প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পরে ধারাবাহিকের অভিনয়ে প্রত্যাবর্তন অর্জুন চক্রবর্তীর। কী বলছেন তিনি? শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
বেশ কয়েক বছর বাদে টেলিভিশনে ফিরলেন অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী। তাঁকে দেখা যাচ্ছে স্টার জলসার ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ ধারাবাহিকে। অনেক অভিনেতার ক্ষেত্রে দেখা যায় ছোট পর্দায় জনপ্রিয়তার শিখর ছুঁয়ে বড় পর্দায় পাকাপাকিভাবে কাজ শুরু করেন। আবার কেউ কেউ ছোট-বড় দুই পর্দাতেই ব্যালান্স করে কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে যান। সেই প্রসঙ্গেই কথা হচ্ছিল অর্জুনের সঙ্গে।
কেরিয়ারের এই পর্যায়ে এসে, ‘পিক’ পিরিয়ডে টেলিভিশনে ফেরার সিদ্ধান্ত কেন? প্রশ্ন শুনে অর্জুনের পালটা প্রশ্ন, “পিক’ পিরিয়ড কী অর্থে?” অভিনেতা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি করছেন। যেমন সামনে ‘দেবী চৌধুরানি’, এর আগে ‘অভিযাত্রিক’ করেছেন। তুঙ্গ সময়ই তো বলা যায়। অর্জুন হেসে বললেন, “অভিযাত্রিক’ বা ‘দেবী চৌধুরানি’ দর্শক কত ঘন ঘন দেখবেন বা দেখছেন? বাংলা এন্টারটেনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে সবটাই তো লিমিটেড। শুধু খুব ভালো কাজের জন্য বসে থাকলে, ওটা একটু বেশি বসা হয়ে যাচ্ছে। রোজগারের পার্সপেকটিভ-টাও নিশ্চয়ই একটা দিক। তাছাড়া অভিনয় করতে ভালো লাগে, অথচ বসে থাকতে হচ্ছে। সিরিয়ালের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের প্রাকটিস থাকে। থিয়েটারে যেমন অভিনয় রেগুলার অভ্যাসে থাকে। যেহেতু থিয়েটার করছি না এখন কিন্তু অভ্যাসটা জারি রাখতে চাই। একটা সিরিয়ালে গল্পের অনেকরকম রেঞ্জ, অনেকদিকে যায় গল্পটা, কখনওই একটা একরকমের চরিত্র হয়ে থাকে না- এগুলোই প্লাস পয়েন্ট, এগুলোই মাইনাস পয়েন্ট। তাই নিয়মিত কাজের মধ্যে থাকা এবং অভিনয়ের মধ্যে থাকার জন্যই টেলিভিশনে ফিরলাম। আর হ্যাঁ, ভালো কাজের জন্য টেলিভিশন ম্যানেজ করে করব। যেমন, ‘দেবী চৌধুরানি’-র জন্য আগে থেকে বলা রয়েছে, যাতে পরে ডেট নিয়ে সমস্যা না হয়। এই ভাবেই হাউস থেকে কষ্ট করে প্ল্যানগুলো করা এবং আমাকেও চাপটা নিতে হবে। ভালো কাজের জন্য কষ্ট তো সবাই করে।’
টেলিভিশনে অর্জুনের একটা স্টেডি ফ্যান ফলোয়িং আছে। ২০১০ সালে ‘গানের ওপারে’ দিয়ে শুরু, তারপর ভালো কাজের মধ্যে রয়েছে ‘আকাশছোঁয়া’, ‘জামাই রাজা’। সেই অনুরাগীদের সঙ্গে পাবেন তিনি ছোট পর্দায় প্রত্যাবর্তনে? সেই প্রসঙ্গ তুলতে অর্জুন বললেন, “একদমই তাই। এগজিসটিং ফ্যানদের মধ্যে অনেকেই ‘জামাই রাজা’র পর থেকে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বলে গিয়েছে, ‘আপনাকে আবার কবে টেলিভিশনে দেখব?’ অনেকে ‘গানের ওপারে’র পর থেকেও বলেছে। অবশ্যই ‘জামাই রাজা’ আর ‘গানের ওপারে’ এক নয়, আবার ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ও ‘জামাই রাজা’ নয়। এটাই মজা যে, আমরা অনেকরকম ভাবে এক্সপ্লোর করতে পারি। তবে এগজিসটিং ফ্যান বেস আছে। টেলিভিশন অবশ্যই অনেক সহজলভ্য। আর সবই এখন ওটিটি-তে আছে। টেলিভিশনটাও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রয়েছে। প্লাস যারা ওটিটি সাবস্ক্রিপশন নেয় না, তাদের জন্যও টেলিভিশন অ্যাকসিসেবল। ফলে রিচ-টা অনেক বেশি।”
[আরও পড়ুন: ‘খেলনা বাড়ি’ শেষ হতেই নয়া রূপে মিতুল, তিন বোনের গল্প নিয়ে আসছে ‘মিঠি ঝোরা’]
এখন প্রশ্ন, অর্জুনের ছোঁয়ায় ‘অনুরাগের ছোঁয়া’-য় কতটা বদল আসবে? অভিনেতা হেসে বলছেন, “সেটা দেখতে হবে। এই যে ধারাবাহিকটা পাঁচশো পর্ব হয়ে গিয়েছে, সেখানে আমার কোনও কৃতিত্ব নেই। আজ থেকে একবছর পরে হয়তো বোঝা যাবে, অর্জুন ঢোকার পর কী হয়েছে। আপাতত প্রতিক্রিয়া তো ভালো।” অর্জুন এখানে চিকিৎসকের চরিত্রে। সে বিদেশ থেকে দেশে আসে অনেক বছর পরে। এখানে একটা স্কুলে রিইউনিয়ন হয়, যেখানে নায়িকা ‘দীপা’র সঙ্গে তার দেখা হয়। অর্জুনের চরিত্রের জুনিয়র ছিল সে। এই দেখা হওয়ার পরে ধারাবাহিক কোনদিকে মোড় নেয়, দেখার।
‘দেবী চৌধুরানি’-র শুটিং শুরু জানুয়ারিতে। এছাড়া ‘প্রান্তিক’ ছবিটা তৈরি, যেখানে তিনি অন্যতম প্রধান চরিত্রে। অন্যদিকে সিনেমার ক্ষেত্রে অর্জুনের শেষ রিলিজ ছিল, ‘মিথ্যে প্রেমের গান’ এবং ‘খেলা যখন’। দুটো ছবিই একাংশের দর্শকের ভালো লাগলেও, সে অর্থে চলেনি। তার ফলে কি একটু খারাপলাগা ছিল? “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আপসেট ছিলাম। সাপোর্টিং ক্যারেক্টারে আমার ডেলিভার করা হিট বলতে ‘গুপ্তধন’ (আবিরলাল) আর ‘ব্যোমকেশ গোত্র’ (সত্যকাম)। আর ‘অভিযাত্রিক’ সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে কিন্তু সেটাও বক্স অফিস পায়নি। তো স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লাগে। তবে চরিত্রগুলো করে মজা পেয়েছি। আশা করছি, ‘গুপ্তধন’-এর আরও একটা পার্ট হবে। একটু বেছে কাজ করার সুযোগ এই সময়টা।” অকপটে বললেন অর্জুন। ওয়েব সিরিজও অর্জুন বেশ কয়েকটা করেছেন। আগামী দিনে ‘রাজনীতি’র সিক্যুয়েল হওয়ার কথা, সেটাতেও তিনি থাকবেন। এখন দেখার, টেলিভিশনে তাঁর নতুন জার্নি দর্শকের কেমন লাগে।