আলাপন সাহা, দুবাই: দুবাইয়ের আল-বরসা জায়গাটা অনেকটা কলকাতার ধর্মতলার মতো। ধর্মতলা থেকে যেমন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য সব কিছু পাওয়া যায়। দুবাইয়ের আল-বরসাও তাই। দুটো মেট্রো স্টেশন একেবারে গায়ে-গায়ে। শহরের নানা প্রান্তে যাওয়ার জন্য বাস রয়েছে 'মল অব এমিরেটস'-এর সামনে। ট্যাক্সি রয়েছে। আল-বরসা থেকে মেট্রোয় বিখ্যাত জুমেইরা বিচ যেতে খুব সময় লাগে না। দুটো-তিনটে স্টেশন। সেখান থেকে ট্রাম নিতে হবে। মিনিট পাঁচেকের দূরত্ব। তবে সে ট্রাম কলকাতার ট্রামের মতো নয়। দুবাইয়ের ট্রাম অনেক বেশি গতিসম্পন্ন।

জুমেইরা বিচ দুবাইয়ের পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। অদ্ভুত সুন্দর জায়গা। বিভিন্ন ধরনের দোকান-পাট দিয়ে সাজানো। বিচের ধারেই বেশ কিছু অভিজাত রেস্তরাঁ। সর্বদা প্রাণবন্ত থাকে জুমেরইরা বিচ। শোনা যায়, শহরে বড় কোনও টুর্নামেন্ট চললে, সেই আঁচ জুমেইরা বিচেও পাওয়া যায়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে সেই উন্মাদনাটা টের পাওয়া যাচ্ছিল না। কিছুদিন আগেও জুমেইরা বিচের আশপাশে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, যাঁর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে কিদুমাত্র আগ্রহ রয়েছে।
তবে গত দু'দিনে পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে মরুশহরে। রোহিত শর্মারা রবিবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেওয়ার পর শিরশিরানিটা টের পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, নিশ্চিতভাবে সেমিফাইনালের ভারত কনাম অস্ট্রেলিয়ার মহাযুদ্ধ। বারবার দু'বছর আগের বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রসঙ্গ চলে আসছে। শুধু ফাইনাল বলছি কেন, অস্ট্রেলিয়া সফরের বিপর্যয়ের কথাও উঠছে। ভারতীয় সমর্থকদের একটা ধারণা জন্ম নিয়েছে এবার যাবতীয় সব হিসেব চুকিয়ে দেবে টিম ইন্ডিয়া। বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের বদলাও হয়ে যাবে দুবাইয়ে। আর ভারতীয় সমর্থকদের এহেন আত্মবিশ্বাসের প্রধান কারণই হল- টিমের পারফরম্যান্স। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (Champions Trophy 2025) গ্রুপের তিনটে ম্যাচেই দুর্ধর্ষ জয়। সর্বোপরি, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টপ অর্ডার চূড়ান্ত ব্যর্থ হওয়ার পরেও, বিরাট-রোহিতরা রান না পাওয়ার পরেও, মিডল আর লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটিং বিপর্যয় সামলে নিয়েছে। ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেও গেলেন, "সেমিফাইনালের আগে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হল মিডল অর্ডরের পারফরমান্স। চাপের মধ্যে ওরা দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে।”
আর সেটাই আশা বাড়িয়ে দিচ্ছে। দাবি উঠছে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও চার স্পিনারে যাক ভারত। অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং ভারতীয় স্পিন চতুর্ভুজ সামলাতে পারবে না। যদিও রোহিত কম্বিনেশন নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলে যাননি। ভারতীয় অধিনায়কের মনে হয়েছে, দুবাইয়ে প্রত্যেকটা উইকেটের চরিত্র কিছুটা হলেও আলাদা। দেখে মনে হয়, সব পিচ এক রকম। চরিত্র এক রকম। আদতে সেটা নয়। মাঝে আবার অনেকে রোহিতের ভারতের বিরুদ্ধে 'অন্যায়' সুবিধে পাওয়ার (এক কেন্দ্রে ভারত সব ম্যাচ খেলছে বলে) দাবি তুলেছিলেন অনেকে। কিন্তু তা শোনামাত্র পত্রপাঠ উড়িয়ে দিলেন ভারত অধিনায়ক। বললেন, "দুবাইয়ে আমরা খুব বেশি ক্রিকেট খেলি না। এখানকার পরিবেশ আমাদের কাছেও অজানা। দেখে মনে হয় পিচগুলো একই রকম। কিন্তু আদতে সেটা নয়। বরং প্রত্যেকটা আলাদা ধরনের। আমরা জানি না, সেমিফাইনাল কোন উইকেটে হবে। জানি না, পিচ কীরকম আচরণ করবে।"
শোনা গেল, ম্যাচের দিন উইকেট দেখার পর চূড়ান্ত কম্বিনেশন ঠিক হবে। যা-ই হোক না কেন, এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত চার স্পিনারের ফর্মুলা থেকে কোনওভাবেই সরছে না। আর অস্ট্রেলিয়াও হয়তো সেটা বুঝে গিয়েছে। তাই আগে থেকেই স্পিন খেলার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে স্টিভ স্মিথের টিম। প্র্যাকটিসে স্থানীয় নেট বোলারদের মধ্যে বেশিরভাগই স্পিনাররা ছিলেন। যার মধ্যে বেশ কয়েকজন 'চায়নাম্যান' ও ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার আরও সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে ওপেনার ম্যাথু শর্টের চোট। টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছেন শর্ট। পরিবর্তে কুপার কোনোলিকে নিয়ে আসা হয়েছে। যাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। তবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যটিং বেশ শক্তিশালী। স্মিথ রয়েছেন। মার্নাস লাবুশেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জশ ইংলিসরা আছেন। তুলনায় বোলিং অনেক বেশি অনভিজ্ঞ। রোহিতরা হয়তো ঠিক সেই জায়গাটাই টার্গেট করতে চাইছেন। চাইছেন, টস জিতে আগে ব্যাটিং করে বড় রান তুলতে। তারপর স্পিনাররা তো আছেনই। তবে ভারতের কাছে আসল মাথাব্যথা কারণ হয়তো একজনই। যিনি বারবার ভারতকে ভুগিয়ে এসেছেন। ট্রাভিস হেড। দু'বছর আগের ফাইনালেও 'হেড-বাট'-ই কাপ স্বপ্নের মৃত্যু ঘটিয়েছিল ভারতের। ভারতীয় টিম খুব ভালো করেই জানে, ম্যাচ জিততে গেলে শুরুতেই ফেরাতে হবে হেডকে। রোহিতদের লক্ষ্য তাই একটাই। হেড-কাঁটা উপড়ে ফাইনাল নিশ্চিত করা।
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনাল, দুবাই দুপুর ২.৩০, স্টার স্পোর্টস