সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পথে নেমে আন্দোলনই তাঁর রাজনীতির পথ ছিল, আছে, থাকবেও সম্ভবত। তাই তো বিরোধী নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠার পরও তাঁর শক্তিশালী হাতিয়ার যে সেই রাস্তার রাজনীতিই, তা বোঝা গিয়েছিল ধরনা ঘোষণার দিনই। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে ২৯ ও ৩০ মার্চ দু’দিন ধরে আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসবেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই ধরনার আগে মঙ্গলবার তিনি গেলেন সিঙ্গুরে (Singur), ‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পের সূচনায়। একসময়ে যে পথে ধরে তিনি উঠে এসেছিলেন বাংলার ক্ষমতার মসনদে, তা নিয়ে আলাদা আবেগ তো থাকবেই। তাই এদিন সিঙ্গুর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলে উঠলেন, ”আমি আজ এলাম এখানে, ধরনার আগে একবার সিঙ্গুরের মাটি ছুঁয়ে গেলাম।” আর এই কথাতেই যেন মিলেমিশে এক হয়ে গেল সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন আর কলকাতায় বসে দিল্লির বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথ।
পথই বটে। যে পথ নিয়ে যায় উন্নতির দিকে, মসৃণতার দিকে। আজ সিঙ্গুরে উদ্বোধন হল আমজনতার হাঁটার পথ তৈরির কাজ। রাজ্যজুড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে। ৪ হাজার কোটি টাকা দিয়ে গোটা কাজটাই করবে রাজ্য সরকার। তার সুফল পাবে ২২ জেলা। পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayet Election) আগে সরকারের এই প্রকল্প নিয়ে কম খোঁচা দেননি বিরোধীরা। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, কোনও উন্নয়নমূলক কাজের সুফল ভোগ করেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক সমর্থন নির্বিশেষে। আর মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যবাসীর উন্নতির জন্যই এই কাজের সূচনা করে দিলেন নিজের হাতে। রতনপুর এলাকায় তিনি ইটের উপর বালি-সিমেন্ট লেপে ‘রাস্তা’ দেখালেন।
[আরও পড়ুন: ‘হোলটাইমার ২২ লাখি গাড়ি চড়েন, মুখ দেখাবেন কী করে?’, তথ্য দিয়ে শতরূপকে খোঁচা কুণালের]
আর এক পথের কথাও বললেন তিনি এদিন। সে পথ অবশ্য মসৃণ নয় মোটেও। আন্দোলনের পথ। যে রক্তাক্ত রাস্তা দিয়ে এসে ক্ষমতার কুর্সিতে বসেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তা ছেড়ে আসেননি মোটেই। বরং বারবার পিছনে ফিরে দেখতে চান। সিঙ্গুরে ‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’ উদ্বোধনের মঞ্চেও সেই স্মৃতি তুলে ধরলেন তিনি। বললেন, ”আমরা এখানে ধরনায় বসেছিলাম মনে আছে। জমি রক্ষার দাবিতে।সেটা রমজান মাস ছিল। আশেপাশের গ্রাম থেকে সকলে আলু, পটল আনতেন। রাতে রান্না হতো। সবাই মিলে খেতাম। একদিন রাতে আমরা শুয়েছিলাম। ভাগ্যিস ঘুমোইনি, জেগেই ছিলাম। কলকাতার দিক থেকে একটা বড় লরি আসছিল সজোরে। প্রায় ১০০ জন লোককে চাপা দিয়েই দিত। আমাদের ছেলেরা হইহই করে লরিটা থামায়। পরিকল্পনা তো কম করা হয়নি সিপিএমের আমলে।” অর্থাৎ এর মধ্যে কোনও ষড়যন্ত্র ছিল বলেই ইঙ্গিত তাঁর।
[আরও পড়ুন: ‘GST-কে সমর্থন ভুল হয়েছিল’, সিঙ্গুরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ‘স্বীকারোক্তি’ মমতার]
আন্দোলনের সেই পন্থা এবং স্মৃতি সম্বল করেই ফের মুখ্যমন্ত্রী বসছেন ধরনায়। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাঁর দু’দিনের এই কর্মসূচি কোন পথ দেখায়, সেদিকে এখন নজর সকলের।