সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'হোক কলরব'-এর সংলাপ ঘিরে গত দিন দুয়েক ধরেই সোশাল পাড়ায় চাপানোতর। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তেজনার পারদ আরও উর্ধ্বগামী হয়েছে। পুলিশের উর্দি গায়ে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় যে সংলাপ আওড়েছেন, তা নিয়েই বর্তমানে বিতর্ক তুঙ্গে। টিজারের এক দৃশ্যে আইপিএস অফিসারের ভূমিকায় অভিনেতাকে বলতে শোনা যায়, "নমস্কার, আমি ক্ষুদিরাম চাকী। না, আমি ঝুলি না, ঝোলাই!" আর সেই সংলাপ শুনেই প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন সভ্য দর্শকমহলের একাংশ। বীর বঙ্গমনীষী ক্ষুদিরাম বসুকে অসম্মানের অভিযোগে নেটপাড়ার কাঠগড়ায় রাজ চক্রবর্তী। বিতর্কের পারদ চড়তেই এবার মাঠে নামলেন পরিচালক।
'ড্যামেজ কন্ট্রোলে'র মুখে সংবাদমাধ্যমের কাছে রাজ চক্রবর্তী জানান, "এই ছবির মূল চরিত্রের নাম ক্ষুদিরাম চাকী। তিনি একজন পুলিশ অফিসার। সিনেমায় কোন পরিস্থিতিতে এমন কথা বলেছেন, সেটা সিনেমা না দেখলে বোঝা যাবে না। আগে মানুষ দেখুক। প্রয়োজনে সংলাপ ছেঁটে দেওয়া যাবে। আর বাঙালিরা মনীষীদের সম্মান করতে জানে।" এরপরই রাজের নিশানায় গেরিয়া শিবির! পরিচালক বলেন, "বিজেপি, বিশেষ করে আইটি সেল এটা নিয়ে প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে। এরা ক্ষুদিরাম চাকীর সঙ্গে, ক্ষুদিরাম বসুকে মিলিয়ে দিয়েছে। ক্ষুদিরাম বসু একজন মহান ব্যক্তিত্ব, তাঁর সঙ্গে ক্ষুদিরাম চাকীর কোনও তুলনা নেই।" এখানেই অবশ্য থামেননি রাজ। পরিচালকের সংযোজন, "নরেন্দ্রনাথ দত্তর সঙ্গে যেমন নরেন্দ্র মোদিকে মেলানো যায় না, তেমনই ক্ষুদিরাম চাকীর সঙ্গে ক্ষুদিরাম বসুকে মিলিয়ে দিলে চলবে না। বিজেপি আইটি সেলই এহেন উসকানিমূলক কাজ করছে। টিজার দেখে তো সবটা বোঝা যায় না। এখানে কোনও মহান ব্যক্তিত্বকে, অসম্মান করা হয়নি। বাঙালিরা জ্ঞানত তা করবে না।"
আগামী ২৩ জানুয়ারি বড়পর্দায় আসতে চলেছে রাজ চক্রবর্তীর বহু প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘হোক কলরব’। এগারো বছর আগে ঠিক যে শব্দবন্ধের জেরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্যের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেই স্লোগানকে হাতিয়ার করেই এবার ছাত্র রাজনীতির গল্প বুনেছেন পরিচালক। আর সেই সিনেমার ঝলক দেখেই বিতর্কের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠেছে। কারও বক্তব্য, ‘দেশমাতৃকার জন্য হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি গলায় তুলেছিলেন ক্ষুদিরাম বোস। আর বাংলার সেই বীর সন্তানকে নিয়ে কিনা বাংলা সিনেমাতেই এহেন সংলাপ?’ কারও বা প্রশ্ন, ‘বাঙালি নিজস্ব শিকড়-সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে?’ একাংশ আবার রাজনৈতিক মহলের ‘মৌনতা’ নিয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন! কেউ বা ব্যঙ্গাত্মকভাবে বিঁধে বললেন, ‘এত জাতীয়তাবাদী ডায়লগ আওড়ানো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতিবাদ কোথায়?’ কেউ বা আবার শাশ্বতকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ‘বেঙ্গল ফাইলস’ প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দিলেন, ‘উনি তো আবার না জেনেই সংলাপ আওড়ান!’ বলাই বাহুল্য, পরিচালকের পাশাপাশি এহেন সংলাপ আওড়ে বিতর্কের শিরোনামে নাম লিখিয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ও। এপ্রসঙ্গে তাঁর কী মতামত? প্রশ্ন যেতেই অভিনেতা জানান, "পুরো ছবি না দেখে যাঁরা মন্তব্য করেন, তাঁদের নিয়ে ভাববার সময় নেই আমার।"
