shono
Advertisement

‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্তিতে লক্ষ্মীলাভের আশা বাড়ছে, দোল-হোলিতে ছৌ মুখোশে নতুনত্বের ছোঁয়া

'পদ্ম' সম্মান প্রাপ্ত শিল্পী নেপালচন্দ্র সূত্রধরের মূর্তি-সহ অ্যাকাডেমি, মিউজিয়ামের দাবি।
Posted: 05:36 PM Feb 05, 2024Updated: 02:25 PM Feb 06, 2024

সুমিত বিশ্বাস, চড়িদা (পুরুলিয়া): মানভূমের ঐতিহ্যবাহী ছৌ শিল্প এবার ‘পদ্মশ্রী’ (Padmasree) পেয়েছে। আর তা সম্মানের পাশাপাশি লক্ষ্মীলাভের আশা আরও বাড়িয়েছে। শিল্পীদের আশা, পদ্মশ্রী প্রাপ্তির পর এই হস্তশিল্পের বাণিজ্য আরও জমজমাট হবে। দোল, হোলির প্রাক্কালে তাই আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন পুরুলিয়ার (Purulia) অযোধ্যা পাহাড়তলির বাঘমুন্ডি ব্লকের মুখোশ গ্রাম চড়িদার শিল্পীরা। সেকাল-একালের সমন্বয়ে উদ্ভাবনী ভাবনায় মুখোশে আসছে নতুন নতুন রূপও। ছৌ নৃত্যে এই জেলার দুই শিল্পী আগে ‘পদ্মশ্রী’ পেলেও ছৌ মুখোশকে ঘিরে প্রথম দেশের সেরা সম্মান ঘরে তুলল পুরুলিয়ার এই মুখোশ গ্রাম। তাই এই গ্রাম চাইছে, পদ্মশ্রী গম্ভীর সিং মুড়ার যেমন পূর্ণায়ব মূর্তি (Statue) রয়েছে, তেমনই আরেক পদ্মশ্রী প্রাপ্ত নেপালচন্দ্র সূত্রধরেরও মূর্তি তৈরি হোক মুখোশ গ্রাম চড়িদায়।

Advertisement

আসলে অযোধ্যা (Ayodhya Hill)  পাহাড়তলির ওই মুখোশ গ্রাম যে ছৌ নৃত্য শিল্পকলার আঁতুড়ঘর। এই শিল্প বহু প্রাচীন হলেও ১৯৮১ সালে এই চড়িদার শিল্পী প্রয়াত গম্ভীর সিং মুড়া পদ্মশ্রী পাওয়ায় এই শিল্পকলা বাঘমুন্ডি (Bagmundi) ছাড়িয়ে দেশ এমনকি বিদেশেও সমাদৃত হয়। নৃত্যকলার সঙ্গে সঙ্গে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা রঙবাহারি মুখোশ চোখ টানতে থাকে। দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, মহিষাসুরের মতো হরেক রকম মুখোশে ছৌ নাচ ছাড়াও একটা আলাদা বাজার তৈরি হয়ে যায়। ঘর সাজানোর উপকরণ হয়ে ওঠে। আর এখন হোটেল, লজ, রিসর্ট, অতিথি আবাস, পর্যটক আবাসেও শোভা পাচ্ছে এই মুখোশ। এখন আর শুধু দুর্গা, মহিষাসুর, কার্তিক, গণেশে সীমাবদ্ধ নেই। আদিম জনজাতির পুরুষ-মহিলার মুখের ছবি যেমন মুখোশে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। তেমনই মুখোশে ফুটে উঠেছে গৌতম বুদ্ধ, কথাকলি, মোটু-পাতলুর মতো কার্টুনের নানা ছবি। যা দেখলে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।

মানব-মানবীর আদলে ছৌমুখোশ। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

[আরও পড়ুন: বাজেট অধিবেশন শুরুর দিনই অশান্তি, বিধানসভার সামনে বিক্ষোভ SLST প্রার্থীদের]

গম্ভীর সিং মুড়ার পদ্মশ্রী পাওয়ার দু বছরের মধ্যে বরাবাজারের আদাবোনা গ্রামের নেপাল মাহাতো ছৌ নৃত্যে পদ্মশ্রী পান। এরপর দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে ৪১ বছর পর পদ্মশ্রী ঘরে তোলে পুরুলিয়া। তবে এবার ছৌ নৃত্যের সঙ্গে যুক্ত সেই মুখোশের কারণে। জীবদ্দশায় সম্মান না পেলেও মরণোত্তর পদ্মশ্রী পেয়েছেন চড়িদার মুখোশ ও ছৌ শিল্পী নেপালচন্দ্র সূত্রধর। ফলে এই ছৌ মুখোশের কদর আরও বাড়বে। এমনই আশা মুখোশ গ্রামের শিল্পী-সহ মানুষজনদের।

