বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দেখানো পথেই কেরল সিপিএম। কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যবিরোধী আচরণ ও বঞ্চনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে ধরনায় বসবে মালয়ালি রাজ্যের এই বাম দল। নেতৃত্বে কেরলের (Kerala) মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। পাশে পেতে সমস্ত অবিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি শাসিত রাজ্যের বিরোধী দলনেতাদের ধরনায় যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছেন বলে দাবি কমরেডকুলের নেতাদের। একই দাবিতে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা দিল্লিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ধরনায় বসলে চিল-চিৎকার জুড়ে দেয় বঙ্গ সিপিএম (CPM) ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। এক্ষেত্রে কেন তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন, সেই প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল।
দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের সঙ্গে কেরলের বাম সরকারের দ্বন্দ্ব চলছে। বারবারই রাজ্যপালের আচরণ নিয়ে মুখ খুলেছেন কমরেডকুলের নেতারা। কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে রাজ্যপাল সরকার বিরোধী কাজ করছেন বলে অভিযোগ পিনারাই বিজয়নদের (Pinarai Vijayan)। এবার সরাসরি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজধানীর মাটিতে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন বিজয়নরা। এলডিএফ সরকারের শিল্পমন্ত্রী পি রাজীবের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে ঘুরপথে অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ করছে কেন্দ্র। একই অবস্থান মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের ক্ষেত্রেও। আর কেরল থেকে জিএসটি বাবদ যে অর্থ আদায় করেছে মোদি সরকার, তার মাত্র ১ শতাংশ ফেরত দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: দাবানলে চিলিতে মৃত শতাধিক, দেশজুড়ে জারি জরুরি অবস্থা]
তাঁর অভিযোগ, যৌথ প্রকল্পে গত অর্থবর্ষে কেরলের জন্য ৩০ হাজার কোটি বরাদ্দ করলেও চলতি বছরে তা কমিয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করেছে। যেখানে রাজ্য সরকার নিজেই প্রতি বাড়ি বাবদ ৫ লক্ষ টাকা করে দেয়। কেরলের ক্ষেত্রে প্রতিটা প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই অর্থ উত্তরপ্রদেশ-সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যের উন্নয়নে বরাদ্দ করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছ থেকে বিজয়ন সরকারের কয়েকশো কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। বারবার সরকারের তরফে চিঠি দিয়ে বা দপ্তরের মন্ত্রীরা দিল্লিতে এসে দরবার করলেও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। এছাড়াও বিভিন্ন অজুহাতে রাজ্য সরকারের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে।
তাই ৮ ফেব্রুয়ারি পাওনা আদায়ের দাবিতে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধরনায় বসবে কেরল সিপিএম। যেভাবে যন্তর মন্তরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সব মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কদের ধরনায় বসতে নির্দেশ দেন, ঠিক সেই পথেই হাঁটার সিদ্ধান্ত নিলেন কেরলের কমরেডরা। দলের সব সাংসদ, মন্ত্রী ও বিধায়কদের ধরনায় যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা একই দাবিতে সোচ্চার হলে সমালোচনায় সরব হন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। যদিও কেরলের ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বঙ্গ সিপিএম নেতৃত্ব। বঙ্গ সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের বিমাতৃসুলভ আচরণের সমালোচনা করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের তরফে কটাক্ষ করে বলা হয়, মমতা ও অভিষেকরা কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা ও ইডি, সিবিআইয়ের অতি সক্রিয়তা নিয়ে সরব হলেই রে রে করে ওঠেন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা। কার্যত বিজেপির সুর শোনা যায় তাঁদের মুখে। আর কেরলে বাম সরকার একই অভিযোগে ধরনায় বসলে মুখ থেকে একটা শব্দ বেরোয় না তাঁদের মুখ থেকে।