shono
Advertisement
Buddhadeb Bhattacharya

মেনুতে মৌরলা-ইলিশ, কুমড়ো ফুলের বড়া! 'খাদ্যরসিক' বুদ্ধবাবুকে স্মরণ পুরুলিয়ার পাচকের

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিবার ৫০০১ হাজার টাকা ছাড়াও টিপস হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন পিতলের কুলো।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 10:01 PM Aug 08, 2024Updated: 03:32 PM Aug 09, 2024

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: তিনি বরাবরই স্বল্পাহারী। কিন্তু খাদ্যরসিক। দলের বা প্রশাসনিক কাজে যখনই কলকাতার বাইরে যেতেন, জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করতেন। তাঁর সবচেয়ে পছন্দের খাবার ছিল মৌরলা মাছ! জেলা সফরে গেলে মৌরলা মাছের কোন পদ খাবেন, তা আগে থেকেই জানিয়ে দিতেন। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya)। বৃহস্পতিবার তাঁর প্রয়াণে সেই খাদ্যরসিক বুদ্ধবাবুকেই মনে করলেন পুরুলিয়ার পাচক কালীপদ মাঝি।

Advertisement

পুরুলিয়া সার্কিট হাউসের কেয়ারটেকার কাম কুক কালীপদ মাজি। নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসনিক জেলা সফরে ন্যজারাথ ডেপুটি কালেক্টরের (এনডিসি)-র কাছে সেই বার্তা আসতো। আর এই মৌরলা মাছের চচ্চড়ি খাইয়ে ওই প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মন জিতে নিয়েছিলেন পুরুলিয়া (Purulia) সার্কিট হাউসের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পাচক কালীপদ মাঝি। তাঁর কাছে প্রতিবার ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকা ছাড়াও টিপস পেয়েছিলেন পিতলের কুলো। আজ সেই কুলো হাতেই খাদ্য রসিক, রাশভারী প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতিতে ডুব দিলেন পুরুলিয়া সার্কিট হাউসের ওই অবসরপ্রাপ্ত কেয়ারটেকার কাম কুক (Cook)। তিনি আজ নেই। কিন্তু কালীপদর চোখের সামনে ভাসছে সেই সব সোনালী দিনের সুখস্মৃতি।

[আরও পড়ুন: কেমন কাটত সকাল-রাত? পছন্দের খাবার কী? বুদ্ধদেবের ‘দিনলিপি’ শোনালেন সর্বক্ষণের সেবক]

পুরুলিয়া ২ নম্বর ব্লকের বাইকাটা গ্রামের বাসিন্দা কালীপদ মাঝি। মাস দু'য়েক হল তিনি গ্ৰুপ ডি (group D) পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। ১৯৯৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত টানা ২২ বছর কালীপদবাবু পুরুলিয়া সার্কিট হাউসের কেয়ারটেকার কাম কুকের দায়িত্ব সামলেছেন। তার পর তাঁকে ঝালদা মহকুমা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। মাস দুয়েক হলো সেখান থেকেই তিনি অবসর নেন। ২০০০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময়ে প্রায় ৫-৬ বার প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে খাওয়ানোর সুযোগ হয়েছিল ষাটোর্ধ্ব কালীপদ বাবুর। আজ সেই স্মৃতিচারণায় তিনি। তাঁর কথায়, "পুরুলিয়া সার্কিট হাউসে ওঁকে ৫-৬ বার খাওয়ানোর সুযোগ হয়েছিল। উনি মৌরলা মাছের চচ্চড়ি খেতে সব থেকে ভালোবাসতেন। পিঁয়াজকলি দিয়ে রান্না করে দিতাম। এছাড়া কুমড়ো ফুলের বড়াও তাঁর প্ৰিয় ছিল। ভাত, রুটি কম খেতেন। কিন্তু তরকারি, মাছের নানান পদ চেখে দেখতেন। মৌরলা মাছের কোন পদ খাবেন তা আগে থেকে জানিয়ে দিতেন তিনি। এনডিসির কাছ থেকে আমি সেই বার্তা পেয়ে যেতাম।"

[আরও পড়ুন: ‘বিতর্কিত’ বুদ্ধ থেকে ‘ভদ্রলোক’ মুখ্যমন্ত্রী, অমলিনই রয়ে গেল সেই সাদা ধুতি]

নিজের হাতে শহর পুরুলিয়ার বড় হাট থেকে ওই মাছ কিনে আনতেন কালীপদ। এমনকি সাহেব বাঁধ থেকেও সেই মাছ ধরতেন। বুদ্ধবাবু পুরুলিয়ায় পা রাখলে ওল্ড সার্কিট হাউসের হেঁশেল যেন অন্যভাবে সেজে উঠত। নিজের হাতে বাজার করা থেকে রান্না। সবকিছু সামাল দিতে হতো কালীপদবাবুকেই। মৌরলা চচ্চড়ি আর কুমড়ো ফুলের বড়া দিয়েই যে লাঞ্চের মেনু শেষ হতো, তা নয়। হতো সোনা মুগের ডাল, বড় ইলিশের (Hilsa)ভাপা, বাটা সরষে। কখনও আবার বড় রুই মাছের ঝাল। সেই সঙ্গে মটন কষা, টক দই, রসগোল্লা থাকত। কালীপদবাবুর কথায়, "দুপুরে পাতে টক দই দিতেই হতো। বারে বারে লিকার চা (Liquor Tea) খেতেন। বেলের শরবত করে দিতাম। মুসাম্বির জুস করতাম। রান্না ভালো হলে কত যে খুশি হতেন। বলে বোঝাতে পারব না। ডিএম-দের বারবার বলতেন। মৌরলা মাছের চচ্চড়ি খেয়ে খুশি হয়ে আমাকে পিতলের কুলো দিয়েছিলেন। সেই কুলো আজও যত্ন করে রেখে দিয়েছি।"

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • স্বল্পাহারী অথচ খাদ্যরসিক ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
  • খেতে ভালোবাসতেন মৌরলার চচ্চড়ি, ইলিশ ভাপা, কুমড়ো ফুলের বড়া।
  • স্মৃতিচারণায় পুরুলিয়া সার্কিট হাউসের পাচক কালীপদ মাঝি।
Advertisement