তরুণকান্তি দাস: এ বড় সুখের সময় নয়। অন্তত পর্যটনশিল্পে। দক্ষিণবঙ্গে আন্দোলনটা হয়তো তুলনামূ্লকভাবে তীব্র। কিন্তু তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি উত্তরবঙ্গে। বড়দিন থেকে ইংরেজি বছরের নববর্ষ, পর্যটনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মরশুমে এখন অনিশ্চয়তার ছায়া। একের পর এক বুকিং বাতিল, ভরা মরশুমে খরার আশঙ্কায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বড় কথা হল, ক্রিসমাস ক্যারলে এবার পাহাড়ে খুব বেশি বিদেশি পর্যটকের দেখা মিলবে না। এরই মধ্যে ২৯ ডিসেম্বর পাহাড়ে বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। যা বিপদ বাড়িয়েছে পর্যটনশিল্পের।
নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনীর পর দেশজুড়ে আন্দোলনের জেরে পর্যটন ধাক্কা খেয়েছে। গত এক সপ্তাহে আগ্রার তাজমহল চত্বরে তেমন বিদেশি তো দূরের কথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ, কেউই পা রাখেননি। তারই ছায়া যেন দেখা যাচ্ছে দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে। যেখানে বিদেশিরা বেশি আসেন এই সময়। দিঘা, মন্দারমণি, তারাপীঠ, বকখালি বা সুন্দরবনে অবশ্য পর্যটকের ভিড় আছড়ে পড়বে এই ক’দিন। কিন্তু সুন্দরবনেও এবার বিদেশিদের খুব বেশি দেখা যাবে না। বিদেশি নথিভুক্তিকরণ দপ্তর সূত্রে খবর, গতবারের চেয়ে এবার ডিসেম্বরে কম আসছেন তাঁরা। দার্জিলিংয়ে বিদেশি নথিভুক্তিকরণ অফিস রয়েছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণেই সেখানে বিদেশি পর্যটকদের আসা ও যাওয়ার দিন, থাকার ঠিকানা জানাতে হয়। সোমবার সেই অফিস জানাচ্ছে, জনাচারেক এদিন নাম লিখিয়েছেন। আগামী উৎসবের দিনগুলিতে যে এই সংখ্যার বিশেষ কোনও হেরফের হবে, তার সম্ভাবনা কুয়াশাঘেরা কাঞ্চনজঙ্ঘার শৃঙ্গ দেখার মতোই বিরল দৃশ্য। যে হোম স্টে গড়ে দু’পয়সার মুখ দেখার কথা ভেবেছিল পাহাড়ের মানুষ, সেগুলিতে এই সময় ঘর পাওয়া যায় না। কিন্তু এখনও তার অনেক ফাঁকা।
[আরও পড়ুন: শীতের মরশুমে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে ডায়মন্ড হারবারের পুরনো কেল্লার পিকনিক গ্রাউন্ড]
টুরিজম অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের সেক্রেটারি নীলাঞ্জন বসু বলেন, “পরিস্থিতি ভাল নয়। এবার কোনও মরশুমেই ভাল ব্যবসা হয়নি। পুজোয় আর্থিক মন্দা গিলে খেয়েছে এই শিল্পকে। কাশ্মীরের সব বুকিং তো বাতিল সেই কবে থেকে। এবার বড়দিনের ছুটিও মার খেল। ভিনরাজ্যে কেউ যেতে চাইছেন না অশান্তির জন্য। আর এখানে দার্জিলিং ও ডুয়ার্সেও তেমন পর্যটক যাচ্ছেন না।” অস্ট্রেলিয়ার প্রচুর পর্যটক আসেন এই সময়। আসে সুইজারল্যান্ডের টিম। সব ক্ষেত্রেই যেন ভাটার টান। যার পিছনে অশান্তিকেই দূষছেন সবাই। রাজ্যে সর্বভারতীয় পর্যটন সংস্থা এআইওটিও-র কর্তা দেবজিৎ দত্ত বলেছেন, “বিদেশিরা আসতে খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না সেটা তো পরিষ্কার।” এর মধ্যে আবার ট্রাভেল অ্যাডভাইসরি জারি করেছে কয়েকটি দেশ। সেই বার্তার মধ্যে রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া-সহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশের ওই অ্যাডাভাইসরিতে এখন এই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভ্রমণের জন্য নিরাপদ নয় বলে জানিয়ে দেওয়ায় একের পর এক বুকিং বাতিল হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে পর্যটনশিল্পে এ বড় সুখের সময় নয়।
The post অশান্তির আশঙ্কায় দার্জিলিং থেকে মুখ ফেরাল বাঙালি! বর্ষশেষে মাছি তাড়াচ্ছে পাহাড় appeared first on Sangbad Pratidin.