সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মধুর প্রতিশোধ। হ্যাঁ, বদলা ছাড়া আর কীই বা বলা যেতে পারে। ২০০৩ সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দলে থাকাকালীন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিরে এসে তরি ডুবেছিল। দেশের জার্সি গায়ে যে স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছিল, এদিন কোচ হয়ে সে স্বপ্নপূরণ হল। গত দু’বছর ধরে দলটার পিছনে আদাজল খেয়ে পড়েছিলেন। ছেলেদের কীসে ভাল হবে, কে কোন দিকে বেশি প্রতিভাবান সব খুঁটিনাটিতে নজর রেখেছেন। সেই পরিশ্রমের ফল পেলেন আজ। আর তাই বিশ্বজয়ী হওয়ার সমস্ত কৃতিত্ব শিষ্য দিচ্ছেন গুরুকেই। কিন্তু তিনি যে রাহুল দ্রাবিড়। একা কৃতিত্ব নেওয়ার মানসিকতা একেবারেই নেই তাঁর। ছেলেদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সকেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দল। তাঁর মুখে বারবার একথাই শোনা গেল। ‘চক দে ইন্ডিয়া’ ছবির কবীর খানকেই মনে করিয়ে দিলেন দ্রাবিড়। তাঁর শান্ত চেহারার আড়ালে লুকিয়ে রইল অনেকখানি স্বস্তি। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ক্রিকেটার ও তাঁদের পরিবারের ছবিটা ঠিক কতটা পালটে গিয়েছে।
রাহুল দ্রাবিড়: শান্ত স্বভাবের দ্রাবিড়ও আজ ছেলেদের সঙ্গে জয়ের সেলিব্রেশনে মেতেছেন। ড্রেসিংরুমে কাপ নিয়ে গোটা দলের সঙ্গে ছবি তুললেন। বলছিলেন, “ছেলেদের জন্য আজ সত্যিই গর্ব হচ্ছে। আমাদের সাপোর্টিং স্টাফও দুর্দান্ত। গত ১৪ মাস ওরা অনেক পরিশ্রম করেছি। তাই যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে। এর চেয়ে আনন্দের মুহূর্ত আর কিছু হতেই পারে না। এই মধুর স্মৃতি দীর্ঘদিন ওদের মুখে হাসি ফোটাবে। আশা করি, আগামী দিনে সেলিব্রেট করার মতো আরও ইতিহাস গড়বে ওরা।”
ঈশান পোরেল: ‘আচ্ছা দাদা, ঈশানের বাড়িটা কোথায়’? চন্দননগরে আপাতত এই প্রশ্নটাই যেন সবথেকে বেশি চলছে। স্টেশনে নেমে জিজ্ঞাসা করলে যে কেউ দেখিয়ে দেবেন তারকা বঙ্গ পেসারের বাড়িটা। তারকাই বটে। ঈশান তো এখন বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। ঈশানের লম্বা কাটআউট, বড় ফ্লেক্স, পোস্টারে ঢেকে গিয়েছে সব জায়গা। পাড়ার ক্লাবে সকলের সঙ্গে ম্যাচ দেখলেন বাবা। ছেলের পারফরম্যান্স কেমন লাগল? ঈশানের বাবা বলছিলেন, “ওর একটা চোট ছিল। আজকেও তো সেটা সমস্যা করল। কিন্তু যে ৭ ওভার বল করেছে, এক কথায় দুর্দান্ত। আর আমার মতে ওর সেকেন্ড স্পেলটা বেশি ভাল হয়েছিল। হতে পারে প্রথম স্পেলে ও উইকেট পেয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে ওর টাইট বোলিং দলকে সাহায্য করেছে।” দুপুর দেড়টা। ভারত জিততেই বাঁধন ছাড়া উচ্ছ্বাসে ভেসে গেল সবাই। খেলায় মাতলেন চন্দ্রনাথ বাবু। গেরুয়া আর সবুজ আবিরে তার চোখ মুখ মাথা ভর্তি।
[অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চতুর্থবার যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত]
শুভমান গিল: আইপিএল নিলামে কেকেআর এক কোটি আশি লক্ষ টাকায় লুফে নিয়েছে বিশ্বকাপের ম্যান অফ দ্য সিরিজকে। ইতিমধ্যেই যাঁকে যুবরাজ সিংয়ের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছে ক্রিকেটমহল। ফাইনাল শেষে শুভমানের পাড়ায় যেন উতসব শুরু হয়ে গিয়েছে। আবেগে ভাসছেন বাবা লক্ষ্মীন্দর সিং গিল। বলছেন, “শুভি নিজের কথা রেখেছে। নিউজিল্যান্ড উড়ে যাওয়ার আগে বলেছিল কাপ হাতে ভারতে ফিরবে। গত দু’বছরের পরিশ্রমের ফল পেয়েছে ওরা। তবে সব কৃতিত্ব কোচ দ্রাবিড়েরই। আশা করি, এভাবেই খেলে যাবে। আর বিরাট কোহলির দলে খেলার স্বপ্নপূরণ হবে।”
শিবম মাবি: নয়ডার ঘরের ছেলে সুদূর নিউজিল্যান্ডে। কিন্তু তাঁর পাড়ার পরিবেশ দেখে মনে হবে না ছেলে দূরে রয়েছেন। দেশের মুখ উজ্জ্বল করা ক্রিকেটারের জয় সেলিব্রেট করতে ঢাক-ঢোল ও জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তাঁর প্রতিবেশীরা। সঙ্গে পুজো-পাঠও করা হয়।
মনজ্যোত কালরা: যুব বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে শুধু ম্যাচ সেরাই হননি, একই সঙ্গে ঢুকে পড়েছেন ক্রিকেটারদের এলিট গ্রুপে। উন্মুক্ত চাঁদের পর দ্বিতীয় ভারতীয় এবং বিশ্বের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে শতরানের নজির গড়লেন মনজ্যোত। ম্যাচ সেরা হওয়ার পর বলছিলেন, “টুর্নামেন্টটা দারুণ উপভোগ করেছি। খুব কঠিন উইকেট ছিল না। বলা যেতে পারে ব্যাটিং সহায়ক পিচই ছিল। আর ড্রেসিংরুমের পরিবেশটাও বরাবর ভাল।”
পৃথ্বী শ: দলের বিরাট কোহলি তিনি। দায়িত্বের বোঝা যেমন ছিল, তেমনই প্রত্যাশা পূরণের চাপ। সব সামলে সফল পৃথ্বী। বললেন, “অসাধারণ সাপোর্ট স্টাফ পেয়েছি আমরা। গত দুবছর যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, তারই ফল পেলাম। আর এই জয়ের কৃতিত্ব প্রত্যেকের। রাহুল স্যার তো কিংবদন্তি। ওঁর বিষয়ে যা বলব সবই কম। মাবি আর কমলেশ গোটা টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলেছে। তবে হ্যাঁ, সমর্থকদের এই সমর্থনের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি।”
[কেন অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অবশেষে ফাঁস করলেন সৌরভ]
The post এতদিনে অধ্যাবসায়ের সঠিক পুরস্কার পেলেন রাহুল দ্রাবিড় appeared first on Sangbad Pratidin.