আকাশ মিশ্র: রামমন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে অযোধ্যায় সাজ সাজ রব। গোটা দেশ, গোটা দুনিয়া অধীর আগ্রহে বসে রয়েছেন রামলালাল প্রাণপ্রতিষ্ঠা দেখতে। রামবন্দনায় মেতে উঠেছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। ঠিক এই আবহেই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী পায়েল করের গাওয়া নজরুলগীতি শেয়ার করে রাম নিয়ে বাংলার আবেগকে ধরার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। শেয়ার করলেন নজরুলগীতি ‘মন জপ নাম।’ ক্যাপশনে লিখলেন, ”বাংলার মানুষের প্রভু রামের প্রতি অসীম ভক্তি রয়েছে। তার প্রমাণ নজরুলের গান মন জপ নাম।”
নজরুলের ‘মন জপ নাম’ গানেই রয়েছে শ্রীরঘুপতি রামের নাম। এই গানকেই রামবন্দনার জন্য তাই হয়তো বেছে নিয়েছেন মোদি। নজরুলের গানের হাত ধরেই বাংলার হাওয়ায় মিশিয়ে দিতে চাইলেন রামের আবেগ।
নজরুল লিখেছিলেন,
মন জপ নাম শ্রীরঘুপতি রাম নব দূর্বাদলশ্যাম নয়নাভিরাম!
সুরাসুর-কিন্নর-যোগী-মুনি-ঋষি-নর চরাচর যে নাম জপে অবিরাম॥
সজল-জলদ-নীল-নবঘন কান্তি
নয়নে করুণা, আননে প্রশান্তি।
নাম শরণে টুটে যায় শোক-তাপ-ভ্রান্তি, রূপ নেহারি মূরছিত কোটি কাম॥
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল সঙ্গীতশিল্পী পায়েল করের সঙ্গে। পায়েল জানালেন, ”মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমার গান শুনেছেন, আমার গান শেয়ার করেছেন সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি। শিল্পী হিসেবেও খুব খুশি।”
[আরও পড়ুন: রামের অযোধ্যায় হোটেল পাচ্ছেন না খোদ লক্ষ্মণ, ‘ক্ষুব্ধ’ সুনীল! মন্দির উদ্বোধনের আগেই ফিরতে হচ্ছে?]
নজরুলের ‘মন জপ নাম’ গানের মধ্যে দিয়ে মোদির রামবন্দনা নিয়ে বলতে গিয়ে পায়েল জানালেন, ”সকালেই প্রধানমন্ত্রীর ট্যুইটটা দেখলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার কথাটুকু বলতে পারি। আমি কাজী নজরুল ইসলামের গান গাইতে পছন্দ করি। নানা ধারার কাজী নজরুলের গান গাওয়ার চেষ্টা করি। নজরুল নিরন্তর গবেষণার বিষয়। তাঁর আদি সুর নিয়েও নানা মতান্তর রয়েছে। আমি প্রায় দুবছর হল আন্তর্জাতিক নজরুল মেলায় অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ পাই। সেখানে পারফর্ম করি। এই মেলায় নজরুলের মূল সুরকে খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। মোদিজি যেটা শেয়ার করেছেন, সেই অ্যালবামটা অনেক পুরনো। তখনও আমি নজরুলের গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হয়নি। ২০১৬ সালে এই অ্যালবামটি মুক্তি পেয়েছিল। যেখানে আমি সঙ্গীতের সেবক হিসেবে তিনজন কবি রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদের পূজা পর্যায়ের গানকে বেছে নিয়ে গান গাওয়ার চেষ্টা করেছি। এই কাজ আমার কাছে খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল।”
পায়েল আরও জানান, ”সঙ্গীতের মধ্যে তো একটা অন্তস্থ আধ্যাত্মিকতা থাকে। এই আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে মূর্তি পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। এই আধ্যাত্মিকতা সত্যকে অনুসন্ধান করার। সঙ্গীতের সেবক হিসেবে সেই স্থানটা পূরণ করতেই আমার ভালো লাগে। হয়তো এই গানে সেই জায়গাটাই রয়েছে। এটা পুরোটাই আমার ভাবনা।”
কয়েক মাস আগেই নজরুলের ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানকে বিকৃত করায় তুমুল কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান। বাংলার মানুষের প্রবল রোষের মুখে পড়েছিলেন তিনি। এবার রামমন্দির উদ্বোধনের আবহে গা ভাসিয়ে বাংলার আবগকে আবেগকে ধরতে, বাংলার সেই বিদ্রোহী কবিকেই বেছে নিলেন মোদি।