shono
Advertisement

Breaking News

Lionel Messi

দুঃখিত মেসি, ফুটবলপ্রেমী বাঙালির সঙ্গে এবার আপনার সাক্ষাৎ হল না!

ভবিষ্যতে কোনও যোগ্য আয়োজক মেসিকে নিয়ে এলেও কি এই আফসোস মিটবে?
Published By: Arpan DasPosted: 08:53 PM Dec 13, 2025Updated: 09:00 PM Dec 13, 2025

অর্পণ দাস: যেন যুদ্ধ শেষের কুরুক্ষেত্র! মাঠের মধ্যে ভেঙে পড়েছে অসংখ্য চেয়ার। যুবভারতীর অবস্থা দফারফা। এই মাঠে যে কীভাবে খেলা হবে? অনেক বলছেন, খেলা হওয়ার সম্ভাবনা কোথায়? এই দেশে তো লিগই বন্ধ। যুবভারতীর ওই যে অবস্থা, তা তো ভারতীয় ফুটবলের দুরবস্থার সমানুপাতিক। ইতিমধ্যেই জার্মানি-আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমগুলোতে ফলাও করে লেখা শুরু হয়েছে যুবভারতীর বিশৃঙ্খলা নিয়ে। আফসোসের বিষয় এটাই, যে বাংলা ভারতীয় ফুটবলের মক্কা, এক ঐতিহাসিক দিনে তার জন্য কলঙ্কের দাগ পড়ে গেল। কলকাতার ফুটবলপ্রেমী তথা এই দেশের একজন ফুটবলপ্রেমী হিসেবে মেসির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা ছাড়া আর কীই বা বলা যাবে।

Advertisement

বিশৃঙ্খলার দায় কার? অবশ্যই মূল উদ্যোক্তার। কয়েকমাস আগে থেকেই শতদ্রু দত্তের ফেসবুক পোস্টগুলো মেসিভক্তদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। এমনকী নেইমারকে আনার সম্ভাবনাও অকারণে উসকে দেওয়া হয়েছিল। যত সময় এগিয়েছে, তত সেই পোস্টগুলো হারিয়ে গিয়েছে। এদিকে চড়চড় করে বেড়েছে টিকিটের দাম। যে মানুষটা উদয়াস্ত খেটে সামান্য কিছু টাকা আয় করেন, তিনিও সেই সম্বল জমিয়ে রেখেছিলেন একটা দিনের জন্য। বহু প্রতীক্ষিত সেই দিনে যখন আর্জেন্টিনার 'রাজপুত্র' সাদা গাড়িটা করে যুবভারতীতে ঢুকছেন, তখনও কেউ জানত না আধ ঘণ্টা পরে ঠিক কী হতে চলেছে। তখনও অনেকের চোখে জল। আর্জেন্টিনা বা বার্সেলোনার জার্সি পরা মেসিভক্তরা হাউহাউ করে কাঁদছে। আধঘণ্টা পর সেই চোখগুলোতে রাগের আগুন। বহু দূর থেকে কোনও মতে মেসি দর্শন। স্বপ্নের নায়ক ক্রমশ দূর থেকে দূরে চলে যাচ্ছেন। পুরো ক্ষোভটা আছড়ে পড়ল যুবভারতীর চেয়ার, ফেন্সিং, মাঠ, গোলপোস্ট ইত্যাদির উপর।

