১৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একটি মেয়ে ফিরে পেল পরিবার, এআই প্রযুক্তির দৌলতে। কিন্তু এআই কি শুধুই নিরঙ্কুশ ভাল!
সোশ্যাল মিডিয়ার বিবর্তনের উপর তাত্ত্বিক উপস্থাপনার শেষ নেই। এই বিবর্তন আসলে চরিত্রগত রূপান্তরের কথা বলে। যা পরিসংখ্যান দিয়ে, ব্যবহারকারীর ব্যবহার-বিধির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ডেটা ধরে, নির্ণয় করা যেতে পারে। আবার তা করা হতে পারে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এহ বাহ্য, আমরা দিকনির্দেশ করতে পারি সেই গ্রন্থিতে, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ার ধারাবাহিক বদলকে ব্যক্তিগত স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতার চলমানতায় ফেলা সম্ভব।
যেমন, প্রথম দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের আগ্রহ ছিল সংযোগ-রক্ষা ও বন্ধুত্ব পাতানোর জন্য। সহজ একটি যুক্তি প্রায় প্রত্যেকেই রাখত: পুরনো বন্ধু, বা ফেলে আসা পাড়া, বা না-দেখা আত্মীয়স্বজনকে যদি আবিষ্কার করে ফেলা যায়, মন্দ কী! এবং এই যুক্তিটি আদৌ ভুল ছিল না। যে-বন্ধুনি বিয়ে করে কানাডায়, তাকে সোশ্যাল মিডিয়া পাইয়ে দিয়েছে। যে-বন্ধু পরীক্ষায় খারাপ ফল করে বন্ধুমহল থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, একদিন সোশ্যাল মিডিয়া তাকেও ফিরিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠিত স্টার্ট-আপ কোম্পানির সিইও করে। বন্ধুত্বের ওম, সম্পর্কের বুনিয়াদ, হারানো ও প্রাপ্তির খেরোর খাতায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই সময়ের অগ্রগতির উল্কাগতি আঁকা রয়েছে বইকি। এ যেন অনেকখানি আগের শতকের টেস্ট ক্রিকেটের মহিমার মতো। ঢিমেতাল, হালকা মেজাজ। বাইরে অবশ্য। মাঠে যে ব্যাট করছে, বা যে করছে বল, তারা মনঃসংযোগের চুড়োয়। প্রতিভা, পরিশ্রম ও ধারাবাহিক আগ্রাসনের শেষ পরিচয় টেস্ট ক্রিকেটের সাফল্য। 'বাজবল কনসেপ্ট' কখনও টেস্ট ক্রিকেটে পদাপর্ণ করবে, স্বপ্নেরও অতীত ছিল। কিন্তু তা সত্য হয়েছে। তেমনই সোশ্যাল মিডিয়ার চরিত্র এত বিচিত্রভাবে বদলেছে যে, এখন চেনাজানার বাইরের কাউকে পাওয়া বরং অনেক বেশি দুরূহ। অথচ এই পরিচয়ের আঠা নেহাত মামুলি। নেহাত গোদা তথ্য বা শিবির বিভাজনের সম্পর্কে আবদ্ধ। আমরা বিশ্বকে এতই বেশি চিনে নিয়েছি যে, মহল্লার অনেককে না-চিনলেও মাথায় বেড়ে উঠতে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপন অস্তিত্বের স্বরূপ জাহির করতে আটকাচ্ছে না। এত ফেনা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়, দূর থেকে দেখে মনে হয়, মহাসমুদ্র কলকলাচ্ছে যেন।
সম্প্রতি পাকিস্তানে একটি ঘটনা ঘটেছে। কিরণ নামের একটি মেয়ে বছর ১৭ আগে আইসক্রিম কিনতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। তখন কিরণ ১০। অনাথালয়ে তার আশ্রয় জোটে। সদ্য হোমের তরফে নাবিল আহমেদ বলে একজন সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিটি এক্সপার্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, পুলিশের রিপোর্টে থাকা কিরণের শৈশবের ছবি ও বর্তমান ছবির তুল্যমূল্য বিশ্লেষণ করে, কিরণের পরিবারকে খুঁজে পান। কিরণ অতএব ফিরে পেল পরিবার। এআইয়ের রাঙা চোখের অক্টোপাস হয়ে ওঠা যখন ভয় পাইয়ে দেয় প্রতিটি পলে, তখন এমন খবর আশাও জাগায়। তবে, সোশ্যাল মিডিয়ার মতো এই এআই-ও কতখানি বদলাবে, তা দেখার।
