সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নাট্যকর্মী নিরুপম ভট্টাচার্যকে (Nirupam Bhattacharjya) হেনস্তার অভিযোগে সরব হলেন বাদশা মৈত্র, ঋদ্ধি সেন, কৌশিক সেন।। সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন ঋদ্ধি (Riddhi Sen)। এক দাবি জানিয়ে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বাদশা মৈত্র (Badsha Maitra)।
রানাঘাটের বিনপাড়া এলাকায় বাড়ি নিরুপম ভট্টাচার্যর। সোমবার তিনি সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে লিখেছিলেন, কিছু তৃণমূল (TMC) সমর্থক তাঁকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেছেন, তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে তাঁকে পাগল বলে দেগে দিয়ে অকথ্য গালিগালাজ করা হচ্ছে। এমনকী তাঁর বাবা-মাকে ডেকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ভারভারা রাও রচিত ‘কসাই’ কবিতা অবলম্বনে নাটক পরিবেশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। যে নাটক উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের কথা উঠে এসেছে। হাঁসখালির ধর্ষণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগ সে কারণেই এই ঘটনা।
এ বিষয়ে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বাদশা মৈত্র বলেন, “এই ঘটনা প্রথম নয়, এর আগে আমাদের অমিত সাহা এই একই অভিযোগ করেছিল। ঘটনাটিকে অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে কম বলা হয়। আসলে যে ছেলেটা থিয়েটার করে, এই পরিস্থিতির মধ্যে থিয়েটারের মতো একটা সুস্থ সংস্থাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, আমাদের উচিত তাঁকে আরও প্রমোট করা তাঁকে আরও সাপোর্ট দেওয়া যাতে সে ভাল করে কাজ করতে পারে। তা না করে যে কবিতা নিয়ে সে নাটকটা করেছে সেটা অসাধারণ সুন্দর একটা কবিতা ভারভারা রাওয়ের। আমার মনে হয় কোনও রাষ্ট্রের সমালোচনা কোনও নাটকে, সিনেমায়, কবিতায় থাকলে সেটা তো গণতান্ত্রিক অধিকার সেটা যেকোনও ফর্মে উঠে আসতে পারে।”
অভিনেতার কথায়, “কোনওভাবেই শাসক দলের বা তার আশ্রিত কারও এই অধিকার থাকে না গায়ের জোর বা মানসিকভাবে নির্যাতন করে শিল্পীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার। এই ঘটনা শুধু ওর উপর আক্রমণ নয় যাঁরা মুক্তমনে চিন্তা করছে রাষ্ট নিয়ে, রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে এই ভাবে বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমে তাঁদের প্রকাশ করতে চাইছে তাঁদের সবার উপর আক্রমণ। তাই এটাকে কোনও ছোট বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে না দেখে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত এবং অপরাধীদের অত্যন্ত দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”
[আরও পড়ুন: রিয়াকে যৌনকর্মী বলে কটাক্ষ? প্রশ্ন উঠতেই সাফাই সুশান্ত সিং রাজপুতের দিদির]
ফেসবুকে ঋদ্ধি নিজের দীর্ঘ বিবৃতিতে লেখেন, “নিরুপম ভট্টাচার্যের দোষ কি? সে সৎভাবে থিয়েটার করে, নিজের মতো করে থিয়েটারকে বদলানোর স্বপ্ন দেখে, সে তার নাটকে সত্যি কথা বলেl সেই জন্যই শাসকের কালো হাত টেনে ধরে তার কলার, ভেঙে দিতে চায় ডাকঘর (নিরুপমের নাট্য অনুশীলনের জায়গা)। কারণ ডাকঘরের বদলে আরও একটা ক্লাবঘর হলে সুবিধে অনেক, জমানো যাবে আরও কিছু চুরির টাকা, অশিক্ষা আর আর DJ box চালিয়ে নাচ। আর সংস্কৃতি বরাদ্দ থাকবে শুধু তাদের জন্যে, যারা মহানায়ক উত্তমকুমার সম্মান আর কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভালের প্রথম দিনে নীল সাদা রঙের সামিয়ানার তলায় থাকবেনl নাহলেই মার, চোখ রাঙানি…।”
এরপরই আবার ঋদ্ধি লেখেন, “আসলে রাজনীতি বরাবরই স্বাধীন মনের শিল্পীদের রগড়ে দিতে চায়। এই জঘন্য ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করতেই হবে। নিরুপম ভট্টাচার্য নিরাপদ নন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্রেফ রাজনীতি করেন বলে যদি তার বাসস্থানের বাইরে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের রাস্তা অর্ধেক আটকে একটা আস্ত পুলিশ ফোর্স সঙ্গে দু’টো ট্যাঙ্ক দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ২৪ ঘন্টা, তাহলে নিরুপম ভট্টাচার্যকেও প্রোটেকশন দিতে হবে, কারণ দু’জনেই মানুষ, তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।” ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন কৌশিক সেনও। তাঁকে স্বপ্নসন্ধানীর ফেস্টিভ্যালে আমন্ত্রণ জানান। এবং তাঁর ‘কসাই’ নাটকটি সেখানে মঞ্চস্থ করার অনুরোধ করেন।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য দেবাশিস কাহারের দাবি, “নিরুপম ভট্টাচার্যকে আমরা বড়দা বলে ডাকি। কিন্তু সব সময় উনি একটু মানসিক সমস্যায় থাকেন। অযথা যার তার সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। সেদিন রাতের ৪১ মিনিটের সিসিটিভিতে সবটাই রেকর্ডিং করা আছে। সিসিটিভি ক্যামেরা দেখলেই বোঝা যাবে ওখানে কোন ঝামেলা অশান্তি হয়নি।” নাট্যকর্মী চাঁদা তুলেই নাটক করেন। এর জন্য তাঁরা সহযোগিতা করেন বলেও জানান তিনি। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার এ নিয়ে মিটিং করবে রানাঘাট সংযুক্ত নাট্য সংসদ। তাতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারিত হবে।