আমেরিকার উন্নয়ন-যজ্ঞে শামিল করতে এক সময় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তৃতীয় বিশ্বের মেধাবীদের। এখন মার্কিন প্রশাসন দায় ঝেড়ে ফেললে চলবে?
ভারতীয়দের আমেরিকার বাসিন্দা হওয়ার স্বপ্নে কি এবার চিরতরে কাঁটা পড়তে চলেছে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ ফতোয়ার পর এই প্রশ্ন বড় করে দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, এবার থেকে তৃতীয় বিশ্বর নাগরিকদের জন্য আমেরিকার দরজা পুরোপুরি বন্ধ। নিজের দেশে কাজ জোগাড়ের চেষ্টা না-করে আমেরিকায় চলে যাওয়ার যে-প্রবণতা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির নাগরিকদের, তাকে আর কোনওভাবেই প্রশ্রয় দেবে না হোয়াইট হাউস। এমনকী, যারা ইতিমধ্যেই আমেরিকার ‘স্থায়ী’ বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে তাদের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।
ট্রাম্পের এমত মনোভাব নতুন নয়। অভিবাসীদের তাড়ানোর স্লোগান দিয়েই তিনি দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে এসেছেন। ভোটে জেতার পর থেকে অভিবাসীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। শুধু এই অভিবাসীদের সংকটের কথা বলে নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে গেলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি। কয়েক দিন আগে মামদানির সঙ্গে সন্ধি করে নিলেও, ট্রাম্প ফের ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন, হোয়াইট হাউসের অদূরে আফগান যুবকের ছোড়া গুলিতে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সাদা চামড়ার যুবতী কর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনায়। ঘটনাটি মর্মান্তিক ও নিন্দনীয়। কিন্তু এই ঘটনার জন্য ট্রাম্প নিশানায় নিয়ে এসেছেন সে-দেশে বসবাসকারী তৃতীয় বিশ্বর সমস্ত মানুষকে। ইতিমধ্যেই আফগানদের জন্য মার্কিন ভিসা ‘নিষিদ্ধ’। এবার কোপ পড়তে চলছে আফ্রিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের নাগরিকদের আমেরিকা পাড়ির স্বপ্নে।
ট্রাম্পের নতুন ঘোষণার প্রভাব সারা বিশ্বেই ব্যাপকভাবে পড়বে। ইউরোপের বিভিন্ন
দেশেও এশিয়া ও আফ্রিকার অভিবাসীদের নিয়ে বিরূপ মনোভাব রয়েছে। এসব দেশের অভিবাসী-বিরোধী শক্তি ট্রাম্পের নয়া ঘোষণায় আরও শক্তি পাবে। ট্রাম্প তঁার মনোভাব খুব স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বের বার্থ রাষ্ট্রগুলির বেকারত্ব, আর্থিক ও সামাজিক দুর্দশার দায় কেন মার্কিন নাগরিকরা বহন করবেন? ট্রাম্প ভুলে যাচ্ছেন, পরিষেবা পেলে তার দায় গ্রহণ করতে হয়। আমেরিকার উন্নয়ন-যজ্ঞে শামিল করতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর পর থেকে পালে পালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তৃতীয় বিশ্বের মেধাবীদের। এখন এদের দায় ঝেড়ে ফেললে চলবে? ঘাতক আফগান যুবকটিও এক সময় মার্কিন গোয়েন্দাবাহিনীর হয়ে চরবৃত্তি করেছিল। তবেই সে আমেরিকায় থাকার ছাড়পত্র পায়।
ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, যাদের তঁারা সম্পদ মনে করবেন, তাদের আমেরিকায় রেখে দেবেন। বাকিদের বিদায় নিতে হবে। ভারতের যে-যুবকরা যে কোনওভাবেই হোক উন্নত বিশ্বের বাসিন্দা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন– তাদের এবার সচেতন হতে হবে। বঁাচতে গেলে নিজের দেশ গঠনের কাজে হাত লাগানো ছাড়া ‘বিকল্প’ কিছু নেই।
