বিশেষ সংবাদদাতা: বলিউড কিংবা দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির মতো বাজেট নেই বটে, তবে চলতি পুজোর বক্সঅফিসে বাংলা সিনেমা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এবার তিন-তিনটে পুজো রিলিজ(Durga Puja 2024 Releases) টলিউডের। দেব-সৃজিতের ‘টেক্কা’, আবির-শিবপ্রসাদের ‘বহুরূপী’ এবং মিঠুন-সোহমের ‘শাস্ত্রী’। আর সেই দৌড়েই বেড়ে খেলছে উইন্ডোজ প্রযোজনা সংস্থার ‘বহুরূপী’। পিছিয়ে নেই 'টেক্কা'ও। ৮ তারিখ পঞ্চমীর দিন রিলিজ করা তিন-তিনটে সিনেমার বক্স অফিসে হাল-হকিকত কীরকম?
একাদশী পর্যন্ত যদি রিপোর্ট কার্ড পরখ করে দেখা যায়, তাহলেই বোঝা যাবে। এছাড়াও প্রেক্ষাগৃহের মালিক থেকে ডিস্ট্রিবিউটরদের পাল্লা কোনদিকে ঝুঁকে? 'বহুরূপী' টিমের তরফে শিবপ্রসাদ জানালেন, "সোমবার অফিস খোলার দিন পর্যন্ত এই সিনেমা প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ দেখে ফেলেছেন। শুধু তাই নয়, রাতে হোক বা দিনে সব শো হাইজফুল যাচ্ছে।" শহর কলকাতার উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে জনপ্রিয় তিন-তিনটে প্রেক্ষাগৃহে নিত্যদিন দুটো করে শো থাকছে 'বহুরূপী'র। অন্যদিকে 'টেক্কা'র একটি করে শো। তাতেও হাউসফুল হচ্ছে। মন্দা বাজার থেকে একলাফে বাংলা সিনেমার এমন উত্তরণ দেখে খুশি হল মালিকেরা। বিশেষ করে, একসপ্তাহে বাংলা ছবির সাড়ে পাঁচ কোটির ফিগার ছোঁয়া মন্দা বাজারে চারটিখানি কথা নয়! সেই অঙ্ক ছুঁয়ে পুজোর মরশুমে 'বাংলার ব্লকবাস্টার' সিনেমার খেতাব গেল কার কাছে?
অশোকা সিনেমা হলের মালিক প্রবীর রায় জানালেন, "পুজোর মরশুমের কটা দিনই 'বহুরূপী' হোক বা 'টেক্কা' দুটো সিনেমাই দারুণ চলেছে। একেবারে জোর টক্কর যাকে বলে বক্সঅফিসের ভাষায়। তবে মঙ্গলবার থেকে 'টেক্কা'র পারফরম্যান্স একটু কমেছে। 'বহুরূপী' এখনও স্টেডি। গত আট দিনে দুটোই একশো শতাংশ ব্যবসা দিয়েছে। পুজোর বক্সঅফিসে এটা ভালো দিক।" একই সুর শোনা গেল, নবীনা সিনেমা হলের মালিক নবীন চৌখানির। যিনি বরাবর নিজের প্রেক্ষাগৃহে বাংলা সিনেমাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন। তাই পুজোর মরশুমে 'টেক্কা' এবং 'বহুরূপী'র ব্যবসায় খুশি তিনি। নবীন চৌখানি জানালেন, "আমাদের হলে দুটো সিনেমাই দারুণ পারফর্ম করছে। দর্শকরা হল ভরিয়ে হাউসফুল করে দিচ্ছেন। ছবি ভালো হলে তো চলবেই। দর্শকদের রায়ই শেষ কথা বক্সঅফিসে।"
স্টার থিয়েটার-এর মালিক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় জানালেন, "পুজোর সময়ে আমরা তিনটে সিনেমাই নিয়েছিলাম। 'টেক্কা'র ২টো শো, 'বহুরূপী'র ২টো শো এবং 'শাস্ত্রী'র ১টা শো রাখা হয়েছিল। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, রাত সাড়ে ৯টার সময়ও যেমন 'বহুরূপী' হাউসফুল চলছে, তেমনই সকাল ১১টায় 'টেক্কা' হাউসফুল দিয়েছে। সুতরাং, স্টার-এ স্টার পারফর্মার দুটো সিনেমাই। আনুপাতিকভাবে 'শাস্ত্রী' খানিক কম চলেছে। লক্ষ্মীপুজোর ট্রেন্ডে দেখলাম 'টেক্কা'র চেয়ে 'বহুরূপী'র টিকিট সেলিং বেশি হচ্ছে। হল মালিক হিসেবে বাংলা সিনেমার এমন সাফল্যে আমি দারুণ খুশি।"
এদিকে 'বহুরূপী' ছবির ডিস্ট্রিবিউটর রাজকুমার (বাবলু) দামানি ব্যবসার অঙ্ক নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত। বুধসন্ধ্যায় তিনি জানালেন, "মঙ্গলবার পর্যন্ত অর্থাৎ একসপ্তাহে 'বহুরূপী' ব্যবসা করতে পেরেছে ৫.৪৫ কোটি। এককথায় পুজোয় বাংলা সিনেমার বক্সঅফিস এবার একেবারে ফাটাফাটি। আর এটা উইন্ডোজ-এর সেরা ছবি।" অন্যদিকে দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্স-এর তরফে শেয়ার করা বক্সঅফিস রিপোর্টে দেখা গেল, ৬ দিনে 'টেক্কা' ব্যবসা করতে পেরেছে ২.৭৫ কোটি। অতঃপর সাত দিনের গড় হিসেব ধরলেও এক্ষেত্রে 'বহুরূপী' এগিয়ে। তাঁদের সিনে ডিস্ট্রিবিউটর পঙ্কজ লাডিয়ার মন্তব্য, "'টেক্কা'ও সফলভাবে চলছে।"
ব্লকবাস্টার জয়োচ্ছ্বাসে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানালেন, "দুর্গাপুজোর পর লক্ষ্মীপুজোতেও 'বহুরূপী' ট্রেন্ডিং। তার প্রমাণ বুক মাই শোয়ে টিকিট বুকিংয়ের সংখ্যা। প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টিকিট বিক্রি হচ্ছে। লক্ষ্মীপুজোর দিনও স্টার, অশোকা সব প্রেক্ষাগৃহে হাউসফুল যাচ্ছে। এবং সবথেকে যেটা ভালো লাগছে সেটা হল, মানুষ একবার 'বহুরূপী' দেখে সদলবলে প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমাচ্ছেন রিপিট ওয়াচের জন্য। হল ভিসিট করতে গিয়েও দেখেছি মানুষ আমার বলা সংলার রিপিট করছেন। এগুলোই পরমপ্রাপ্তি।"