আলাপন সাহা, দুবাই: দুবাইয়ের আবহ গত কয়েক দিনে অনেক বদলে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারত ফাইনালে যাওয়ার পর পুরো শহরজুড়ে উৎসব শুরু হয়েছে। ফাইনাল ঘিরে উন্মাদনা বাড়ছে। টিকিট নিয়ে এখনই যে পরিমাণ আগ্রহ, তাতে আগামী কয়েক দিনে সেই মাত্রাটা যদি হাহাকারের পর্যায়ে পৌঁছয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এমনিতে দুবাইয়ে প্রচুর ভারতীয় থাকেন। তার উপর রবিবারের ফাইনালের জন্য দেশ থেকে প্রচুর সমর্থকরা আসতে শুরু করে দিয়েছেন। দিন কয়েক আগে কলকাতা থেকে চেনা পরিচিত কয়েকজন ছুটি কাটাতে এসেছেন। হঠাৎ করেই সকালে তাঁদেরই একজনের ফোন। কাতর অনুরোধ, ফাইনাল দেখতে চান। কীভাবে টিকিট পাওয়া যাবে, সে'সব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলল বেশ কিছুক্ষণ।
সেমিফাইনালের সময় বাংলাদেশের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। দুবাইয়ে থাকেন বেশ কয়েক বছর। তাঁর দেশে লোকেদের মধ্যে এখন ভারত-বিদ্বেষী মনোভাব বাড়ুক না কেন, তিনি মনেপ্রাণে টিম ইন্ডিয়ার জয় চাইছেন। সেমিফাইনালে এসেছিলেন ভারতের তেরঙ্গা নিয়ে রোহিতদের সমর্থন করতে। বলে গেলেন, ফাইনালেও ঠিক একইভাবে ভারতকে সমর্থন করতে আসবেন। চাইছেন, রবিবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ভারত চব্বিশ বছর আগের বদলা নিক! সেবার নাইরোবিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারত হেরেছিল নিউজিল্যান্ডের কাছে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা যেভাবে খেলেছেন, সেটাই সবার আশা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। মোটর সিটি আর স্পোর্টস সিটি জুড়ে বিভিন্ন ভারতীয় রেস্তঁরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আগামী কয়েক দিন যে সেগুলো সব ভারতীয় সমর্থকদের দখলে চলে যাবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত।
ভারতীয় টিমও বৃহস্পতিবার থেকে ফাইনালের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সেমিফাইনালের পর দু'দিন ছুটি দেওয়া হয়েছিল ক্রিকেটারদের। তবে একদিকে যেমন দুবাইয়ে ফাইনালের আরাধনা শুরু করে গিয়েছে, তেমনই নিঃশব্দে বিশ্ব ক্রিকেট থেকে আর এক মহাতারকার প্রস্থানেরও সুর শোনা যাচ্ছে। ভারতের কাছে সেমিফাইনালে হারের পরই ওয়ান ডে ক্রিকটে থেকে অবসর নেন স্টিভ স্মিথ। শোনা যাচ্ছে, স্মিথের দেখানো পথই অনুসরণ করতে পারেন কেন উইলিয়ামসনও। সাদা-বলের ক্রিকেটে এটাই নিউজিল্যান্ড তারকার শেষ আইসিসি ইভেন্ট চলে এসেছে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে খোঁজখবর নিয়ে তার একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পরই সাদা-বলে ক্রিকেটে অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন কেন। এমনকী বার্ষিক চুক্তিও নিতে চাননি বলেই শোনা গেল।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। উইলিয়ামসন মনে হয় না টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবেন। তারপর ২০২৭ দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। স্মিথ ঠিক করে নিয়েছিলেন ২০২৭ বিশ্বকাপ খেলবেন না। জুনিয়রদের জায়গা ছেড়ে দিতেই অস্ট্রেলিয়ার তারকা অবসরের সিদ্ধান্ত নেন। কেনের মাথাতেও নাকি সেই ভাবনা-চিন্তাই ঘুরছে। তিনিও সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার ওই বিশ্বকাপ খেলবেন না। উইলিয়ামসনও চাইছেন, বিশ্বকাপের আগে নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিতে। এমনিতে বেশ ভালো ফর্মে রয়েছেন কেন। ভারতের বিরুদ্ধে রান করেছেন। সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করলেন। তবু কেন নাকি নিজের ওয়ানডে কেরিয়ার আর দীর্ঘায়িত করতে চাইছেন না বলেই খবর। কে বলতে পারে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের পরই হয়তো সেই ঘোষণা চলে আসতে পারে।
বৃহস্পতিবার থেকেই ফাইনালের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে কিউয়িরাও। উইলিয়ামসন বলছেন, "আমাদের যাবতীয় ফোকাস এখন শুধু ফাইনালের দিকে। দুবাইয়ে খেলা। প্রতিপক্ষ ভারত। এগুলোই সবই খুব বড় ফ্যাক্টর। আমরা অবশ্য দুবাইয়ে ভারতের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচ খেলেছি। পাকিস্তান আর দুবাইয়ের কন্ডিশন সম্পূর্ণ আলাদা। সেই অনুযায়ী আমাদের সামনের দুটো-তিনটে দিন প্ল্যানিং করতে হবে।" বোঝা গেল, ট্রফি জয়ের সঙ্গে তিনি অবসরের মুহূর্তটাও স্মরণীয় করে রাখতে চাইছেন।
