আলাপন সাহা: একটা সময় ছিল যখন ভারত-বাংলাদেশের খেলা মানে একটা ভাতৃত্বের আবহ তৈরি হত। ওপার আর এপার বাংলা ভেসে যেত আবেগের সাগরে। এপার বাংলার অনেকের সমর্থন ভারতের দিকেও থাকলেও হৃদয়ের একটা অংশ জুড়ে থাকত বাংলাদেশ। এখন আর সেই আবহটা কোথায়! বরং তা পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। কোথায় সেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন? কোথায় সেই আবেগ? পরিবর্তে রয়েছে উত্তেজনার গণগণে আঁচ। তৈরি হয়েছে বৈরিতা। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বনাম বাংলাদেশ যতবারই হয়েছে, ততবারই উত্তেজনা ছড়িয়েছে ভালোরকম। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে যেরকম আবহ থাকে, ভারত-বাংলাদেশেও ঠিক সেই আবহ যেন ফিরে ফিরে আসে। এক-একসময় আবার সেই উত্তাপ ভারত বনাম পাকিস্তানকেও ছাপিয়ে যায়!
মরুশহরে আর কয়েক ঘণ্টা পরই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (ICC Champions Trophy 2025) মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত আর বাংলাদেশ। দুবাইয়ের আবহাওয়া এখন আর আগের মতো নেই। সেই গরম নেই। সকালের দিকে আবহাওয়া বেশ মনোরম। রাতের দিকে ঠাণ্ডা হাওয়ার একটা শিরশিরানি রয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ম্যাচ ঘিরে উত্তাপের পারদটা এখন থেকেই চড়চড় করে বাড়ছে। মাঠের বাইরে দু’দেশের সমর্থকদের ক্রিকেটীয় যুদ্ধ তো রয়েছেই। এবার আবার এর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন। তাঁর বর্তমান ঠিকানা দিল্লি। দু’দেশের রাজনৈতিক নেতাদের হুঙ্কার-পাল্টা হুঙ্কার থাকছে। কাঁটাতার নিয়ে বিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে! বৃহস্পতিবারের ম্যাচটা দুটো দেশের থেকেই কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কে বলতে পারে দু’দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহ খেলার মাঠেও কোনও প্রভাব ফেলবে না!
বাংলাদেশ মিডিয়া এখন থেকেই ভারত বাড়তি সুবিধে পাচ্ছে বলে দাবি তুলতে শুরু করে দিয়েছে। বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ আইসিসি অ্যাকাডেমির মাঠে প্র্যাকটিস করে। ভারত বিকেলে দুবাইয়ের স্টেডিয়ামে। যেখানে বৃহস্পতিবার ম্যাচ। যা নিয়ে বাংলাদেশ মিডিয়ার অভিযোগ, কেন ভারত ম্যাচের আগের দিন স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাবে? আসলে এখন বেশিরভাগ স্টেডিয়ামেই ফ্লাডলাইট থাকে। সেখানে দুবাইয়ে এখনও রিংলাইট রয়েছে। ফিল্ডিংয়ের সময় মানিয়ে নিতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তাই এদিন স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস করে গেলেন রোহিতরা। কেউ কেউ বলছিলেন, চাইলে বাংলাদেশও হয়তো করতে পারত। তাহলে তারা কেন করল না? কিন্তু বাংলাদেশ মিডিয়া ওসব কোনও কিছুতেই কান দিতে চাইছে না। তাদের তরফে এটাও বলা হচ্ছে, ভারত শুধুমাত্র একটা ভেন্যুতেই খেলছে। এটাও বা কেন হবে! কিন্তু তাদের কে বোঝাবে, ভারত যে পাকিস্তানে খেলতে যাবে না, সেটা অনেক আগে থেকেই ঠিক হয়েছিল। তাছাড়া টুর্নামেন্টের স্টেকহোল্ডারদের মতামত অনুসারেই সূচি তৈরি হয়েছে। তাহলে আগে থেকে কেন এসব বলা হয়নি? কেনই বা ম্যাচের দিন এসব বলে আবহ আরও উত্তপ্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে?
বুধবার বাইশ গজের আবহটাও একইরকম উত্তপ্ত হতে পারে। বাংলাদেশ শিবির থেকে বারবারই নাহিদ রানার কথা বলা হচ্ছে। বোলিং স্পিড নাকি দেড়শো প্লাস। বিপিএলে টানা বোলিংয়ের পর রানার বোলিং স্পিড অনেকটাই কমেছে। কিন্তু তাতে কী! বাংলাদেশ মিডিয়া বলাবলি শুরু করে দিয়েছে, ভারতীয় ব্যাটিংকে একাই চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিতে পারেন রানা। ওপার বাংলা থেকে ঠিক যেন একটা প্রচ্ছন্ন হুমকিই দিয়ে রাখা হচ্ছে। পাল্টা থাকছে ভারতের তরফেও। না, বাংলাদেশ নিয়ে রোহিত কিছু বলেননি। আসলে প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশ নিয়ে সেভাবে প্রশ্নও ওঠেনি। শুধু রোহিতকে জিজ্ঞেস করা হয়, ম্যাচের দিন মেঘলা আবহাওয়া থাকতে পারে। ভারতীয় অধিনায়ক পরিষ্কার বলে দিয়ে গেলেন, কন্ডিশন যেরকম থাকুক না কেন, সেটা মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা তাঁর টিমের রয়েছে। রোহিত বলছিলেন, “দেখুন যদি ওভারকাস্ট কন্ডিশন থাকে, তাহলে আমাদের বোলাররা জানে কী করতে হবে। আর যদি আমরা ব্যাটিং করি, তাহলে ব্যাটাররা রয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে কী করতে হয়, সেটা ওদের খুব ভালো করে জানা। বলতে পারেন, সব ধরনের পরিস্থিতি সামলানোর মতো ক্ষমতা আমাদের টিমের রয়েছে।” এদিন ভারত অবশ্য সেভাবে অনুশীলনও করেনি। আসলে দুবাইয়ের মাঠে প্র্যাকটিসের বিশেষ সুবিধে নেই। কোনও প্র্যাকটিস উইকেট নেই। ভারতীয় দল শুধু ফিল্ডিং করল। বোলাররা স্পট বোলিং করলেন। ঘণ্টা দু’য়েক ট্রেনিংয়ের পর রোহিতরা হোটেলে ফিরে গেলেন। মহম্মদ সামিকে একেবারে পুরনো ছন্দে দেখাল। ভারত অধিনায়ক রোহিতও বলে গেলেন, “শামিকে যা দেখলাম একেবারে ঠিক আছে। ভীষণভাবে চাইছিলাম শামি কয়েকটা ম্যাচ খেলে নিক। কুলদীপও হার্নিয়া অপারেশনের পর প্রায় দু’মাস পর ফিরেছে। দেখুন ওরা কটা উইকেট নিল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল হল কীরকম রিদমে বোলিং করছে। টিম ওদের ব্যাক করবে।” দুবাইয়ের আবহাওয়ায় যতই পরিবর্তন ঘটুক না কেন, ভারত বনাম বাংলাদশ ম্যাচ নিয়ে বৈরিতার আবহ যে এতটুকু বদলায়নি, সেটা আশা করি বুঝতেই পারছেন!
আজ টিভিতে
ভারত বনাম বাংলাদেশ
দুবাই, দুপুর ২.৩০
স্টার স্পোর্টস
