shono
Advertisement
Anindya Chattopadhyay

'ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখের মিষ্টির বাক্স আমাদের কাছে খুবই রহস্যে মোড়া একটা বিষয় ছিল'

নববর্ষের পরিকল্পনা নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ডিজিটালে লিখলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
Published By: Manasi NathPosted: 03:34 PM Apr 13, 2025Updated: 05:06 PM Apr 13, 2025

বাঙালির পয়লা বৈশাখ মানেই নস্ট্যালজিয়া। পোশাক থেকে খাবার, আড্ডা থেকে হালখাতা, সবেতেই থাকে বাঙালিয়ানার ছাপ। তবে আজকের বাঙালি কি ততটাই উন্মুখ থাকে নববর্ষ নিয়ে? অতীতের স্মৃতিচারণা এবং আগামী নববর্ষের পরিকল্পনা নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ডিজিটালে লিখলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

Advertisement

পয়লা বৈশাখ বললেই একসঙ্গে অনেক স্মৃতি মনে ভিড় করে আসে। ছোটবেলার পয়লা বৈশাখ একরকম ছিল। তারপর একটু বড় হওয়ার পর একরকম হল। আবার চাকরিজীবন শুরুর পর তা খানিকটা বদলে যায়।আর বর্তমানে সময়ের অভাবে তা একেবারেই অন্যরকম হয়ে গিয়েছে।

ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখের দিনটা আমাদের বাড়িতে উৎসব চলত। তার প্রধান কারণ আমাদের বাড়িতে মন্দির ছিল। পুজোর মতো ব্যাপার চলত।দেওয়ালে মাঙ্গলিক চিহ্ন আঁকা হত। নতুন জামাকাপড় কেনা হত। নতুন বছরের প্রথমদিনে রান্নার ক্ষেত্রেও চমক থাকত। বিশেষ পদ রান্না হত। মা-বাবা এই দিন খুবই ব্যস্ত থাকতেন। তাঁদের পাড়ার প্রচুর দোকানে হালখাতার নিমন্ত্রণ থাকত। আমিও পিছু পিছু তাদের সঙ্গে নিমন্ত্রণরক্ষা করতে চলে যেতাম।আমাদের উৎসাহের প্রধান কারণ সেখানে কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়ানো হত। সেসময় কোল্ড ড্রিঙ্ক বিষয়টা খুবই মহার্ঘ্য ছিল। সব জায়গায় পাওয়া যেত না। একটা মিষ্টির বাক্স দিত, সেটাও আমাদের কাছে খুবই রহস্যে মোড়া একটা বিষয় ছিল। সেই বাক্সতে কী থাকবে কেউ জানত না। অনেক মিষ্টির বাক্স আসত। আমি আর বোন খুঁজে দেখতাম তাতে কী আছে? পয়লা বৈশাখ বলতে আমার তাই প্রচুর মিষ্টি, কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়া আলো ঝলমলে একটা পাড়ার কথাই মনে আসে।

শুনেছি পয়লা বৈশাখ বাংলাদেশে খুব ধুমধাম করে পালিত হত। আমার কখনও দেখার সুযোগ হয়নি। তবে প্রচুর গল্প শুনেছি। পয়লা বৈশাখে বাংলাদেশে বাঙালি খাবার নিয়ে উৎসব চলে। প্রচুর স্ট্রিটফুড বিক্রি হত,মিছিল-প্রভাতফেরি বের হত শুনেছি। আমাদের ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখে নববর্ষ কেন্দ্রিক বিচিত্রানুষ্ঠান হত। বোন নাচে অংশ নিত। আমি সেই অনুষ্ঠান দেখতে যেতাম। আমি স্কাউট করতাম। তার প্রতিষ্ঠা দিবস ১ মে পালিত হত। ওটা আমার কাছে উৎসব ছিল। আর পয়লা বৈশাখের দিন থেকেই আমাদের স্কাউটের প্র্যাক্টিস শুরু হয়ে যেত।

আর একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে। তখন কলেজে পড়ি। আমি আর চন্দ্রিল (ভট্টাচার্য) তখন অল্পবিস্তর লেখালেখি শুরু করেছি। একবন্ধু আমাদের গল্প লেখার পরামর্শ দেয়, সেগুলো বই আকারে প্রকাশ পাবে সেই আশ্বাসও দেয়। শুধু শর্ত ছিল গল্পগুলো হতে হবে দুঃসাহসিক অভিযান গোছের। সেগুলো ছোটদের জন্য লেখা হবে। বিষয়টা আমাদের কাছে দারুন ছিল।কলেজস্ট্রিটের এক প্রকাশনা সংস্থার এই গল্পগুলো প্রকাশের কথা ছিল। সেই প্রথম পয়লা বৈশাখে আমাদের বই প্রকাশ পাবে- একেবারে অন্যরকম ব্যাপার। পয়লা বৈশাখে প্রকাশনা সংস্থার নিমন্ত্রণরক্ষা করতে গেলাম। সেই প্রথম জানলাম, কলেজস্ট্রিট পাড়ায় পয়লা বৈশাখের উৎসব পালনের কথা। কিন্তু নিজেদের বই কিছুতেই দেখতে পাচ্ছিলাম না। শুনলাম ছাপা চলছে। এরপর শুনলাম ফর্মায় কিছু গলদ হয়েছে। অবশেষে আমাদের সেই বই দেখতে পেলাম। তার প্রচ্ছদ দেখে তো আমরা যার পর নাই চমকিত ও হতাশ হলাম। চন্দ্রিলের লেখা ছাপা হলেও আমারটা হয়নি। তাই পয়লা বৈশাখ যতটা আশা নিয়ে গেছিলাম ততটাই আশা হত হয়েছিলাম।

এখনও কলেজস্ট্রিট পাড়ার পয়লা বৈশাখের উৎসব একই রকম রয়েছে। এবছরও একাধিক নিমন্ত্রণ রয়েছে। কিন্তু যাওয়ার সময় পাব কিন জানিনা। কারণ কাজের চাপে গতবছরও বইপাড়ার অনুষ্ঠানে দেরিতে পৌঁছেছিলাম।তাছাড়া বাংলা নববর্ষ গ্রীষ্মের অস্বস্তিকর গরমের জন্য খানিকটা প্রতিকুল । ইংরাজি নববর্ষে ঠান্ডা আরামদায়ক আবহাওয়ার কারণে স্যুটবুটের পরে পার্টি করা যতটা কুল হওয়া যায় , বাংলা নববর্ষ ঠিক তার উল্টো ।

পয়লা বৈশাখ প্রসঙ্গে আরও একটা উৎসবের কথা বলতেই হয়। 'প্রতিদিন''-এর বর্ষবরণের উৎসব। তাদের মূল অফিসে হত। চাকরিজীবন শুরুর পর এই উৎসবে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাই। সেখানে এলাহি খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হত। এই ধরনের উৎসবগুলোই সেজেগুজে যাওয়ার বড় সুযোগ ছিল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখের দিনটা আমাদের বাড়িতে উৎসব চলত।
  • প্রথম পয়লা বৈশাখে আমাদের বই প্রকাশ পাবে- একেবারে অন্যরকম ব্যাপার ছিল।
  • পয়লা বৈশাখ প্রসঙ্গে আরও একটা উৎসবের কথা বলতেই হয়। 'প্রতিদিন''-এর বর্ষবরণের উৎসব।
Advertisement