সৌরভ মাজি, বর্ধমান: কয়লার কালো কারবারে তাঁর নাম ছিল প্রথম সারিতে। নাটকীয় জীবন যাত্রা। সিপিএমের হাত ধরে উত্থান। গত ভোটে বিজেপির হয়ে জান লড়িয়ে দেওয়া। সেই একদা কয়লা মাফিয়া, বর্তমানে নানা ব্যবসার মালিক রাজেশ ওরফে রাজু ঝার জীবনটাও শেষ হল একেবারে হিন্দি সিনেমার ক্লাইম্যাক্সের মতো। যে জেলায় তাঁর দাপটে বাঘে গরুতে একসঙ্গে জল খেত, সেই বর্ধমানের শক্তিগড় ল্যাংচা হাবের সামনে প্রকাশ্যে গুলিতে তাঁকে খুন করে কলকাতার দিকে গাড়ি ছুটিয়ে পালিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা।
শনিবার সন্ধ্যার কিছু পরে গম গম করছিল শক্তিগড়ের ল্যাংচা হাব। সেখানে একটি বিখ্যাত দোকানের সামনে আচমকা একটা গাড়ি থেকে কয়েকজন নেমে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা ফরচুনার গাড়ির সামনে আসে। কার্যত ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ থেকে পর ছয় থেকে সাতটা গুলির শব্দ। চালকের পাশের সিটে লুটিয়ে পড়েন রাজু। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। শক্তিগড় থানার পুলিশ এসে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি ও তাঁর সঙ্গীদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি উইং অনাময় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে রাজুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তবে তাঁর সঙ্গীদের উপর হামলা না হওয়ায় স্পষ্ট, লক্ষ্য ছিলেন শুধু রাজুই। কম করে সাতটি গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে রাজুকে। শুধু তাই নয়, এই খুন পূর্ব পরিকল্পিত ও পরিচিতদের কাজ। কারণ, ওই সময় দুর্গাপুরের বাসিন্দা রাজু শক্তিগড়ে আসবেন তা সহজে কারও জানার কথা নয়।
[আরও পড়ুন: জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিদের হেনস্তার জের, অপসারিত তিলজলা থানার ওসি]
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুর্গাপুরের দিক থেকে গাড়ি নিয়ে আসছিলেন রাজেশ ঝাঁ। চালক ছাড়াও আরও দু’জন ছিলেন গাড়িতে। শক্তিগড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে খাওয়া দাওয়া করছিলেন তাঁরা। চালক ঝালমুড়ি খাচ্ছিলেন। রাজেশবাবু গাড়ির সামনের সিটে বসেছিলেন। পিছনের সিটেও একজন বসেছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নীল রঙের একটি চারচাকা গাড়ি এসে থামে। কয়েকজন নেমে এসে পর পর গুলি চালায়। রাজু গাড়িতেই লুটিয়ে পড়েন। পিছনের সিটে থাকা রাজুর সঙ্গী ভয়ে শুয়ে পড়েছিলেন। তাঁর আঘাত লাগেনি। এরপর দুষ্কৃতীরা কলকাতার দিকে গাড়ি ছুটিয়ে পালায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ সিংহরায়, ডিএসপি রাকেশকুমার চৌধুরী ছুটে আসেন। ঘটনাস্থল থেকে রাজুর গাড়ি ও সঙ্গীদের অনাময় হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে কাচের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্য আতঙ্কও ছড়িয়েছে। ভর সন্ধ্যায় এভাবে গুলিবর্ষণে চাঞ্চল্য এলাকায়।