বিয়ে সেকেলে ধারণা? বিয়ে নিয়ে মন্তব্য করে আবার বিতর্কে জড়িয়েছেন অভিনেত্রী-সাংসদ জয়া বচ্চন। এই প্রজন্মই বা কী ভাবছে?
মুখের উপর জবাব দিতে জুড়ি নেই জয়া বচ্চনের। নানা সময় এই অভিনেত্রী-সাংসদের মন্তব্য ও আচরণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আবারও বিতর্কিত মন্তব্যে শিরোনামে জয়া। 'উই দ্য উইমেন মুম্বই' পর্বে বরখা দত্ত-র প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মন্তব্য, 'বিয়ে সেকেলে ধারণা' এবং তিনি চান না, নাতনি নব্যার বিয়ে হোক। তিনি আরও বলেন যে, "সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করার জন্য আইনি স্ট্যাম্প আর অপরিহার্য নয়।" বিয়েকে তিনি 'দিল্লি কা লাড্ডু'-র সঙ্গেও তুলনা করেছেন। জয়ার মন্তব্য বিয়ে নিয়ে ফের উসকে দিয়েছে বিতর্ক।
এটা ঠিকই যে, সমাজবদলে সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা নেয় তরুণ প্রজন্ম। সমাজ যত আধুনিক হচ্ছে, ততই বদলাচ্ছে সম্পর্কের সমীকরণও। বিয়ে নয়, নতুন প্রজন্মের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য 'সহবাস' বা লিভ ইন। সম্প্রতি বিবাহ, সম্পর্ক বা সহবাসের মতো বিষয় নিয়ে একটি জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপের করা সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বাস্তবেও চারপাশে তেমনই ট্রেন্ড এখন জনপ্রিয়। নতুন প্রজন্মের দাবি, ভবিষ্যতে যদি বিবাহিত জীবন কাটাতেই হয়, তবে এই সহবাস একে-অপরকে বুঝে নিতেও সাহায্য করবে। অন্য দিকে, তিরিশের বেশি বয়সি প্রায় ৫৫ শতাংশ ব্যক্তি আগ্রহী বিয়েতে। তরুণ প্রজন্ম পেশাদার জীবনের চাপ, সম্পর্কে টানাপোড়েন, সম্ভাব্য বিচ্ছেদ নিয়ে আইনি জটিলতা, সন্তান প্রতিপালনের গুরুদায়িত্বের মতো নানা বিষয়ে ঢুকতে চায় না। বহু তরুণী মনে করে, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হয়ে বিয়ে করা মানে আর-একজনের ওপর নির্ভর করে জীবন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া। যা ভবিষ্যতে সুখকর না-ও হতে পারে। আবার তরুণদের অনেকে মনে করে বিয়ে করা মানে অনেক বড় দায়িত্ব ও এটি তাদের স্বাধীনতা খর্ব করবে। বিয়ে করে যে অনেকে সুখে নেই, সেটাও মনে করিয়ে দেয় তারা। আবার উল্টোটাও সত্যি। সমাজে বিয়েকে একটি সামাজিক বন্ধন হিসাবে ধরা হয়। হাজার হাজার বছর ধরে সভ্যতার বিকাশের একটা বড় ধারা হিসাবে বিয়ের মতো সংস্কৃতি প্রতিটি সমাজেই মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। এ দেশ শুধু নয়, বিশ্বের সমস্ত দেশেই বিয়েকে 'পবিত্র বন্ধন' হিসাবে মেনে চলা হয়। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার গুরুত্ব নিঃসন্দেহে কমেছে। কিন্তু একেবারে 'সেকেলে ধারণা' বলে এমন একটি প্রথাকে উড়িয়ে দেওয়াও বোধহয় সম্ভব নয়। বিয়ে না কি সহবাস, নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী যে-কোনও মানুষ কোনও একটি বেছে নিতেই পারে।
তবে সম্পর্কের আঙ্গিক যা-ই হোক না কেন, তাতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা-বিশ্বাস-ভালবাসা না থাকলে, তা অর্থহীন। এটা বলা চলে, বিয়ের নামে যে-ধরনের প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি চলে আসছে, তার বদল ও আধুনিকীকরণ জরুরি। যাতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম অধিকার, সম্মান রক্ষিত হবে। কিন্তু 'বিয়ে' নামক প্রথা সেকেলে এবং তা অবসান হলেও চলে- এমন ধারণা অতিসরলীকরণ ছাড়া কিছুই নয়। তরুণ প্রজন্ম তো সমসত্ত্ব ভাবনায় না-ও চলতে পারে!
