অর্ণব আইচ: মির্জাপুর। কার্পেট ও পিতল শিল্পের জন্য গোটা দেশে পরিচিত। অপরাধের জন্যও। উত্তর প্রদেশের এই এলাকার উপর তৈরি জমজমাট ক্রাইম থ্রিলার সিরিজ ওটিটিতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিল। বিন্ধ্য পর্বত সংলগ্ন সেই অপরাধ সঙ্কুল জায়গায় নৃশংস দুই খুনিকে ধরতে পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতা পুলিশের অসমসাহসী টিম। কখনও খাটো ধুতি, মাথায় পাগড়ি, খৈনি ডলা দেহাতি গ্রামবাসীর ছদ্মবেশে, কখনও পিস্তলের কারবারি, কখনও অন্য কোনও রূপে কাকপক্ষীকে জানান না দিয়ে স্থানীয় পুলিশের নাকের তলা থেকে চুপিসারে পাকড়াও করে নিয়ে এসেছিল দুই দুষ্কৃতিকে। ১৩ দিনের রূদ্ধশ্বাস সেই অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন কলকাতার বড়তলা থানার তৎকালীন ওসি দেবাশিষ দত্ত।
তিন বছর আগে কলকাতা পুলিশের সেই দুর্দমনীয় ঘটনা এবার আসতে চলেছে রূপালি পর্দায়। সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ছবির গল্পকার বর্তমান মানিকতলা থানার ওসি দেবাশিস দত্ত, তৎকালীন বড়তলা থানার ওসি হিসাবে যিনি ছিলেন অসমসাহসী অভিযানের টিম লিডার। ছবির পরিচালক অভিরূপ ঘোষ। ছবির ঘটনাক্রম শুরু বড়তলা থানার অধিনস্ত উত্তর কলকাতার অতি পরিচিত এক যৌনপল্লি। যেখানে বিবাদের জেরে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে দুই ভিনপ্রদেশের যুবকের হাতে খুন হয়েছিল এক যৌনকর্মী। খুনের পরই কলকাতা ছেড়ে পালায় দুই অপরাধী। নিষিদ্ধ পল্লীতে খুন-জখম খুব একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। এমন ঘটনা ঘটেই থাকে। পুলিশ আসে। তদন্ত হয়। অপরাধী ধরা পড়ে বা পড়ে না। আস্তে আস্তে সে কথা মানুষ ভুলেও যায়। স্বাভাবিকভাবেই সবার ধারণা ছিল, এই খুনও হয়তো বিস্মৃতির খাতায় চলে যাবে একদিন। কিন্তু স্থানীয় থানারা বড়বাবু দেবাশিস দত্তের ভাবনা বয়েছিল অন্যখাতে। পণ করেছিলেন, ভিন প্রদেশ থেকে তাঁর এলাকায় এসে এহেন দুঃসাহসের শেষ দেখে ছাড়বেন। থানার বেশ কয়েকজন আধিকারিককে সঙ্গে নেমে পড়লেন তদন্তে। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রথমেই জানা গিয়েছিল, দুই খুনি উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। সম্ভবত সেখানেই পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে তারা। ঠিক হল, খুনিকে পাকড়াও করতে যাওয়া হবে উত্তর প্রদেশে। তবে এখনই সেখানকার পুলিশকে কিছু জানানো হবে না।
স্থানীয় পুলিশের সাহায্য ছাড়াই উত্তরপ্রদেশে গিয়ে ওই কুখ্যাত দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করা য়ে মুখের কথা নয়, তা বুঝতে কোনও শার্লক হোমস হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু দেবাশিসবাবু নির্দিষ্ট অঙ্ক কষে বেছে নিয়েছিলেন সেই দুঃসাহসের পথটাই। প্রথমেই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে দুই পলাতকের হদিশের খোঁজ চললো। প্রায় সাতেরোশো ফোন কল ঘেঁটে জানা গেল, তারা রয়েছে উত্তর প্রদেশের পূর্ব সীমান্তবর্তী কোনও এলাকায়। দেবাশিসবাবুর তত্ত্বাবধানে অভিযান চালাতে তৈরি হল বিশেষ টিম। উত্তরপ্রদেশ পৌঁছে ছদ্মবেশে স্থানীয় পুলিশকে ঘুণাক্ষরে টের পেতে না দিয়ে রীতিমতো সিনেমার কায়দায় ১৩ দিন ধরে তাড়া করে দুই খুনিকে উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হল। এই কাহিনী শুনে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অনেকেই। এবার সবার চোখের সামনে উঠে আসবে সেই 'ট্রু স্টোরি'। রুপোলি পর্দায় ফুটে উঠবে কীভাবে চারজন পুলিশ অফিসার এক অসহায় নারীকে নৃশংস খুন করে তাঁর কাছ থেকে টাকা ও গয়না লুঠপাটের ঘটনার কিনারা করলেন।
সিনেমাটির নাম 'মৃগয়া'। জানা গিয়েছে, পরিচালক অভিরূপ ঘোষ গল্পটি শোনার পরই দেবাশিসবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর তার অল্পদিনের মধ্যেই দেবাশিসবাবুর গল্পের ভিত্তিতে তৈরি হয় স্ক্রিপ্ট। শুরু হয় শুটিংয়ের কাজ। এই সিনেমার তিনটি গান লিখেছেন দেবাশিস দত্ত নিজে। অন্য একটি গান লিখেছেন পুলিশকর্তা মুরলিধর শর্মা, যিনি এখন আইজি (ট্রেনিং)-এর পদে রয়েছেন। তাঁদের লেখা গানে সুর দিয়েছেন রানা মজুমদার। ছবিটিতে চার সফল পুলিশ আধিকারিকের ভূমিকায় রয়েছেন অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, রিজওয়ান রাব্বানি ও অনির্বাণ চক্রবর্তী। এ ছাড়াও যৌনকর্মী চামেলির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী অনন্যা ভট্টাচার্য। এছাড়াও অন্য যৌনকর্মী ছায়ার ভূমিকায় রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা সরকার। বিশেষ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। সিনেমায় গান গেয়েছেন প্রাঞ্জল বিশ্বাস, রূপম ইসলাম, সোমলতা, সুনীতি চৌহান। ছবির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর পুলিশ আধিকারিক দেবাশিস দত্ত নিজেই। টানটান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ ছবিটি আর তিন মাসের মধ্যে কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন হলে রিলিজ করতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।
