প্রসূন বিশ্বাস: তিনি স্টেজে আসতেই যেন উচ্ছ্বাসের ঝড় বয়ে গেল। তিনি-সলমন খান (Salman Khan)। জায়ান্ট স্ক্রিনে ট্রেলারের মত ছোট্ট একটি ভিডিও ক্লিপ চলতে শুরু হতেই চারিদিকে চিৎকারে কান পাতা দায়। একটাই শব্দ ‘ভাইজান’! স্টেজে উঠলেন ঠিক রাত সোয়া আটটায়। এরপর গিটার হাতে একের এক তাঁর অভিনীত ছবির গানে নাচতে শুরু করলেন। হাল আমলে তাঁর সিনেমার গানের পাশাপাশি সেই পারফরম্যান্সে ছিল ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’-এর মত কয়েক দশক আগের ছবির গানও। লাল-হলুদ মাঠ যেন তাতেই মাত।
সেই সময় ইস্টবেঙ্গল মাঠের চিত্র দেখার মত। এই মাঠ অনেক উন্মাদনা দেখেছে। সাত কিংবা আটের দশকে লাল-হলুদ দল জিতলে উন্মাদনায় আর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ত গ্যালারি। ইস্টবেঙ্গল মাঠে (East Bengal Ground) শনিবার কোনও খেলা ছিল না ঠিকই। তবে এদিন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনের অঙ্গ হিসাবে সলমন-নাইটে আরও একবার বাঁধনছাড়া উচ্ছ্বাস দেখল লাল-হলুদ গ্যালারি। ক্লাবের পক্ষ থেকে ২৭ নম্বর লেখা ইস্টবেঙ্গল জার্সি, স্মারক তুলে দেওয়া হল সলমন খানের হাতে। ২৭ তারিখ যেহেতু ভাইজানের জন্মদিন। তাই জার্সিতে রাখা হয়েছে ২৭ নম্বর। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা ফুটবলে সই করিয়ে রাখলেন। যা পরবর্তী সময়ে শোভা পাবে লাল-হলুদ সংগ্রহশালায়।
[আরও পড়ুন: দুর্নীতিগ্রস্ত, ফাঁকিবাজদের তৃণমূলে ঠাঁই নেই, অনুব্রতহীন বীরভূমে বার্তা অভিষেকের]
শনিবার ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে দেবব্রত সরকার, রজত গুহ, রূপক সাহারা স্মারক তুলে দেন সলমন খানের হাতে। তাঁর হাতে যখন এই স্মারক আর উত্তরীয় পড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তখন গ্যালারিতে “জয় ইস্টবেঙ্গল” ধ্বনি উঠল। সংবর্ধনা পাওয়ার পর সলমন বলেন, “এখানে এসে খুব ভালো লাগল। এখানকার দর্শকরা দারুণ। আপনাদের সব আশা পূরণ হোক।” ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (Arup Bishwas) ধুতি-পাঞ্জাবি আর ফুল দিয়ে সংবর্ধিত করলেন ভাইজানকে। সঙ্গে ছিলেন ছিলেন বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। এদিন ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘদিন পর কলকাতায় এসে এমন অনুষ্ঠানে দর্শকপূর্ণ মাঠ দেখে আপ্লুত হয়েছেন সলমন। স্টেজের মধ্যেই সে কথা আমাকে বললেন উনি।” ইস্টবেঙ্গল শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, “২৭ নম্বর জার্সি পেয়ে আপ্লুত হওয়ার পাশাপাশি আমাদের ক্লাবের যে কোটি কোটি সমর্থক আছে সেটা শুনে রীতিমতো অবাক হয়েছেন সলমন।”
[আরও পড়ুন: আইপিএলে মোহনবাগান রং! ২০ মে’র ইডেনে সবুজ-মেরুন জার্সিতে মাঠে নামবে লখনউ]
এদিন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বে পারফর্ম করতে এসে ভাইজানের মুখ থেকে বেরিয়ে এল ‘কলকাতা ইটস টু হট।’ তারপরই হাতের জলের বোতল থেকে জল ছুঁড়ে দিলেন সঞ্চালক মণীশ পলের দিকে। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল ৬টায়। শুরু হল ৬ টা ৫০ মিনিটে। শুরুতেই সঞ্চালক মণীশ পল র্যাপ করতে করতে সলমন খানের নাম বলতেই চিৎকারে ফেটে পড়ল গোটা স্টেডিয়াম। তবে প্রথমেই তিনি এলেন না। শুরুতে পূজা হেগড়ে, আয়ুশ শর্মারা পারফর্ম করলেন। তারপর এলেন জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ, প্রভু দেবা, সোনাক্ষী সিনহা, গুরু রানধাওয়া। এ কলকাতা যেন ভাইজানের জন্য সব করতে পারে। শনিবাসরীয় গোধূলিতে লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ভিড় তাই বলে যাচ্ছিল। কেউ ‘সলমন-সলমন’ বলে চিৎকার করছিলেন, কিছু তরুণী যেন আর অপেক্ষা করতে পারছিলেন না, কত দ্রুত ইস্টবেঙ্গল মাঠে প্রবেশ করবেন। বাইরের এই ভিড়ই যেন তার ইঙ্গিত দিয়ে দিচ্ছিল । তখনও অনুষ্ঠান শুরু হতে ঢের বাকি। এই গরমকে উপেক্ষা করেই একাধিক তরুণ-তরুণী আবার বিকাল বিকাল চলে এসেছিলেন ইস্টবেঙ্গলে।
বেহালার বছর ২৪ এর তন্ময় দাস, সকাল থেকে ছুটে বেড়িয়েছিলেন প্রিয় নায়ককে একবার দেখার জন্য। গিয়েছিলেন কালীঘাটেও। তবে কালো কাচে ঢাকা গাড়িতে সলমন থাকায় সেখানে দেখা মেলেনি। সেখান থেকেই সোজা ছুটে এসেছেন ইস্টবেঙ্গল মাঠে। তবে টিকিট জোগাড় করতে না পারায় লেসলি ক্লডিয়াস গলির একেবারে মোড়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। যদি একবার চোখের দেখা মেলে। সাধারণত কলকাতা লিগের ম্যাচ থাকলে কলকাতা পুলিশ কাস্টমস মাঠ থেকে গার্ডরেল দিয়ে ভীড় নিয়ন্ত্রণ করে। সলমন-নাইটের দিন দেখা গেল লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর মুখ থেকেই পুলিশি তৎপড়তা চোখে পড়ার মত। সকালের ভ্যাপসা গরমকে উপেক্ষা করেই সলমন নাইটের প্রস্তুতি এগিয়েছে লাল-হলুদ তাঁবুতে। বেলা যত বেড়েছে সেই তৎপড়তা তুঙ্গে উঠেছে। লাল-হলুদ ক্লাব তাঁবুতে ছেয়ে গিয়েছে বাউন্সার আর কলকাতা পুলিশে। আর যখন স্টেজে উঠলেন ভাইজান তখন যেন উপচে পড়ল ইস্টবেঙ্গল মাঠে উপস্থিত ভাইজানপ্রেমীরা।