দোল-হোলির আগে দিনরাত তৈরি হচ্ছে মুখোশ। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

এই গ্রামের মুখোশ শিল্পী জগদীশ সূত্রধর বলেন, “নেপাল চন্দ্র সূত্রধরের পদ্মশ্রী প্রাপ্তিতে ছৌ মুখোশ শিল্প যেন আরও সমৃদ্ধ হল। আগে দু’-দুবার ছৌ নাচে আমাদের জেলা পদ্মশ্রী পেলেও এই নাচের সঙ্গে যুক্ত মুখোশ শিল্পকলায় এই প্রথম পদ্মশ্রী এলো। আমাদের আশা, এই শিল্পকলা আরও সমৃদ্ধ হবে। এই হস্তশিল্পের বিক্রিবাটা আরও বাড়বে। সবে মিলিয়ে ছৌ মুখোশের বাণিজ্য আরও জমজমাট হবে। আজ পদ্মশ্রী প্রাপ্ত প্রয়াত গম্ভীর সিং মুড়া ও নেপাল চন্দ্র সূত্রধরের জন্যই তো মুখোশের এত কদর। এই মুখোশ বেচে আমাদের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। সংসার চলছে। হাতে অর্থ আসছে। আমরা স্বনির্ভর হয়েছি।”

ঐতিহ্যের মুখোশ গড়ে উঠছে চড়িদায়। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

এই মুখোশ গ্রামের আরেক শিল্পী জন্মেজয় সূত্রধর বলছেন, “সামনেই দোল-হোলি। আশা করছি ওই উৎসবকে সামনে রেখে মুখোশের বিক্রিবাটা আরও বাড়বে। পুজো থেকে শীতের পর্যটন মরশুমের বিক্রি ভালই হয়েছে। এবার আমরা বসন্ত উৎসবের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। কয়েকদিন ধরে পর্যটকরা গ্রামে এসে মুখোশ শিল্পে পদ্মশ্রীর কথা বলছেন। আমাদের বুকটা গর্বে ফুলে উঠছে।” আরেক ছৌ মুখোশ শিল্পী ত্রিগুণী সূত্রধর বলেন, “মুখোশে পদ্মশ্রী পুরস্কার এই হস্তশিল্পকে গর্বিত করেছে। এই শিল্পকলা আরও এগিয়ে যাবে। তাই তো আমরা সেকালের সঙ্গে একালের ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলছি। এখন ছৌ মুখোশে গৌতম বুদ্ধ, কথাকলি, মোটু-পাতলুর মত কার্টুনের চরিত্র তুলে আনা হচ্ছে। যা দোল-হোলিতে অন্যতম আকর্ষণ হবে।”

[আরও পড়ুন: দামে কম, মানে ভালো, সুস্বাদু টিফিনের ‘সেরা ঠিকানা’ কলকাতা পুরসভার ক্যান্টিন]

মুখোশ শিল্পী তথা নেপালচন্দ্র সূত্রধরের বড় ছেলে কাঞ্চন সূত্রধরের কথায়, “পদ্মশ্রী গম্ভীর সিং মুড়ার যেমন স্ট্যাচু রয়েছে। তেমনই আরেক পদ্মশ্রী প্রাপ্ত আমার বাবা নেপালচন্দ্র সূত্রধরের পূর্ণায়ব মূর্তি হোক। তৈরি হোক এখানে ছৌ অ্যাকাডেমি। তৈরি হোক ছৌ ঘিরে মিউজিয়াম।” এখন এই মুখোশ শুধু চড়িদা গ্রামে নয়। পুরুলিয়া শহরের বিভিন্ন স্টল থেকে রাজ্যের একাধিক জেলার বিভিন্ন গ্রামীন হাট, জেলা গ্রামোন্নয়ন সংস্থার আওতায় থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের স্টল, স্টেশনে রেলের বিপণি, বিভিন্ন শপিং মল এবং বিশ্ব বাংলার স্টলেও মিলছে।

দেখুন ভিডিও:

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement