সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গুয়াহাটির নন্দননগরে দু' কামরার ভাড়া বাড়িই ছিল একসময়ে মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) সরকারি ঠিকানা। আর রবিবার সেখানে শো করতে গিয়েই প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে গোটা কনসার্ট উৎসর্গ করলেন দিলজিৎ দোসাঞ্ঝ (Diljit Dosanjh)। মনমোহনের প্রয়াণে বিনোদুনিয়ার মৌন তারকাদের ভিড়ে 'পাঞ্জাবি পপস্টারের' এই পদক্ষেপকে 'সাহসী' বলে বাহবা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা সুপ্রিয়া শ্রীনাথ-সহ আরও অনেকে।
গত বৃহস্পতিবার পরলোকের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন মনমোহন সিং। দেশের দশ বছরের প্রধানমন্ত্রী। ভারতের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় সংস্কারের কারিগর। মিতভাষী, অজাতশত্রু রাজনীতিবিদ। দেশের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্বের প্রয়াণের পরও আশ্চর্যজনকভাবে নীরব দেশের ক্রীড়ামহল এবং বিনোদন জগৎ। ন্যূনতম শোকবার্তাটুকুও দিয়েও সৌজন্যবোধ প্রকাশের প্রয়োজন মনে করেননি গ্ল্যামারদুনিয়ার ব্যক্তিত্বরা। তবে সেই ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে স্পটলাইট কেড়ে নিলেন দিলজিৎ দোসাঞ্ঝ। ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার গুয়াহাটির সরুসাজাই স্টেডিয়ামে শো করতে গিয়ে মঞ্চে মনমোহন সিংয়ের কবিতা আওড়ালেন। শুধু তাই নয়, প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে উৎসর্গ করেই কনসার্ট করলেন 'পাঞ্জাবি পপস্টার'। স্টেজে উঠেই মাইক হাতে দিলজিৎ বলেন, "আজকের কনসার্টটা প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে উৎসর্গ করলাম। ভীষণ সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন উনি। কারও সম্পর্কে কোনও দিন কটু কথা বলেননি, যেটা রাজনীতির পেশায় ভীষণ বিরল বর্তমানে। সারাজীবন দেশের সেবে করেছেন। তিনিই প্রথম শিখ যিনি ভারতীয় মুদ্রায় তাঁর স্বাক্ষর রাখেন। এটা অনেক বড় প্রাপ্তি আমাদের। তাই আজ আমি আমি সেই মানুষটির কাছে মাথা নত করছি যিনি দেশকে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসতেন এবং গোটা জীবন জীবন কাটিয়েছেন দেশের সেবা করে।"
গুয়াহাটির নন্দননগরে ৩৯৮৯ নম্বর বাড়িটি আজও মনমোহন সিংয়ের স্মৃতি আঁকড়ে। নানা পদে দায়িত্বের সুবাদে বরাবরই দিল্লির বাসিন্দা হলেও অসমের সঙ্গে মনমোহন সিংয়ের বিশেষ যোগ ছিল। সেই রাজ্য থেকেই রাজ্যসভার সাংসদ থেকেছেন টানা ২৮ বছর। আর নন্দননগরের মাত্র সাতশো টাকা ভাড়ার বিনিময়ে যে বাড়িতে মনমোহন সিং থাকতেন, সেই বাড়িতর রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজও তাঁর স্মৃতি জড়িত। সেখানে কনসার্ট করতে গিয়েই দিলজিতের মন্তব্য, "আপনারা কখনও লোকসভার সেশন দেখেছেন? নেতারা নার্সারির বাচ্চাদের মতো লড়াই করে। যদিও ওই বাচ্চারাও এর থেকে ঢের ভালো। যাই হোক, এই বিষয়ে আমি কোনও কথা বলব না! কিন্তু মনমোহন সিং যে কোনওদিন কারও সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেননি, এই স্বভাবটাই ওঁর সকলের থেকে আলাদা। মনমোহনজির মন্তব্য ধার করেই বলব, হাজার জবাবের চেয়ে আমার চুপ থাকা ঢের ভালো।..." সেপ্রসঙ্গ টেনেই যুবপ্রজন্মের উদ্দেশে দিলজিৎ বলেন, "এই জন্যই কারও সম্পর্কে কুকথা না বলে নিজের লক্ষে স্থির থাকা উচিত। কারণ যারা বাজে কথা বলে, তারাও ঈশ্বরের অবতার, হয়তো এভাবেই আমাদের পরীক্ষা নেন তিনি।"
দিলজিৎকে 'বাহবা দিয়ে কং নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাথের মন্তব্য, "ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কতগুলো কাপুরুষ যখন মনমোহনজির প্রয়াণে মৌন, তখন সেই ভিড়ের মধ্যে একা উঠে দাঁড়ানোর জন্য অনেকটা বুকের পাটার দরকার হয়। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে গোটা কনসার্ট উৎসর্গ করলেন দিলজিৎ।" সুপ্রিয়ার মন্তব্যে সায় দিয়েছেন কংগ্রেসে আরও অনেকেই।