বৃষ্টি, ভালোবাসা, নতুন ছবি, বাগান-বিলাস, নিয়ে আড্ডায় জয়া আহসান। মুখোমুখি শম্পালী মৌলিক।
‘ডিয়ার জয়া’ বলে কত চিঠি পেয়েছেন এত দিন ধরে...
- এখনও পাই (হাসি)। তবে হাতে লেখা চিঠি নয়। মোবাইলে আসে, ইমেলও চিঠি। হাতে লেখা চিঠির যে অন্তরঙ্গতা, আন্তরিকতা সে আর কোথায়! চিঠি বড় আপন।
প্রেমপত্রের কথা মনে পড়ে না?
- আমার প্রথম প্রেমপত্রের কথা বলতে পারি। এই প্রথম শেয়ার করছি। আমরা কোচিংয়ে পড়তাম, ক্লাস সেভেন-এইট হবে। আমার সঙ্গেই পড়ত আমার ক্লাসমেট। ও ক্যাডেট কলেজে পড়ত। খুব ভালো ছবি আঁকত। খুব সুন্দর কাগজে নকশা করে অর্ধেক রং করে চিঠি দিয়ে বলেছিল, বাড়িতে গিয়ে দেখো। মাকে দেখিয়েছিলাম যে, কী সুন্দর করে এঁকেছে, লিখেছে। মা-ই প্রথম চিঠিটা পড়ে। সেই বন্ধু লিখেছিল যে, শোনো জয়া। তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো, বাকি অর্ধেকটা সুন্দর রং করে আমাকে ফেরত দেবে। (হাসি)
আপনার আপকামিং ছবি ডিয়ার জয়া নয়, ‘ডিয়ার মা’ আসছে ১৮ জুলাই। এই দুটি শব্দের অনুভূতি কেমন?
- এই ছবি মূলত, মায়ের কাছে লেখা মেয়ের চিঠির স্ক্রিপ্টিং যদি বলি, তখন আমার মাকে লেখা প্রথম চিঠির কথা মনে হয়। সেও খুব ছোটবেলায়। তখন হোমসে পড়ার জন্য দেওয়া হয় আমাকে। ওখানে রিচুয়াল ছিল, মাসে একবার করে অভিভাবকরা দেখতে যেতে পারবেন। তখনই চিঠি লেখা শেখা এবং প্রথম মাকে লেখা। বাবা আর বোনকেও লিখেছি। সে সব মনে পড়ে। চিঠিতেই যেন সব শিল্পচর্চা করতাম (হাসি)।
ছবি ইনস্টাগ্রাম
অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরির সঙ্গে আপনার দ্বিতীয় কাজ ‘ডিয়ার মা’। ছবিটার ‘টেক অ্যাওয়ে’ কী?
- প্রত্যেক ছবির একটা জার্নি থাকে। সেই জার্নিটুকু নিয়ে আমি তার পরের আর্টিস্ট। যে ছবিই করি, সেটা আমার বই পড়ার মতো। যেমন বই পড়া শেষ করার পর আমরা অন্য মানুষ, এক-একটা ফিল্ম থেকে আমরা ঋদ্ধ হই। ‘ডিয়ার মা’ করার সময়, এটা বলব একটা উসকানো অনুভূতি। মায়ের জন্য করা একটি ছবি। মা-সন্তানের সম্পর্ক সর্বজনীন। যা নিয়ে প্রচুর ছবি হয়েছে। এখানে আমি এবং পুরো টিম একটা জার্নির মধ্য দিয়ে গিয়েছি। এই ছবিটা দত্তক নিয়ে। আরও সংবেদনশীল বিষয়টা। অসাধারণ টিম এবং টোনিদার পরিচালনা। উনি খুব সংবেদনশীল। ওঁর রাগ, ভালোবাসা, অভিমান সব কিছু সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু বেশি বোঝা যায়। সেটা যখন আমি কাজ করতে এসেছি, বুঝেছি। এমনিতেও আমি পারিবারিকভাবে ওঁদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। খুব অনেস্টলি এই ছবিটা করেছেন। ‘কড়ক সিং’-এর ক্ষেত্রেও তাই দেখেছি। ‘অন্তহীন’ও তাই। আমার মনে হয়, এই ছবিতেও সেটা দেখতে পাবে।
অনেক সময় দেখেছি মায়ের চরিত্রে কাজ নিয়ে নায়িকাদের মধ্যে দ্বিধা কাজ করে।
- তাই কী! সে তো পুরনো চিন্তা। আমি যদি পঁচিশ বছরের মেয়ের চরিত্র করতে পারি, সেটা তো আমার বয়স নয়। তা হলে কেন মায়ের চরিত্রে করতে পারব না? কী গল্প বা দর্শন আমরা জানান দিতে চাইছি, সেইটা সব চেয়ে বড় কথা। তার জন্য যদি পুরুষ চরিত্র করতে হয়, তাও করব।
এই ছবিতে আপনার সঙ্গে চন্দন রায় সান্যাল, তাঁর সঙ্গে আপনার প্রথম কাজ। এবং ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রয়েছে। প্রথমবার কাজে কতটা সহজ হওয়া যায়?
