সঞ্জিত ঘোষ, শান্তিপুর: বিজেপির টিকিটে জয়লাভের পর বাড়িছাড়া হতে হয়েছিল দম্পতিকে। স্থানীয় তৃণমূল এবং প্রশাসনিক চাপের কাছে মাথা নত না করায় এবার চাকরি গেল সিভিক ভলান্টিয়ার স্বামীর। এমনই দাবি শান্তিপুরের এক সিভিক ভলান্টিয়ার ও তাঁর পরিবারের।
ঘটনা নদিয়ার শান্তিপুর নৃসিংহপুর এলাকার। সেখানে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যা সুপর্ণা বর্মন। দু’বছর আগে পাশের পাড়ার সিভিক ভলান্টিয়ার কার্তিক হালদারের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। এবছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুপর্ণা পঞ্চায়েত সমিতিতে জয়ী হন। অভিযোগ, এরপরই স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে উধাও হয়ে যান সুপর্ণা। তাঁর দাবি, শান্তিপুর থানার পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় তৃণমূল এবং বহিরাগত তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁর বাপের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়িতে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করেন তৃণমূলে যোগদানের জন্য। এরপর বোর্ড গঠনে অংশ নেওয়ার পর তিনি ভেবেছিলেন হয়তো কিছুটা স্বস্তি মিলবে। কিন্তু রবিবার রাতে থানা থেকে তাঁর স্বামীর সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি থেকে অব্যাহতি পত্র পেয়ে, ঘুম উড়েছে পরিবারের।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় স্কুলের সামনে থেকে পড়ুয়াকে ‘অপহরণ’! বাড়ছে রহস্য]
পেটের ভাত কেড়ে নেওয়ায় মুখ খুলেছেন কার্তিক হালদারও। তিনি বলেন, এখন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ডিউটিতে অনিয়মিত যোগদানের। কিন্তু বিগত ১০ বছর ধরে চাকরিতে কোনও ছুটি পর্যন্ত নেননি তিনি। একদিকে পুলিশের চাপ অন্যদিকে তৃণমূলের। তাই জয়ের পর থেকে একমাস প্রাণভয়ে ডিউটিতে যাওয়া হয়নি তাঁর। এ বিষয়ে পুনরায় আবেদন করা সত্ত্বেও সদুত্তর মেলেনি শান্তিপুর থানা থেকে। পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় যে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে দাদার মৃত্যু। বৃদ্ধা মা-সহ গোটা পরিবারের দায়িত্ব তাঁর উপর। কীভাবে সংসার চলবে, ভেবে পাচ্ছেন না।
স্বামীর চাকরি হারানো নিয়ে সুপর্ণা বর্মা বলেন, “সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করার জন্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমার ভোট প্রচারে একদিনও স্বামীকে পাইনি। সম্প্রতি তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় এক পুলিশের নাম উঠেছিল শান্তিপুরেই, সেক্ষেত্রে কোনও অন্যায় ছিল না। সম্প্রতি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপে শান্তিপুর থানার ওসি, তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আরজি জানিয়েছিলেন, তাতেও কোনও অপরাধ হয়নি। শুধুমাত্র আমার জয়ের কারণে, তৃণমূলের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনেরও গাত্রদাহ হয়েছিল। অন্যত্র পালিয়ে না গেলে আমাদের প্রাণে মেরে ফেলতে পারত।”
গোটা ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। আসলে নদিয়ায় শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতিই একমাত্র বিজেপির দখলে। তা ছিনিয়ে নিতেই এসব করছে শাসক দল বলে অভিযোগ। সিভিক ভলান্টিয়ারকে অপসারণের ঘটনায় আইনের দ্বারস্থ হবে বিজেপি নেতৃত্ব বলেই জানানো হয়েছে। তৃণমূল অবশ্য সাফ জানিয়েছে, সিভিক ভলান্টিয়ারের অপসারণ প্রশাসনিক বিষয়, এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।