নব্যেন্দু হাজরা: একে করোনায় রক্ষে নেই। দোসর ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ (Cyclone Yaas)। ফলন ব্যাপক হলেও তাই চরম বিপাকে আম চাষিরা। এখনও সব আম পাড়ার সময় হয়নি। অথচ তা পেড়ে নিতে হচ্ছে ঝড়ের দাপটে মাটিতে পড়ে নষ্ট হওয়ার আতঙ্কে। এদিকে দামও মিলছে না। বিশেষ করে দুই ২৪ পরগনা ও নদিয়ায় সমস্যা বেশি। মুর্শিদাবাদেও সমস্যা কিছুটা রয়েছে। তবে উদ্যানপালন দফতরের আশা, মালদহে বড় কোনও ক্ষতি করতে পারবে না ঝড়।
মালদহ ও মুর্শিদাবাদের তুলনায় প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই আম (Mango) পরিপক্ক হয় নদিয়া ও দুই ২৪ পরগনায়। কিন্তু এখনও অনেকটা আম রয়েছে গাছে। ঝড়ে ক্ষতির ভয়ে রবিবার চরম ব্যস্ততায় কেটেছে চাষিদের। কিন্তু দাম মিলছে না। ১৩ থেকে ১৫ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে হিমসাগর। যা বাজারে খুচরো বিকোচ্ছে অনেক দামে। কলকাতায় কোথাও কোথাও গাছ পাকা হিমসাগর ১০০ টাকা কেজি। ফলে তা সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সকলেই অপেক্ষায় ছিলেন বাজারে পর্যাপ্ত জোগান হলে হয়তো আমের দাম কমবে। কিন্তু সে আশা হয়তো আর এবার পূরণ হবে না। তার আগেই ‘যশে’র তান্ডবলীলায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা আমের। পরিপক্ক হওয়ার আগেই পেড়ে নেওয়া আম কতখানি সুস্বাদু হবে ও কতটা সাধপূরণ করবে আমবাঙালির সেটাও বড় প্রশ্ন।
[আরও পড়ুন: জলে ডুবেছে ধান-পাট, ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতি কয়েক কোটি টাকার, মাথায় হাত চাষিদের]
মালদহ জেলায় এবছর প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। লক্ষ্য ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টন উৎপাদনের। মালদহের উদ্যানপালন দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষ্ণেন্দু নন্দন বলেন, “যা পূর্বাভাস রয়েছে, তাতে এখানে বৃষ্টি হলেও খুব একটা ঝড় হবে না। সেটাই রক্ষে। কিন্তু ফলন পূর্ণ হতে আরও দিন ১০-১২ লাগবে। তার আগে তো আম পাড়তে বলতে পারছি না। কিন্তু ভয়ে অনেকেই পাড়ছেন। তবে করোনার আবহে চাষিরা কিছুটা সমস্যায় তো রয়েছেন। বাজার পাচ্ছেন না।” মুর্শিদাবাদে এবার আম চাষ হয়েছে প্রায় ২৩১৫০ হেক্টরে। গতবারের চেয়ে বেশি। জেলার আম চাষি সংগঠনের এক কর্তা হায়াতুর নবি বলেন, “ঝড়ের ভয়ে সবাই আম পেড়ে নিচ্ছেন। পাইকারি দাম পাচ্ছি ১৩ টাকা কেজি। অথচ তা বিকোয় ২৬ টাকায়। কার্বাইডের খরচ মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১৫ টাকা। চাষের খরচ উঠছে কই? আম পাড়াতে একজনের মজুরি প্রায় চারশো টাকা। করোনার আবহে এমনিতেই বাজার ছিল না। তার উপর ঝড় আসছে। সরকার না তাকালে মরতে হবে এবার।”
তবে মুর্শিদাবাদের উদ্যানপালন দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রভাস মণ্ডল বলেন, “আমরা চাষিদের সতর্ক করেছি। অনেকে আম পেড়ে নিচ্ছেন ভয়ে। কিন্তু এখনও আম পাড়ার সঠিক সময় আসেনি।” এখন পাইকারি ব্যবসায়ীরা তো দাম দিতেই চাইছেন না। তাঁরা কার্যত পালটা চাপ দিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ফায়দা নিচ্ছেন। তাঁদের যুক্তি, তাঁরা বিক্রির জায়গা পাচ্ছেন না। বাজার বন্ধ। রাজ্যে ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর, আরশিনা, গোপালভোগ-সহ ৩০টিরও বেশি প্রজাতির আম চাষ হয়। নদিয়া, দুই চব্বিশ পরগনা, হুগলিতেও প্রচুর আমবাগান আছে। মালদহ ও মুর্শিদাবাদের আম আসে দক্ষিণবঙ্গে। এবার কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে বাজারজাত করার সংকটে ভুগছেন চাষিরা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম দিচ্ছেন না। এর উপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। আম যদি গাছে থাকে সেক্ষেত্রে ঝড়ের দাপটে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সেই ঝুঁকি নিতে নারাজ অনেকেই। তাই শনি ও রবিবারই দেখা গেল বহু চাষিকে আম পেড়ে নিতে। তাঁদের বক্তব্য, গাছপাকা না হোক কার্বাইড দিয়ে আম পাকিয়ে নেওয়া যাবে। কিছু পয়সা মিলবে। কিন্তু যদি তা গাছে থাকে তা পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেন্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে বলেন, “এই ঝড়ে সবজির যেমন ক্ষতি হবে তেমনই হবে আমেরও। তাই অনেকেই আগে থাকতে আম পেরে ফেলছেন।”