দেব গোস্বামী, বোলপুর: শতবর্ষ পেরিয়েও বৌদ্ধ গবেষণায় মগ্ন সুনীতি কুমার পাঠক।জীবন শুরু মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে। আজ তিনি বৌদ্ধ দার্শনিক হিসেবে তার খ্যাতি জগৎজোড়া।আজও শান্তিনিকেতনে নিজের বাস ভবনে তিব্বতের সাহিত্য, ভাষা, ধর্ম, ও সংস্কৃতি নিয়ে নিরলস গবেষণা করে চলেছেন অধ্যাপক সুনীতি কুমার পাঠক।বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিব্বতী বিভাগে অধ্যাপনার দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। রবিবার, শান্তিনিকেতনের অগণিত পাঠক হিতাকাঙ্খী আশ্রমিক পড়ুয়া সহ শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্যরা শতবর্ষ উদযাপন করেন।শান্তিনিকেতনের অবনপল্লীর তাঁর আকাশদীপ বাসভবনেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মনোজ্ঞ স্মৃতিচারণ এর মধ্য দিয়েই শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই মনোমুগ্ধ শান্তিনিকেতনবাসী।
অধ্যাপক সুনীতি কুমার পাঠক, স্বদেশে এবং বিদেশে বৌদ্ধবিদ্যা চর্চায় পরিচিত এবং শ্রদ্ধেয় একটি নাম। শুধু বৌদ্ধবিদ্যাচর্চায় নয়, প্রাচীন ভারতের বহুসাধনালব্ধ বহুশতাব্দীর যে অতীত জ্ঞান তা তাঁর করতলে আমলকীবৎ। ভারতের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারসহ বহু সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। মহাবোধি সোসাইটি তাঁকে ভাণক এবং মঞ্জুশ্রী সম্মানে সম্মানিত করেছেন, এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে তিনি পেয়েছেন এস. সি. চক্রবর্তী স্বর্ণ পদকেও সন্মানিত করা হয়। ২০১৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন দেশিকোত্তম। তিব্বত ও বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থেই এক মাইলস্টোন তিনি।এই বিরল জ্ঞানতপস্বী ভারততত্ত্ব, সংস্কৃত, পালি-প্রাকৃতসহ আরও অনেক ভারতীয় ভাষার অধিকারী তিনি। বহুভাষাবিদ্ এই শিক্ষকভাগ্য ঈর্ষণীয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, সাতকড়ি মুখোপাধ্যায়, তান য়ুন সান, ভেরিয়ার এল্যুইন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন সুনীতিবাবুর প্রত্যক্ষ শিক্ষক। আজও তিব্বত নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গবেষগবেষকদের মধ্যে রয়েছে নিরন্তর কৌতুহল। অতীশ দীপঙ্করের মত বৌদ্ধ পন্ডিত বা পদ্মসম্ভবের মত বিখ্যাত তন্ত্র সাধক তিব্বতের দুর্গম পথে যাত্রা করেছিলেন।সেই উত্তরাধিকার নিজের গবেষণার মধ্যেই বহন করে চলেছেন শতবর্ষ পেরিয়েও সুনীতি কুমার পাঠক।
[আরও পড়ুন: ‘ক্ষমতায় এসে সনাতন হিন্দুদের জন্য বহু কাজ করেছেন’, মোদির প্রশংসা ‘সীতা’ দীপিকার মুখে]
শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি বলেন,”শান্তিনিকেতন আমার কাছে তৃতীয় পুরুষ। ১৯৫৪ সালে শান্তিনিকেতনে আসার পর থেকেই প্রেরণা পায়। পড়ুয়াদের নতুন প্রেরণা যোগানোর জন্যই আমার কাজ করার উদ্যম। তাঁদের কি করে কল্যাণ করা যায়।কি করে অভাব মেটানো যায়। সারা জীবন অগণিত পড়ুয়াতে নিয়েই থেকেছি।জীবন হলো সাধনা।” তিব্বতি ভাষা থেকে ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বই। সাহিত্য, ব্যাকরণ থেকে চিকিৎসা শাস্ত্র বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থ। এমনকী বহু প্রাচীন কাল থেকেই তিব্বতি ভাষায় প্রকাশিত হয়ে আসছে নানা ধরনের সংবাদপত্র। তিব্বতি হরফে এই সব পত্র-পত্রিকার সুবিশাল সংগ্রহ রয়েছে অধ্যাপক সুনীতি কুমার পাঠকের সুবিশাল নিজস্ব সংগ্রহে।তিব্বত ও বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থেই এক মাইলস্টোন তিনি। শতবর্ষ পেরিয়েও আজও একই কাজে মগ্ন রয়েছেন সুনীতি কুমার পাঠক।