অর্ণব আইচ: নতুন আর অচেনা ই-ওয়ালেটে (E-Wallets) ঘনাচ্ছে বিপদ। এই ই-ওয়ালেটগুলিই ব্যবহার করছে সাইবার ও ব্যাংক জালিয়াতরা (Bank Fraud)। তারা এমন কিছু ই-ওয়ালেট বেছে নিচ্ছে, যে সম্পর্কে খোদ পুলিশও তেমন সচেতন নয়। ফলে জালিয়াতদের ঝুলিতে টাকা পৌঁছনোর আগে তা উদ্ধার করতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এমনই খবর পুলিশ সূত্রে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের ই-ওয়ালেটগুলি থেকে এবার জনগণকে সতর্ক লালবাজার (Lalbazar)।
কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police)সতর্কবার্তায় শহরবাসীকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, অনলাইন লেনদেন করার জন্য এমন ই-ওয়ালেট বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করা উচিত, যা সুরক্ষিত। সুরক্ষিত মনে হচ্ছে না, এমন ই-ওয়ালেট বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লেনদেন হলে টাকা খোয়াতে হতে পারে। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, তাঁদের নজরে এসেছে বেশ কয়েকটি নতুন ই-ওয়ালেট। সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর চলছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে ((ATM fraud) টাকা লেনদেনের মূল হাতিয়ার ই-ওয়ালেট। তদন্ত করে গোয়েন্দারা দেখেছেন যে, জামতাড়ার জালিয়াতরা এটিএম কার্ড জালিয়াতির সময় মূলত ব্যবহার করে ই-ওয়ালেট। এটিএম কার্ডের তথ্য জেনে অথবা অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে কোনও গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পর তা প্রথমে ই-ওয়ালেটেই পাঠানো হয়। এরপর ভুয়া নামে তৈরি নিজেদের কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তারা পাঠায় ওই জালিয়াতির টাকা। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সাধারণভাবে যে ই-ওয়ালেটগুলি দোকান বা অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, সেটাই ব্যবহার করতে শুরু করে জালিয়াতরাও। পুলিশও খোয়া যাওয়া টাকা জালিয়াতদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছনোর আগেই বিশেষ পদ্ধতিতে সেই টাকা আটকোনোর ব্যবস্থা করতে শুরু করে। মূলত ওই ই ওয়ালেট সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেই টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: মেলেনি মোদি সরকারের অনুমোদন, টেসলা নিয়ে এলন মাস্ককে বাংলায় আসার আহ্বান রাজ্যের মন্ত্রীর]
লালবাজারের এক কর্তা জানান, সম্প্রতি এই ই-ওয়ালেটেই তৈরি হয়েছে নতুন সমস্যা। বেশ কিছু এটিএম জালিয়াতির তদন্ত করতে গিয়ে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ ও থানার আধিকারিকরা দেখেছেন যে, জালিয়াতরা বেছে বেছে ব্যবহার করছে কয়েকটি আনকোরা ই-ওয়ালেট। তদন্ত শুরু করে এই নতুন ই-ওয়ালেটগুলি নজরে এসেছে পুলিশের। কিন্তু সেই সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়েই সমস্যায় পড়ে পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, পদ্ধতি অনুযায়ী, কেউ এটিএম কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশ তদন্ত করে জানার চেষ্টা করে কোন ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে মেল করে বিষয়টি জানানো হয়। সংস্থার সাহায্য নিয়েই পুলিশ টাকা উদ্ধার করে।
[আরও পড়ুন: করোনা পরিস্থিতে ফের শুরু টেলিফোনিক ক্লাস, ফোন করলেই মিলবে শিক্ষকদের পরামর্শ]
কিন্তু এক্ষেত্রে নতুন ই-ওয়ালেটগুলি সংস্থাকে মেল করেও কোনও উত্তর মিলছে না, এমন অভিযোগ পুলিশের। ফলে ওয়ালেট থেকে জালিয়াতদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছনোও বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর জালিয়াতদের পক্ষে টাকা হাতানো সহজ হয়ে যাচ্ছে। এমনকী পুলিশও উদ্ধার করতে পারছে না সেই টাকা। সাইবার বিশেষজ্ঞ (Cyber Expert) ঋত্বিক লাল জানান, যে টাকা লেনদেন সংস্থাগুলিকে রিজার্ভ ব্যাংক এসএসএল শংসাপত্র দিয়েছে, সেগুলি সুরক্ষিত। তাই সুরক্ষিত নয়, এমন ই-ওয়ালেট থেকে টাকার লেনদেন না করাই উচিত। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এই নতুন ও অচেনা ই-ওয়ালেটগুলিতেই ফাঁদ পাতছে জালিয়াতরা।
সাধারণ মানুষের পক্ষে এই ই-ওয়ালেটের বিষয়টি বোঝা সম্ভব নয়। তাই পুলিশের পরামর্শ, কেউ এটিএম কার্ডের তথ্য চাইলে বা কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করতে বললে সেই ফোন এড়িয়ে চলতে হবে। এভাবে জালিয়াতি আটকানো সম্ভব বলে আশা পুলিশ মহলের।