সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: দুর্গাপুরের সঙ্গে যেন আত্মিক যোগ ব্রিটেনের সদ্যপ্রয়াত ‘রানি’র। রানি আসবেন। দুর্গাপুর জুড়েই তাই উৎসব। রানির হাত ধরেই যে শুরু হবে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার (DSP) কাজ। ১৯৬১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রানি এলিজাবেথ দুর্গাপুরে (Durgapur) পা রাখেন। ডিএসপির ‘স্টিল মেল্টিং শপ’-এর ‘ওপেন হার্থ ফার্নেস’ উদ্বোধনের জন্য। যদিও তার ঠিক একবছর আগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ ব্লাস্ট ফার্নেসের উদ্বোধন করেছেন। তারপর লোহা তৈরি শুরু হলেও লোহা থেকে ইস্পাত তৈরি হবে ব্রিটেনের রানির হাত ধরেই।
পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই নেহরু-স্তালিন চুক্তি অনুযায়ী, ভারতে ইস্পাত এবং ভারী শিল্পের ভিত্তি রচিত হয়। ব্রিটিশরা দুর্গাপুর ইস্পাতকে এবং জার্মানি ওড়িশার রাউরকেল্লা ইস্পাতের প্রযুক্তি হস্তান্তর করে। সিংহাসনে বসার আট বছরের মাথায় রানির দুর্গাপুর আগমন উপলক্ষে তাঁর থাকার জন্যে ইস্পাত নগরীতে তৈরি করা হয় ‘রানি হাউস’। যার নাম পরিবর্তন করে পরে ‘দুর্গাপুর হাউস’ করা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের দিন সকালে হুড খোলা জিপে স্বামী প্রিন্স ফিলিপের (Prince Philip) সঙ্গে বছর পঁয়ত্রিশের রানি এলিজাবেথ (Queen Elizabeth II) প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে দুর্গাপুরের মানুষের অভিনন্দন নিতে নিতে ডিএসপি কারখানায় পৌঁছন।
[আরও পড়ুন: শখ করে কেনা ছাগলের মৃত্যু, শোকে পোষ্যর দড়ির ফাঁসে আত্মঘাতী নাবালিকা]
সেখানে উদ্বোধনের পর শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করেন। ব্রিটিশ ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেন রানি এলিজাবেথ। কিছুক্ষণ থেকে ফের চলে আসেন রানি হাউসে। রানি এলিজাবেথ দু’দিন ছিলেন দুর্গাপুরে। সন্ধ্যায় রানি হাউসে এলিজাবেথের সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছিল। আদিবাসী নৃত্য হয়। রানিকে রাঢ় বাংলার সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একাধিক উপহার তুলে দেওয়া হয়। আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে রানি এলিজাবেথ হাউসের তৎকালীন কেয়ারটেকারকে একটি সোনার চিরুনি উপহার স্বরূপ তুলে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
[আরও পড়ুন: মোদি-জিনপিং সম্ভাব্য বৈঠকের আগেই গোগরা হটস্প্রিং থেকে সরবে চিনা ফৌজ]
রানির দু’দিনের সফরকালে তাঁর দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ডিএসপির জেনারেল ম্যানেজার পি সি নিয়োগী। সেই সময়ে রানির সফর খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভার সংসদ ও সিটুর নেতা জীবন রায়। তিনি বলেন, “ব্রিটিশদের হাতে ভারতে ভারী ইস্পাত শিল্পের সূচনা। রানি এলিজাবেথের হাত ধরেই ভারতে প্রথম ডিএসপিতে ইস্পাত উৎপাদন। তারপরই দুর্গাপুরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। তাই রানির সঙ্গে দুর্গাপুরের শ্রমজীবী মানুষের আত্মিক সম্পর্ক।”