সাধের যুবভারতী- যাঁরা ভারতীয় ফুটবলকে নিয়ে আজও স্বপ্ন দেখেন, তাঁরা জানেন গোধূলির আলোয় ফ্লাডলাইটটা জ্বলে উঠলে এই মাঠটা কতটা মায়াবী। সেই আলো আজও কত স্বপ্নকে হাসতে শেখায়। আবার সেই আলোয় চিকচিক করে কত চোখের জল। যে ফুটবল আজও বাঙালির শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখে, তার প্রাণকেন্দ্র এই যুবভারতী। মেসি-দর্শনে আসা সবাই হয়তো সেই ইতিহাস জানে না। কিন্তু যে ভালোবাসা তার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া, তার পথ ধরেই সে যুবভারতীমুখী হয়েছিল। এ যেন এক অদৃশ্য ব্যাটন। পেলে, মারাদোনা হয়ে মেসির মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ হত যুগের পর যুগ ধরে লিখে চলা সেই কাহিনি। বদলে যা পেল, তা লজ্জার, দুঃখের, হতাশার।

২০০৮ সালে মারাদোনায় মাতোয়ারা। বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে আগত এক 'অতিমানব' ফুটবলার এসে দেখে গিয়েছিলেন বাঙালি তাঁর মতোই আবেগপ্রবণ। হাসে-কাঁদে-রাগে। ২০১১-য় যুবভারতীতে তরুণ মেসির আবির্ভাব। মারাদোনার থেকে যেন উলটো পিঠের মানুষ। কিছুটা অন্তর্মুখী, কিছুটা খামখেয়ালি। তারপর গঙ্গায় অনেক জল বয়ে গিয়েছে। মেসি হেরেছেন একাধিকবার। তাঁর জন্য, তাঁর হয়ে বাঙালি কেঁদেছে। একদিন কামব্যাক হল। কোপা আমেরিকা থেকে বিশ্বকাপ জয়। বাঙালি সেদিনও কেঁদেছে- আনন্দাশ্রু। ২০১৪-র বিশ্বকাপ ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গের তিনবছর আগে মেসির প্রথম কলকাতা-দর্শন, আর বিশ্বকাপ জয়ের তিনবছর পর প্রত্যাবর্তন এক যোগসূত্রে বাঁধা পড়ে যেতে পারত। হল না। কারণ কী, কে দায়ী, দর্শকরা টাকা ফেরত পাবেন কি না, সেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আসল হল, বাঙালি মেসিকে পেয়েও পেল না। মেসিও প্রত্যাবর্তনে বাঙালিকে 'ভুল বুঝে' ফিরে গেলেন।

সবিনয়ে জানাই, এটা কলকাতা নয়। এটা বাঙালির ফুটবল সংস্কৃতি নয়। ফুটবল পাগল এই জাতি মেসিকে এতটাই ভালোবাসে যে আবেগের বহিঃপ্রকাশের জন্য হয়তো এরকম পথ বেছে নিয়েছে। 'অজুহাত' হিসেবে হয়তো এটুকুই দেওয়া যাবে। যে বাঙালি ব্রিটিশবিরোধিতার জন্য ফুটবলকে বেছে নেয়, যে বাঙালি দেশভাগের মতো যন্ত্রণার মলম খোঁজে ফুটবলে, সেই বাঙালিকে মেসি আরেকবার দেখে যেতে পারলেন না। হয়তো তিনি আবার কোনও একদিন যুবভারতীতে পা রাখবেন। সেদিন হয়তো একজন যোগ্য আয়োজক পুরো বিষয়টা তদারকি করবেন। আজকের দর্শকদের অনেকে যাবেন, অনেকেই যাবেন না। তসেই অনাগত ভবিষ্যতের জন্য এই ক্ষমাপ্রার্থনাটা তোলা রইল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • যেন যুদ্ধ শেষের কুরুক্ষেত্র! মাঠের মধ্যে ভেঙে পড়েছে অসংখ্য চেয়ার। যুবভারতীর অবস্থা দফারফা।
  • এই মাঠে যে কীভাবে খেলা হবে? অনেক বলছেন, খেলা হওয়ার সম্ভাবনা কোথায়? এই দেশে তো লিগই বন্ধ।
  • যুবভারতীর ওই যে অবস্থা, তা তো ভারতীয় ফুটবলের দুরবস্থার সমানুপাতিক।
Advertisement