শুভায়ন চক্রবর্তী, অ্যাডিলেড: মাঝে দীর্ঘ সময় অসুস্থ ছিলেন। আর্থিক সঙ্কটেও ভুগছিলেন। কিন্তু শনিবার গ্রেগ চ্যাপেলকে দেখা গেল একেবারে ধোপ-ধুরস্ত মেজাজে। স্যুট-বুটে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দেখতে এসে সোজা চলে এলেন প্রেস বক্সে। এবং উপস্থিত মিডিয়াকে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি যা বললেন, নিচে তুলে দেওয়া হল...
অধিনায়ক বুমরাহ: স্মার্ট ক্রিকেটার বলতে যা বোঝায়, জশপ্রীত বুমরাহ ঠিক তাই। বোলিং ক্যাপ্টেন নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ভাবে কোনও ছুঁতমার্গ নেই। শুধু তাকে ভালো অধিনায়ক হতে হবে। চিরাচরিত ভাবে একটা ধারণা চলে এসেছে যে, বোলার যদি অধিনায়ক হয়, তা হলে তার পক্ষে ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করা কঠিন। প্যাটের (প্যাট কামিন্স) ক্ষেত্রে আমি বলব, সিনিয়র প্লেয়ারদের সঙ্গে ওর যোগাযোগ খুব একটা ভালো নয়। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে প্যাট ভালো। তবে ফাস্ট বোলার অধিনায়ক হলে কী অসুবিধে জানেন? পাঁচ টেস্টের সিরিজ হলে সাত সপ্তাহে সেই ফাস্ট বোলারকে পাঁচটা টেস্ট খেলতে হবে। সেই ওয়ার্কলোডটা বিশাল। কারণ, একজন পেসারয়ের পক্ষে সব সময় পাঁচটা টেস্ট টানা খেলা সম্ভব নয়। তবে তার পরেও বলব, বোলার অধিনায়ক হলে আমার কোনও অসুবিধে নেই।
পারথে রাহুলের আউট: খেলাটা আমি দেখছিলাম টিভিতে। তা, বল যখন রাহুলের ব্যাটের পাশ দিয়ে যায়, একটা জোরে আওয়াজ শুনেছিলাম টিভিতে। শুনেই মনে হয়েছিল, রাহুল আউট। কিন্তু প্রযুক্তি দেখে সেটা মনে হল না। রাহুলকে মাসখানেক পর জিজ্ঞাসা করলে সম্ভবত উত্তর আসবে, ব্যাটে লেগেছিল বল। তবে ওটাকে আমি বিতর্কিত আউট বলব না। আমার বক্তব্য হল, প্রযুক্তিকে আনা হয়েছে কেন? যাতে আবেগ ফ্যাক্টরকে বাদ দেওয়া যায়। সব রকম সংশয় এড়ানো যায়। প্লেয়ার যদি আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে কোনও কিছু নিয়ে, তা হলে তার প্রভাব লম্বা সময় পড়তে পারে। একটা টেস্ট পাঁচ দিন ধরে চলে। একটা টেস্ট সিরিজ পাঁচ টেস্টের হয়। তা হলে ভাবতে পারছেন, একটা সিদ্ধান্তকে ঘিরে একজন ক্রিকেটারের আবেগের প্রভাব কতটা বিস্তৃত হতে পারে? ভুলটা রাহুলের নয়। ভুলটা প্রযুক্তির। আর আমরা অতীতে দেখেছি, প্রযুক্তিও ভুল করতে পারে।
অবসরের আদর্শ সময়: সেটা সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে একজন প্লেয়ার। সে-ই সবচেয়ে ভালো বুঝবে, কবে তার ছেড়ে দেওয়া উচিত। একজন প্লেয়ার সব সময় চায়, যত দিন সম্ভব খেলে যেতে। তাই কঠোর নির্বাচকদের প্রয়োজন। যারা প্রয়োজনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সব সময় অবসরের সিদ্ধান্ত প্লেয়ারের উপরই ছাড়তে হবে, তার কোনও মানে নেই। তারা হয়তো সব সময়ই চাইবে, অবসর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিজে নিতে। দিন শেষে এখন খেলে ভালো রোজগার করা যায়। কে-ই বা তাই শখ করে খেলা ছাড়তে চাইবে? তাই বাইরের কাউকে চাই, যে কি না সেই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে পারবে। ঠিক সেই কারণে কড়া নির্বাচক কমিটির প্রয়োজন।
কোচ রাহুল দ্রাবিড়: যেমন অসামান্য মানুষ, তেমনই অসাধারণ ক্রিকেটার। ক্রিকেট খেলাটা খুব ভালো বোঝে রাহুল। তার উপর লোকের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। সময়-সময় আমাদের দু’জনের কথাবার্তা হয়। এখনও হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা কমছে। আমি আর ক্রিকেট নিয়ে কাজকর্ম করি না। কিন্তু যখন আমি আর রাহুল, দু’জনেই অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়টা দেখতাম, প্রায় নিয়মিতই দেখাসাক্ষাৎ হত আমাদের। আর যখনই আমরা এক শহরে থাকতাম, দু’জন মিলে দেখা করতে নিতাম। ভারতের কোচ যখন ছিল রাহুল, আমি একবার ওর সঙ্গে গিয়ে দেখা করে এসেছিলাম। সেটাই আমাদের শেষ মুখোমুখি সাক্ষাৎ। তবে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়েছে তার পরেও।