- আমার কিছুই মনে হয় না। কারণ, এরকম দৃশ্যের জন্য খুব কমফোর্ট জোন তৈরি করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, জানতাম টোনিদা খুব অ্যাসথেটিক্যালি শুট করবে। ফলে আমার চেয়ে অনেক বেশি চিন্তা টোনিদার, আমি একেবারেই চিন্তা করিনি। চন্দন রায় সান্যাল অসম্ভব সুদক্ষ অভিনেতা।
বাগান করা, চাষবাস করা এবং ছবি প্রযোজনা- একদম বিপরীতমুখী কাজ সামলাচ্ছেন। প্রযোজনার জগৎটা বাংলায় অনেকটাই পুরুষ অধ্যুষিত। জীবন কতটা উপভোগ করছেন?
- বাংলাদেশে মেয়েরা প্রযোজনার জায়গা থেকে অনেকটা এগিয়ে আছে। ভালো ভালো প্রযোজক আছেন। আর জীবন উপভোগ করি, কারণ কাজ করে যাওয়াটা আমার কাছে বড় বিষয়। প্রযোজনা করতে এসেছি দায়িত্বের জায়গা থেকে। যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ঠিক করে করতে হবে। আমাকে ঘর মুছতে দিলেও, আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তার সর্বোচ্চটুকু করব। অভিনেতা হিসেবে, প্রযোজনা আরও ভালো করে করতে চাই। আর বাগান করা আমার আনন্দ, থেরাপিউটিক। মনে হয় আমার প্রথম কাজ এখন চাষবাস, দ্বিতীয় অভিনয়। যখন দেখি আমার লাগানো চারাগাছ হাওয়ায় কাঁপে তিরতির করে, কী যে ভালো লাগে। (হাসি)
প্রযোজনা তো শক্ত কাজ। খুব বেশিদিন করছেন তা নয়।
- ঠিকই। আমাকে রেগুলার প্রযোজক বলাও যায় না। আমি লাস্ট ‘জয়া আর শারমিন’ নামে একটা ছবি করলাম, আমি আর ‘অ্যাপল বক্স ফিল্মস’ মিলে। ভীষণ ভালো ছবি। মনে হয়েছিল এই ছবির পাশে তেমন কেউ দাঁড়াবে না। তাই পাশে ছিলাম। পিক কোভিডের সময় শুট করেছিলাম। শারমিন চরিত্রে আমাদের মঞ্চের দাপুটে অভিনেত্রী মহসিনা আখতার। উনি প্রথমবার ছবিতে কাজ করেছেন।
কাছাকাছি সময়ে আপনার আর শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ আসে। শাকিব আপনাদের ইন্ডাস্ট্রির অনেকটা জুড়ে।
- শাকিব আমাদের মেনস্ট্রিম বিজনেসের জায়গাটা টিকিয়ে রেখেছিল। টিকিয়ে রাখার জন্য, অন্যের জন্যও ওকে কাজ করতে হয়েছে। এখন ওর যে বিবর্তন হয়েছে, নিজেকে অন্যভাবে আনছে পর্দায়, সেটা সাধুবাদ দেওয়ার মতো। আমাদের যে বাণিজ্যিক ছবির দর্শক আর নিশ ছবি বা শিল্পমানের ছবির দর্শকের মধ্যে শ্রেণি বিভাজন ছিল। শাকিব দু’ধরনের দর্শকের মধ্যে সাঁকো বেঁধেছেন।
এ ছাড়া আপনার ‘উৎসব’ রয়েছে।
- আমার প্রথম ছবির পরিচালক তানিম নুর এটা করেছেন। এটা ক্রিসমাস ক্যারলের অ্যাডপশন। অনসম্বল কাস্টিং। রমরমিয়ে চলছে ছবিটা দেশে-বিদেশে।
অর্থাৎ মানুষ ভালোবেসেছে।
- আমি মনে করি এখন কনটেন্টই হিরো। হিরো-হিরোইন না। সেটাই হওয়া উচিত, তাহলে ইন্ডাস্ট্রি এগোবে।
‘অর্ধাঙ্গিনী’র প্রথম ভাগ দারুণ সফল হয়েছিল এপারে। দ্বিতীয় ভাগের শুটিং চলছিল...
- আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেছে (হাসি)।
আপনার ছবির সূত্রেই বলি, রক্তের সম্পর্ক বলুন বা ভালোবাসার সম্পর্ক, আজকের দিনে সম্পর্কগুলো বড় জটিল হয়ে গেছে, কী বলবেন? সহজে গভীর বোধের সঙ্গে ভালোবাসার কথা বলা যায়?
- আগে একটা চিঠির জন্য প্রেমিকা কত দিন অপেক্ষা করত। কত দিন অপেক্ষার পর চিঠি আসত। সে চিঠির প্রত্যেক অক্ষরে প্রেম-ভালোবাসা। এই যে অপেক্ষা, অপেক্ষাটাই প্রেম। দুম করে একটা টেক্সট মেসেজ কেউ পাঠাল, আর দেখে নিলাম এতে কী আবেগ হবে! যখনই আমি চাইছি বা আমার প্রেমিক চাইছে তখনই আমাকে পেয়ে যাচ্ছে! কোনও কিছু অর্জন না করলে সেটায় প্রেম থাকে না। চিঠি লেখার দিনে সম্পর্ক-ভালোবাসায়, এ জন্যই মনে হয় প্রেমটা বেশি ছিল। এখন অপেক্ষাই নেই।
জয়া কি ইদানীংকালে প্রেমে পড়েছেন?
- আমি তো সব সময় প্রেমে পড়ি। প্রেমে না থাকলে কি মানুষ বাঁচে! আমরা তো আরও সংবেদনশীল। সকলেরই একটু ভালোবাসা, কেয়ার দরকার। (হাসি)
