shono
Advertisement

হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে হত্যালীলা, শিউরে ওঠা বিবরণ রোহিঙ্গা শরণার্থীর

বিভীষিকা এখনও তাড়া করছে আক্রান্তদের। The post হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে হত্যালীলা, শিউরে ওঠা বিবরণ রোহিঙ্গা শরণার্থীর appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 02:56 PM Sep 16, 2017Updated: 09:26 AM Sep 16, 2017

সুকুমার সরকার, ঢাকা: ঘরের দরজায় পাথরের মতো বসে আছেন আকিরা ধর। ভেজা চোখে শূন্য দৃষ্টি। ঘর বলা ভুল। ঘর তো আসলে ওপারে। মানে মায়ানমারে। যা ছেড়ে আসতে হয়েছে। জায়গা মিলেছে ত্রাণশিবিরে। একটা জলাজমিতে বালি ফেলে সার বেধে মাথা গোঁজার জায়গা বানানো হয়েছে দরমা আর ত্রিপল দিয়ে। ঘুপচি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই।

Advertisement

[সন্ত্রাস জর্জরিত রোহিঙ্গাদের প্রতিদিন অন্ন জোগাচ্ছে এই শিখ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা]

শরণার্থীদের চোখেমুখে আতঙ্ক, আবার আশাও। আকিরা বসে বসে কী ভাবছিল কে জানে! সম্বিত ফিরতে বেশ কিছুটা সময় লাগল তাঁর। কয়েকদিন আগের বিভীষিকা এখনও তাড়া করছে তাঁকে। গত সপ্তাহের ঘটনা। আকিরার স্বামী ও দেওরকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। গ্রামবাসীদের সমস্ত কিছু লুট করার পর মুখোশধারী লোকগুলো পুরুষদের মাথা কেটে ফেলে। সবার সামনেই। তাদের হাতে ছিল বন্দুক আর দেশলাইয়ের প্যাকেট। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। কে হিন্দু কে মুসলিম, বিচার হয়নি। অত্যাচার চলেছে কেবল তাঁরা রোহিঙ্গা বলে। ঘরবাড়ি জ্বালানোর আগে হিন্দু মহিলাদের উপরও যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে। শুধু মুসলিম রোহিঙ্গা নয়, জ্বলন্ত রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে হয়েছে অসংখ্য হিন্দুকেও।

ফকির বাজারের গ্রামে বসত ছিল আকিরাদের। বছরখানেক আগে বিয়ে। বেশ চলছিল। কিন্তু গতমাস থেকেই হাওয়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গ্রামের একজন পুরুষকেও রেয়াত করেনি মুখোশধারীরা। অসংখ্য মৃত্যু আর রক্তস্রোত দেখেছেন আকিরা। শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে কেঁদে ফেললেন, “ওরা সবাইকে খুন করল।” এখন চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি। ওই অবস্থাতেও হিলির দুর্গম জঙ্গল পথ পার করে মেরিনজায় পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। জায়গাটা চট্টগ্রামের নাইখং চারির কাছে। আকিরা এখন রয়েছেন কুতুপালং ত্রাণশিবিরের হিন্দুপাড়ায়।

“চোখের সামনেই মানুষটার উপর কয়েক ঘণ্টা ধরে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে মুখোশধারীরা।” ত্রাণশিবিরের হিন্দুপাড়ায় আশ্রয় নেওয়া রিখা ধর কথা বলার সময় চোখে সেই আতঙ্কটা ফুটে উঠছিল। ফকিরবাজারে সোনার দোকান ছিল ওঁর স্বামীর। একদিন রাতে বাড়িতে চড়াও হয় মুখোশধারীরা। সোনা কোথায় লুকিয়ে রাখা আছে, না বলা পর্যন্ত তাঁর উপর অত্যাচার চলে। যখন বাচ্চাদের মেরে ফেলার ভয় দেখাতে, বলে দিতেই হল। তবুও রক্ষে হয়নি। চাকু দিয়ে গলা কেটে ফেলা হয় তাঁর।

[রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ করছে মায়ানমার সেনা, বিস্ফোরক অভিযোগ শরণার্থীদের]

এদের মতোই মায়ানমারের রোয়া গ্রাম থেকে ১২০-র বেশি শরণার্থী পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন বিজয় রাম। জমি-বাড়ি গিয়েছে, তা যাক। প্রাণটা বেঁচেছে। কেন এভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল তাঁদের জীবন? আসুন বিজয় রামের মুখেই শোনা যাক। একটা বৃহস্পতিবারে সশস্ত্র মুখোশধারীরা আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়ল। সবাইকে ঘরের মধ্যে বন্দি করা হল। টানা ছ’দিন কাউকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হয়নি। সপ্তমদিনে ওরা যখন পাশের গ্রামে গেল, আমরা লুকিয়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি। মায়ানমার থেকে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। কিন্তু হিন্দুদের কখনও এভাবে সীমান্ত পেরোতে দেখা যায়নি। এদিকে, ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া রিখার মতো অনেকেই আতঙ্ক কাটাতে পারছেন না।

জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী। ভারতেও ঢুকে পড়েছে অনেকে। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তেই অনড় নয়াদিল্লি। শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সোমবার শীর্ষ আদালতে হলফনামা পেশ করবে কেন্দ্র। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে একটি মামলায় কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। অগ্নিগর্ভ মায়ানমার থেকে ভারতে পালিয়ে আসা দুই শরণার্থী মহম্মদ সালিমুল্লাহ এবং মহম্মদ শাকির নামে দুই ব্যক্তি এই মামলাটি করেন।

[রোহিঙ্গা নির্যাতনের মাশুল দিতে হবে মায়ানমারকে, হুমকি আল কায়েদার]

The post হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে হত্যালীলা, শিউরে ওঠা বিবরণ রোহিঙ্গা শরণার্থীর appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement