কল সেন্টার চলছে। কিন্তু সেখান থেকে কী ধরনের কাজ হত, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কেউ। ধৃতদের জেরা করে কলকাতা ও জেলার শহরগুলিতে তৈরি হওয়া অন্যান্য কল সেন্টারেরও সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।