অর্ণব আইচ: “পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিনি না। কোটি কোটি টাকাও নিইনি।”
কুন্তল-তাপস ‘ঘনিষ্ঠ’ গোপাল দলপতির কথায় বাড়ল রহস্য। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে ধৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ টাকা পৌঁছে যেত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। এই টাকা পাচারের পিছনে ছিলেন চিট ফান্ড কর্তা গোপাল দলপতি। এমনকী, সেই সুর ধরে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অন্য এক অভিযুক্ত তাপস মণ্ডলও দাবি করেছেন যে, গোপাল দলপতিকে কুন্তল ঘোষ কয়েক কোটি টাকা দিয়েছেন।
তবে সূত্রের খবর, এই অভিযোগগুলি নস্যাৎ করে গোপাল দলপতি দাবি করেছেন, কুন্তল তদন্তের অভিমুখ ঘোরানোর জন্য তাঁর উপর দোষ চাপাচ্ছেন। তিনি নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পাচারের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডল তাঁকে ফাঁসাচ্ছেন বলে দাবি তোলেন গোপাল দলপতি। এবার কুন্তল-তাপস-গোপালের বক্তব্যেই নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। তিনজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার পর এই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: শেয়ারে বিপুল ধসের ধাক্কা, বিশ্বের ধনীর তালিকায় প্রথম ১০ থেকে ছিটকে গেলেন গৌতম আদানি]
এদিকে, কুন্তল ঘোষের সঙ্গে হুগলির তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের টাকা লেনদেন করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ব্যাপারে দু’জনের মধ্যে হোয়াটস অ্যাপে চ্যাট হলেও সেগুলি মুছে ফেলা হয়। আবার আরও কয়েকজন যুব নেতা ও নেত্রীর কাছেও নিয়োগ দুর্নীতির টাকা গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ব্যাপারগুলি যাচাই ও আরও তথ্য পেতে বুধবার শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি তলব করে জেরা করবে। এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইডি মামলা থেকে অব্যহতির আবেদনের বিরোধিতা করে ইডি এফিডেফিট আকারে বিশেষ সিবিআই আদালতে নথি জমা দেয়। পার্থর আইনজীবীরা উত্তর দেওয়ার সময় চান। এদিন পার্থর আইনজীবীরা জামিনের আবেদন জানালেও উত্তর দেওয়র জন্য ইডি সময় চায়। ১৪ ফেব্রুয়ারি দু’টি আবেদনেরই শুনানির নির্দেশ দেন বিচারক।
চিটফান্ড কর্তা গোপাল দলপতিকে তাপস মণ্ডলই বলেছিলেন ইডির সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এদিন গোপাল সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দপ্তরে আসেন। সঙ্গে আসেন তাপসও। ইডির সূত্র জানিয়েছে, গোপাল আধিকারিকদের জানান, যতই কোটি টাকার কথা বলা হোক না কেন, তিনি এই ব্যাপারে কিছু জানতেন না। মাত্র একবার লাখ তিনেক টাকা তাঁকে কুন্তল ও তাপস ‘কমিশন’ বাবদ দিয়েছিলেন। ব্যাংকের লেনদেনের মাধ্যমেই তাঁর অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল ওই টাকা। নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পাচারে তাঁর কোনও হাত নেই ও তাঁর মাধ্যমে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা মানিক ভট্টাচার্য কোনও টাকা পাননি বলে দাবি গোপালের।
[আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারি মাসে কোন কোন দিন বন্ধ থাকবে ব্যাংক? জেনে নিন তালিকা]
যদিও ইডির কাছে খবর, চিট ফান্ডের মাধ্যমেই তাপসের সঙ্গে গোপালের পরিচয়। নিয়োগ দুর্নীতির কয়েক কোটি টাকা কুন্তল ও তাপসের মাধ্যমে গোপালের চিট ফান্ডে লগ্নি করা হয়েছিল। সেই চিট ফান্ড থেকে কালো টাকা সাদা হয়ে ফের অন্য কয়েকটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে যেত। ওই অ্যাকাউন্টগুলি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যর সংস্থার কি না, সেই তথ্য ইডি খতিয়ে দেখছে। ইডির মতে, সরাসরির বদলে গোপালের চিট ফান্ড সংস্থা থেকে ঘুরপথে টাকা যেত পার্থ-মানিকদের কাছে। ফের গোপাল দলপতিকে জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে ইডি।