শুভঙ্কর বসু: রাজ্য জয়েন্টে (WBJEE) র্যাংক ১১৬০। অথচ সিবিএসই দ্বাদশে সব বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর শূন্য! এহেন ‘অবিশ্বাস্য’ কাণ্ডে আঠারো বছরের দেবজিৎ সাহার ভবিষ্যতের উপর ঝুলে গিয়েছে মস্ত প্রশ্নচিহ্ন। বারো ক্লাসের পরীক্ষায় ‘ফেল’ করার দরুণ এত ভাল Rank করেও জয়েন্টের কাউন্সেলিংয়ে বসার সুযোগ নেই। প্রতিকার চেয়ে রায়গঞ্জের বাসিন্দা দেবজিৎ কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta HC) দ্বারস্থ হয়। এক কিশোরের কেরিয়ারের প্রশ্ন জড়িত বুঝে তড়িঘড়ি হস্তক্ষেপ করল আদালত। বিচারপতির নির্দেশ, দেবজিৎকে প্রথম কাউন্সেলিংয়ে বসার সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি দ্রুত খতিয়ে দেখতে হবে বারো ক্লাসের মূল্যায়ন। ‘জয়েন্টে যে এত ভাল র্যাংক করেছে, বারো ক্লাসের পরীক্ষার তার এমন মূল্যায়ন সত্যিই বিশ্বাস করা যায় না’, এমনই পর্যবেক্ষণ হাই কোর্টের।
মাধ্যমিকে আইসিএসই (ICSE) বোর্ড থেকে ৯৩.৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছিল দেবজিৎ। এরপর বারো ক্লাসে সিবিএসসি (CBSE) বোর্ডের অধীনে রায়গঞ্জ (Raigunj) বেথানি মিশন স্কুলে ভরতি হয় সে। ভরতি হওয়ার কিছুদিন পর থেকে অতিমারী পরিস্থিতির জেরে পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্যে যে এত বড় বিপত্তি অপেক্ষা করছিল, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বছর আঠারোর এই কিশোর। গত এপ্রিলে যখন প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা শুরু হয়, সেসময় দেবজিৎ বাদে তার পরিবারের সকলে কোভিড (COVID-19) আক্রান্ত। যার জেরে দু’টি বিষয়ে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দেওয়ার পর বাকি পরীক্ষাগুলি সে দিতে পারেনি। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ পরে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। সেইমতো অন্য তারিখে সে পরীক্ষায় বসে। কিন্তু বিপদের শুরু সেখান থেকে।
[আরও পড়ুন: Independence Day 2021: দুয়ারে রেশন থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ট্যাবলোয় সেজে উঠছে Red Road]
বারো ক্লাসের মূল্যায়নপত্র হাতে পেয়ে তো দেবজিতের চক্ষুচড়কগাছ। দেখা যায়, যে পরীক্ষাগুলি সে পরে দিয়েছিল, তার সবকটিতে শূন্য পেয়েছে! এদিকে যেদিন সে বারো ক্লাসের রেজাল্ট হাতে পায়, তার পরেরদিনই ছিল রাজ্য জয়েন্টের রেজাল্টের তারিখ। দেখা যায়, জয়েন্টে সে রীতিমতো ভাল Rank করেছে। এবার সমস্যা হল, বারো ক্লাসের যা রেজাল্ট তাতে জয়েন্টে ভাল Rank হলেও সে কাউন্সেলিংয়ে বসার সুযোগ পাবে না। দেবজিতের বাবা দেবাশিসবাবু তড়িঘড়ি স্কুল ও সিবিএসই বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাতেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। এরপর বাধ্য হয়ে তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
[আরও পড়ুন: Fake Officer Arrest: গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরিতে চাকরির নামে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ভুয়ো আধিকারিক]
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে দেবজিতের আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য বিষয়টি উত্থাপন করলে নড়েচড়ে বসেন বিচারপতি। সিবিএসসি-র আইনজীবীকে তড়িঘড়ি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন তিনি। পরে সিবিএসসি পক্ষের আইনজীবী ইউ এস মেনন জানান, স্কুলের তরফে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার নম্বর ভুল যাওয়ায় মূল্যায়নপত্র তৈরিতে এই বিপত্তি। শীঘ্রই তাকে নতুন মূল্যায়নপত্র দেওয়া হবে। তারপর দেবজিৎকে আগামী ১৬ তারিখ প্রথম কাউন্সেলিংয়ে বসার সুযোগ দেওয়া হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।