সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তারকা প্রথা বন্ধ করে টিম গেমকে প্রাধান্য দিতে চান। ভারতীয় দলের হেডকোচ হয়েই একপ্রকার স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন গৌতম গম্ভীর। পৌনে দু'বছর কোচ থাকার পর সেই কাজটা অনেকটাই করে ফেলেছেন তিনি। সমস্যা হল, যে কারণে সেটা করা সেই সাফল্য পাওয়া, সেটা কী হল? তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন রয়ে গিয়েছে।
সেই ম্যাক পতৌদি থেকে শুরু করে শুভমান গিল পর্যন্ত। ভারতীয় ক্রিকেটে মহাতারকার অভাব নেই। তাতে সুবিধা অনেক। মহাতারকাদের উপস্থিতি অন্তত আর্থিকভাবে শক্তিশালী করছে বিসিসিআইকে। ক্রিকেট মাঠেও আলাদা সম্ভ্রমের একটা জায়গা তৈরি হয় ওই মহাতারকাদের সুবাদেই। তবে বর্তমান ভারতীয় দলের হেড কোচ গৌতম গম্ভীরের এই তারকা পূজন সংস্কৃতি একেবারেই না পসন্দ। অবসর নেওয়া ইস্তক কোনও নির্দিষ্ট একজন তারকাকে বাড়তি সমীহ, বাড়তি সম্মান করার বিরোধিতা করে আসছেন তিনি। গম্ভীর ভরসা করেন টিম গেমে। ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার পর নিজের নীতির আরোপ করতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি তাঁকে। গম্ভীর চেয়েছিলেন যে টিম হিসেবে মাঠে নামবে ভারতীয় দল। যেখানে জিতলেও যেন তার কৃতিত্ব সবার থাকে, তেমনই হারলেও তার দায় সবাইকেই নিতে হবে।
গম্ভীর কোচ হওয়ার পর প্রথমেই তাঁর তথাকথিত বিবাদ শুরু হয় দলের সবচেয়ে বড় দুই তারকা রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির সঙ্গে। গত বছর বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে হারতে হয়েছিল ভারতকে। সেই সিরিজেই রোহিত শর্মাকে একটি টেস্টে বসিয়ে দেওয়া হয়। সেই টেস্ট সিরিজ চলাকালীন আচমকা অবসর নিয়ে নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সিরিজ শেষে একপ্রকার অবসর নিতে বাধ্য করা হয় বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাকে। শর্ত দেওয়া হয়, ওয়ানডে খেলতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে নামতে হবে। সেই শর্ত মেনে দুই মহাতারকা এখন বিজয় হাজারেও খেলছেন। রবীন্দ্র জাদেজা আর কোনও দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। এমনকী জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজরাও নিয়মিত ৩ ফরম্যাট খেলেন না। এসবের নেপথ্যে গম্ভীরের ওই নীতি। সেই নীতিতে এক দু'জনকে দেখে ব্যতিক্রম মনে হচ্ছিল। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন শুভমান গিল। গম্ভীর জমানায় যার অভাবনীয় উত্তরণ কারও নজর এড়ায়নি। রাতারাতি তিনি টেস্ট দলের অধিনায়ক হয়েছেন। 'অনিয়মিত' সদস্য থেকে টি-২০ দলে ভাইস ক্যাপ্টেন হয়ে গিয়েছেন। হর্ষিত রানা ৩ ফরম্যাটের ক্রিকেটার হয়ে গিয়েছেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল, এঁরা দুজন হয়তো কোচ গম্ভীরের প্রিয়পাত্র। কিন্ত টি-২০ বিশ্বকাপের দল থেকে শুভমান গিলকে বাদ দিয়ে কোচ গম্ভীর আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন, স্রেফ নাম দিয়ে কাম হবে না। পারফরম্যান্স মাস্ট।
আসলে দলে কোনও মহাতারকা তৈরিই হতে দিতে চান না কোচ। তাঁর মনে হয়, দলের সাফল্যের জন্য সব ক্রিকেটারকে সমান গুরুত্ব দেওয়াটা দরকার। ঠিক একই স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলেন গ্রেগ চ্যাপেলও। তিনিও তারকাপ্রথা ভুলিয়ে তারুণ্যে নজর দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন। কিন্তু ভয়ংকর রকম ব্যর্থ হয়েছেন সিনিয়রদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায়। গম্ভীরের পৌনে দুবছরের কেরিয়ারও যে বিরাট সফল, সেটা বলা যাবে না। আগামী টি-২০ বিশ্বকাপে সফল না হলে তাঁরও চ্যাপেলের পরিণতি হতে পারে।
