সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত ইংল্যান্ড সফরে দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্সের পর এশিয়া কাপ থেকে শুভমান গিলকে (Shubman Gill) দেশের টি-টোয়েন্টি টিমে ফিরিয়ে এনেছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টে। সঞ্জু স্যামসনের জায়গায় তাঁকেই পাঠানো হচ্ছে ওপেনিংয়ে। অভিষেক শর্মার সঙ্গে। কিন্তু গিলকে ফেরানো হলে কী হবে, এশিয়া কাপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে এখনও পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে তিনি কিছুই করে উঠতে পারেননি। বরং তাঁকে খেলাতে গিয়ে প্রথমে সঞ্জুকে মিডল অর্ডারে নামতে হয়েছে। শেষে বাদ পড়তে হয়েছে। আর ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে গিল যত ব্যর্থ হচ্ছেন, তত সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন তিনি। দেশের প্রাক্তন অলরাউন্ডার ইরফান পাঠান যেমন বলে দিয়েছেন, ‘‘গিলের অফ ফর্ম চাপ বাড়াচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টের উপর। এটা কিন্তু মোটেও ভালো সংকেত নয়।’’
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট বুঝতে পারছে যে, রান না পেয়ে-পেয়ে অস্থির হয়ে পড়ছেন গিল। তিনি যে টি-টোয়েন্টি খেলার যোগ্য, তা প্রমাণের চেষ্টা করছেন মারাত্মকভাবে। আর তাতে চাপ আরও বাড়ছে তাঁর উপর। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে গিল করেছেন ৪। মুলানপুরে গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে করেছেন ০। প্রথম বলে আউট হয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। ভারতও ম্যাচ হেরে গিয়েছে। ৫১ রানে ম্যাচ জিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১ করে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বৃহস্পতিবার খেলা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ভারতের সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশখাতে বলে যান, ‘‘ইংল্যান্ডে যেভাবে টিমকে নেতৃত্ব দিয়েছে গিল, যেভাবে ব্যাটিং করেছে, তারপর টি-টোয়েন্টিতেও ভালো পারফর্ম করার চেষ্টা স্বাভাবিক। আমার মনে হয়, গিল সেটাই করতে চাইছে। ও যে টি-টোয়েন্টি খেলার যোগ্য, সেটা জাস্টিফাই করতে চাইছে। দলে যে জায়গা ওর প্রাপ্য, সেটা বোঝাতে চাইছে। কিন্তু আমরা চাই না, গিল সেটা ভাবুক। আমরা চাই, ও যেভাবে খোলা মনে আইপিএল খেলে, সেভাবেই খেলুক। গিল কত ভালো ক্রিকেটার, আমরা জানি। ওর উপর আমরা ভরসাও করি। আমরা এটাও জানি, ও ঠিক পারফর্ম করে দেবে। ঠিক যে বিশ্বাসটা আমরা সূর্যর উপরও রাখি।’’ এক্ষেত্রে বলে রাখা যাক, গিলের সঙ্গে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের অবস্থাও টি-টোয়েন্টিতে তথৈবচ। সাম্প্রতিক সময়ে বলার মতো রানই তিনি করতে পারেননি।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর ধরমশালায় সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। তার আগে চর্চায় ভারতের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। বিশেষ করে দ্বিতীয় জন, সহ-অধিনায়ক গিল। যাঁকে নিয়ে এক-এক রকম মত, এক-একজন প্রাক্তন ক্রিকেটার পেশ করছেন। ভারতের প্রাক্তন পেসার তথা গুজরাত টাইটান্স কোচ আশিস নেহরা যেমন গিলকে নিয়ে অতিরিক্ত কাটাছেঁড়া নিয়ে তিতিবিরক্ত। তিনি বলে দিয়েছেন, ‘‘তিন মাস ভুলে যান। আইপিএল যদি তিন সপ্তাহ দূরেও থাকত, তা হলেও আমি গিলের ফর্ম নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবতাম না। মাত্র দু’টো ম্যাচ খেলা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। তাতেই যদি গিল নিয়ে এত কথা শুরু হয়ে যায়, বলার কিছু নেই। আমাদের এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। টি-টোয়েন্টির মতো একটা গতিশীল ফর্ম্যাটে গিলের মতো একজন ক্রিকেটার রান না পেলেই কথা শুরু হয়ে যায়।’’ এরপর তির্যকভাবে নেহরার সংযোজন, ‘‘তাছাড়া কতই না বিকল্প এখন টিমে। বাদ দিয়ে দিক না। গিল আর অভিষেককে বাদ দিয়ে দিক। সাই সুদর্শন আর রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে দিয়ে ওপেন করাক। তাতে না হলে ওয়াশিংটন সুন্দর আর ঈশান কিষাণকে দিয়ে ওপেন করাক। বিকল্পের তো শেষ নেই।’’
তবে নেহরা যাই বলুন, গিল নিয়ে এত সদয় নন পাঠান। সূর্যকে নিয়েও নন। তাঁর সাফ বক্তব্য, ‘‘সূর্যর উচিত অফসাইড প্লে নিয়ে ভাবা। যে ডেলিভারিটায় ও আউট হল, তখন পজিশনের ধারেকাছে ও ছিল না। গিল আবার প্রবল অফ ফর্মে ভুগছে। যা ওর আর টিম ম্যানেজমেন্টের উপর চাপ বাড়াচ্ছে।’’ দেখার, ধরমশালায় গিল-সূর্য এ সমস্ত সমালোচনার জবাব দিতে পারেন কি না? না পারলে কিন্তু বিরূপ কথাবার্তার তেজ আরও বাড়বে!
