ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বা তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরে লাইকের আশা করবেন, এটা হতে পারে না। সমাজমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের স্কিল আলাদা।
স্মৃতি মন্ধানা, পলাশ মুচ্ছল। সেলিব্রেটি জুড়ি। গত সপ্তাহে ধুমধাম করে বিয়ের কথা ছিল। কিন্তু স্মৃতির বাবার অসুস্থতার জেরে তা স্থগিত হয়ে যায়। তারপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয় এক রহস্যময় তরুণীর পোস্ট। পলাশ নাকি স্মৃতিকে ঠকাচ্ছেন। ব্যস, আর যায় কোথায়! সমাজমাধ্যমে বসে গেল বিচারের আসর। কারও আঙুল পলাশের দিকে। কেউ-কেউ আবার ‘পোস্ট’ করা তরুণী ম্যারি ডি’কোস্টাকে নিশানা করতে শুরু করে দিলেন। দুই ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক ও রসায়ন নিয়ে সমাজমাধ্যমে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান? চুলোয় যাক।
মধ্যপ্রদেশে থাকেন ঋষভ রাজপুত এবং সোনালি চোকসি। এগারো বছরের প্রেম পরিণতি পেয়েছে বিয়েতে। কিন্তু তাঁদের বিয়ের ছবি হঠাৎ করেই আলোচনায়। কারণ, সোনালি ফরসা, সুন্দরী। অন্যদিকে, ঋষভ কালো, সুপুরুষের চলতি ধারণার সঙ্গে খাপ খান না। ব্যস, সমাজমাধ্যমে তাঁদের নিয়ে রসিকতা, অশ্লীল মন্তব্যের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। নেটাগরিকদের একাংশ তাঁদের নিয়ে অশ্লীল এবং চটুল মন্তব্যের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। দু’জন মানুষ পরস্পরের উপর আস্থা রেখে ‘এক’ হয়েছেন। এমন নয় যে, তাঁরা পরস্পরকে চেনেন না, দেখেননি। ভালবেসে বিয়ে করেছেন। তাতে বাকি সমাজের সমস্যা কোথায়? কিন্তু অপরিচিত কারও সম্পর্কে কটু মন্তব্য করা, জেনে বা না-জেনে, নেতিবাচক ভাবনা থেকে অন্যদের অপমান করাকে যে এক শ্রেণির মানুষ নিজেদের ‘অধিকার’ বলে মনে করেন। কেন সুন্দরী সোনালি ‘অসুন্দর’ ঋষভকে বিয়ে করেছেন, তা এখন নেটাগরিকদের আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। দু’জনের একে-অপরকে বিয়ে করার মনগড়া কারণ দিতেও শুরু করেছেন তাঁরা। এই রোগ যে সহজে শুধরানোর নয়।
আসলে, এ এক মারাত্মক ব্যাধি, মানসিক অসুস্থতা। এবং সমস্যা দু’-তরফেই। যে-মুহূর্তে কেউ ব্যক্তিগত জীবনকে সমাজমাধ্যমে ‘পাবলিক’ করে দেবেন, তাঁকে এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবেই। আপনি কী খাচ্ছেন, কী পরছেন, কার সঙ্গে কোথায় ঘুরছেন– নানা ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি, তথ্য পাঁচজনের সামনে তুলে ধরে লাইকের আশা করবেন, আর ‘নেতিবাচক’ মন্তব্য এলে মুখ ‘কালো’ করবেন, এটা হতে পারে না। নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন অন্তরালে রাখাই ছিল দস্তুর। কিন্তু সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়ার বাসনা সেই পরিসরটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। কখনও তা হয়ে ওঠে অসহ্য, অশ্লীলও।
আবার, সমাজমাধ্যমে অপরিচিত কারও ওয়ালে ঢুকে নোংরা মন্তব্য করাও এক শ্রেণির নেটিজেনদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। তাঁদের ‘লক্ষ্য’ বিনোদন জগতের তারকা, খেলোয়াড়, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কখনও বা সুন্দরী মহিলারা। যেমন, সম্প্রতি এভাবেই হেনস্তা শিকার হয়েছেন ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁরা ভুলে যান, এই ধরনের আচরণ আদতে অপরাধ। যার শাস্তিও হতে পারে বড় ধরনের। তাই দু’-তরফেই সংযমের প্রত্যাশা থাকবে।
