shono
Advertisement
Constitution

‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার দাবি! বিভাজনের নতুন প্রয়াস?

এই দাবির রাজনৈতিক তাৎপর্য এখন জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছে।
Published By: Biswadip DeyPosted: 03:22 PM Jul 08, 2025Updated: 03:22 PM Jul 08, 2025

‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি সংবিধান থেকে বাদ দিতে চাইছেন কেন দত্তাত্রেয় হোসাবলে! রাজনৈতিক বিভাজনের নব প্রয়াস?

Advertisement

ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় থাকা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি নিয়ে ফের বিতর্ক উঠেছে। এবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সাধারণ সম্পাদক, দত্তাত্রেয় হোসাবলে, প্রকাশ্যে এই শব্দ দু’টি বাদ দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। ফলে আবার সেই বিতর্কটি অন‌্য মাত্রা পেয়েছে। তঁার এই দাবির রাজনৈতিক তাৎপর্য এখন জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি সত্যিই কোনও আদর্শগত প্রচেষ্টা, না কি দেশের প্রগতিশীল ও ঐতিহাসিক ঐক্যবদ্ধ সত্তাকে খণ্ডিত করার কৌশল?

প্রসঙ্গত, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি প্রস্তাবনায় যুক্ত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে, ‘জরুরি অবস্থা’-র সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে, ৪২তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এরপর ১৯৭৭ সালে যখন জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসে, যার মধ্যে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ নেতারাও ছিলেন, তঁারা অন্যান্য বহু সংশোধন বাতিল করলেও এই দু’টি শব্দ বজায় রেখেছিলেন। অর্থাৎ রাজনৈতিক মতভেদ সত্ত্বেও, তখনও এই শব্দ দু’টি নিয়ে একটি মৌলিক ঐকমত্য ছিল বলেই ধরে নেওয়া যায়, যা এখনকার তুলনায় অনেক বেশি পরিণত ছিল।

এর আরও গভীরে গেলে বোঝা যায়, ভারতীয় রাষ্ট্রবোধের মূল সুরেই এই শব্দ দু’টি নানাভাবে জড়িত ছিল। তাই সংবিধানের মূল খসড়া-রচয়িতারা প্রস্তাবনায় আলাদা করে এই শব্দ ব্যবহার না-করলেও, তাদের চিন্তায়, এই মূল্যবোধগুলি সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হত। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এখানে কখনওই ধর্ম-বিরোধিতা নয়, বরং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সব ধর্মের প্রতি সমান মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ববোধ। এবং ‘সমাজতন্ত্র’ মানে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিরুদ্ধাচরণ নয়, বরং রাষ্ট্রের তরফে দারিদ্র দূরীকরণ ও সামাজিক ন্যায়ের প্রয়াস।

তবু, যখন এই শব্দগুলিকে ‘ভারতীয় সংস্কৃতি-বিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়, বা ‘ইন্দিরা গান্ধীর চাপিয়ে দেওয়া বিদেশি ধারণা’ বলে দাগানো হয়, তখন তা শুধু ইতিহাসবোধহীন নয়, আত্মপ্রবঞ্চনাও বটে। গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্র তো জন সংঘেরও ভিত্তির একটি অংশ ছিল। এমনকী, হিন্দুত্ববাদীরা ‘ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতা’-র বিরুদ্ধে সওয়াল করলেও, কখনও ‘সত্যকারের’ ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার হতে দ্বিধা করেননি। তাহলে এখন হঠাৎ করে এই শব্দ দু’টিকে ঝেড়ে ফেলার প্রবণতা কেন? এর নেপথ্যে কি আদর্শগত কোনও সংহত রূপরেখা আছে, না কি শুধুই রাজনৈতিক বিভাজনের প্রয়াস?

ভারতের সমস্যা এই দুই শব্দ নয়, ভারতের সমস্যা হল, বৈষম্য অনগ্রসরতা তার জনসংখ্যার বৃহৎ অংশকে গলা টিপে ধরছে। এই বাস্তব থেকে চোখ সরাতে চাইলে শুধু শব্দ নয়, সংবিধানের আত্মাই হারিয়ে যাবে। আরএসএস বা বিজেপি যদি সত্যিই দেশসেবা করতে চায়, তাহলে তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, এই সমস্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য দূর করা। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা বা শব্দ নিয়ে বিভাজনের পরিবর্তে একটা বাস্তবসম্মত, যুক্তিবাদী ও কল্যাণমুখী রাজনৈতিক পরিসর তৈরি করা। শব্দ নয়, কাজই শেষ কথা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় থাকা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি নিয়ে ফের বিতর্ক উঠেছে।
  • এবার আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক, দত্তাত্রেয় হোসাবলে, প্রকাশ্যে এই শব্দ দু’টি বাদ দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন।
  • ফলে আবার সেই বিতর্কটি অন‌্য মাত্রা পেয়েছে।
Advertisement