অর্ণব আইচ: রেশনের চাল ও গম হাতানোর সাড়ে ৫০ কোটি টাকা ৬টি সংস্থার মাধ্যমে সরিয়েছিল বাকিবুর রহমান। ওই সংস্থাগুলি থেকে ফের অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে ওই টাকা কীভাবে সরানো হয়েছে, সেই তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এই তথ্যের ব্যাপারে রেশন বন্টন দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডি (Enforcement Directorate) আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রের খবর, রেশনের চাল ও গম সরিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতানোর মাস্টারমাইন্ড ছিল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। ইডি তদন্ত করে রেশন বন্টন দুর্নীতির অন্যতম অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানের তিনটি ভুয়ো সংস্থায় ২০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের হিসাব পায়। ওই টাকা অন্য দু’টি সংস্থার মাধ্যমেও যে পাচার করা হয়েছে, সেই প্রমাণও পান ইডি আধিকারিকরা। কিন্তু এ ছাড়াও ইডি তদন্তে আরও ৬টি সংস্থার হদিশ পায়। ইডির দাবি, সংস্থাগুলি ভুয়ো ও টাকা সরানোর জন্যই এগুলি তৈরি করা হয়। এই সংস্থাগুলির অধিকর্তা হিসাবে কয়েকজনকে দেখানো হয়। বাকিবুর রহমান নিজেই ওই অধিকর্তাদের সংস্থাগুলির মাথায় বসায়। ওই সংস্থাগুলির মধ্যে কয়েকটি চালকল ও গমকল বা রেশন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। একটি সংস্থা জামাকাপড় কেনাবেচা ও অন্য একটি সংস্থা প্রোমোটিংয়ের সঙ্গেও জড়িত বলে গোয়েন্দারা জানতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: ফের ছাত্রীর রহস্যমৃত্যু, আনন্দপুরে বেসরকারি কলেজের হস্টেল থেকে উদ্ধার দেহ]
ইডির গোয়েন্দারা জেনেছেন, ওই ৬টি সংস্থার মাধ্যমে ৫০ কোটি ৫০ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫৫০ টাকা সরানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি চালকলের মাধ্যমে ১০ কোটি ৩০ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা সরানো হয়। আরও তিনটি সংস্থার মাধ্যমে ৩ কোটি ৯৪ লক্ষ ৯১ হাজার ৫০০ টাকা, ৭ কোটি ৩৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ১০০ টাকা, ১১ কোটি ৬৭ লক্ষ ১১ হাজার ১০০ টাকা সরিয়ে ফেলে বাকিবুর ও তাঁর সহযোগীরা। জামাকাপড় কেনাবেচার সংস্থার নামে সরানো হয়েছে ১৪ কোটি ১৩ লক্ষ ২৪ হাজার ৮৫০ টাকা। এ ছাড়াও একটি প্রোমোটিং সংস্থার মাধ্যমে বাকিবুর ৩ কোটি ১০ লাখ ৬ হাজার ৯০০ টাকা সরিয়ে ফেলে, এমনই অভিযোগ ইডির গোয়েন্দাদের।
ইডির অভিযোগ, ওই ভুয়ো সংস্থা বা শেল কোম্পানিগুলির আসল মালিকের সঙ্গে কথা বলে কখনও সেগুলি নিজে ‘কিনে’ও নিত। এর পর সেগুলি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসত সে। যদিও সংস্থাগুলির অধিকর্তা নিজে হত না। তাঁর পরিচিত ব্যক্তি, আত্মীয়দেরও অধিকর্তা বানানো হত। ওই ৬টি সংস্থার কয়েকজন অধিকর্তাকে জেরা করে সংস্থাগুলি কিনে নেওয়ার ব্যাপারে তথ্য ইডি আধিকারিকদের কাছে আসে। সেই সূত্র ধরে রেশন বন্টন দুর্নীতির বিপুল টাকা কীভাবে বাকিবুর রহমান নিজের ইচ্ছামতো সরিয়ে ফেলত, সেই তথ্য ইডি জানতে পারে। ইডির গোয়েন্দাদের মতো, এখনও পর্যন্ত রেশন বন্টন দুর্নীতিতে মোট ১১টি ভুয়ো সংস্থার সন্ধান পেলেও আরও কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে। সেগুলিরও সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে ইডি।