shono
Advertisement

Breaking News

Ravan Reloaded Review: অভিনব নয়, কিন্তু সাহসী ও পরীক্ষামূলক নাটক ‘রাবণ রিলোডেড’, পড়ুন রিভিউ

মাত্র চার দিনের মহড়ায় তৈরি নাটকটি।
Posted: 03:46 PM Sep 02, 2022Updated: 03:46 PM Sep 02, 2022

নির্মল ধর: কলকাতা সেন্টার অফ ক্রিয়েটিভিটির দোতলায় উঠেই বোঝা গেল গ্যালারি ধাঁচের সিঁড়িওয়ালা জায়গাটা দর্শকের আসন, সামনের খোলা জায়গাটুকু অস্থায়ী মঞ্চ বানানো হয়েছে। সেখানে রয়েছে একটা মোটরবাইক, নড়বড়ে একটা ভাঙাচোরা গাড়ির কঙ্কাল, কিছু তোবড়ানো ড্রাম, বাদিকে লাইভ বাজনদারদের বসার জায়গা। এভাবেই ‘রাবণ রিলোডেড’ (Ravan Reloaded) আবহ সেজে উঠেছিল।

Advertisement

না, মঞ্চে আলো ফেলার তেমন কোনো আয়োজন ছিল না, শুধু গ্যালারির ওপর থেকে কিছু আলো ফেলা হয়। আধো আলোআঁধারিতে ওই অভিনব মঞ্চে ঢুকেই দেখা গেল একজন তরুণ অভিনেতা একটি ছোট্ট টিভির সামনে বসে হিন্দি সিনেমা দেখছে আর ছবির ডায়ালগ বিড়বিড়িয়ে বলে চলেছে। নির্ধারিত সময় হতেই, তাঁর স্বর সোচ্চার হল। সে তখন ‘শোলে’ ছবির বিখ্যাত সংলাপ আর ‘ডিসকো ডান্সার’ ছবির গান নকল করে অভিনয় করছে। জানা গেল, তরুণটি অতি সাধারণ এক সাইকেল গ্যারেজের মালিকের সন্তান। নিবাস বাঁকিপুর জেলার ‘বরাভূত্নী’ গ্রাম। সেখানে তার বাবা ‘রাবণ লীলা’ পালায় রাবণের চরিত্রে অভিনয় করে বেশ নাম করেছে। সেটা দেখেই ছেলের ইচ্ছে হয়েছে, সেও অভিনেতা হবে।

তবে বাবার মতো রাবণ নয়, হিন্দি সিনেমার নায়ক শাহরুখ, অমিতাভ, মিঠুন, অক্ষয়, সলমনের মতো হওয়ার স্বপ্ন তার। প্রচুর টাকা রোজগার করে ছোট্ট বোনের বিয়ে দেবে তার বাইকওয়ালা প্রেমিকের সঙ্গে। বাবার নাম ‘রওশন’ করবে। কিন্তু স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যে দুস্তর ফাঁকের রহস্যটা তার সরল মনে অজানা ছিল।

[আরও পড়ুন: হিন্দি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করতে চলেছেন মিমি চক্রবর্তী! নায়ক কে?]

অনেক কষ্টে মুম্বই গিয়ে অডিশন নামের গোলকধাঁধানো জগৎ পেরিয়ে শেষপর্যন্ত ঠাঁই হল জেলখানায় (স্মাগলাদের দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে)। কার্যকারণে রাবণ নামের তরুণ সত্যিই হয়ে পড়ল প্রভাবশালী স্মাগলার। তারপর কী হল? সেটা অনুক্ত থাক। আগ্রহী দর্শক আগামী ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একবার স্বচক্ষে দেখে আসতে পারেন দেবাশিস রায় পরিচালিত এই অভিনব প্রযোজনাটি।

শুনলাম কলকাতা সেন্টার অফ ক্রিয়েটিভিটির এক নাট্য কর্মশালার প্রোডাক্ট এই নাটক। মাত্র চার দিনের মহড়ায় এবং পাঁচ দিনের মঞ্চসজ্জা দিয়ে দেবাশিস এই প্রযোজনাটি নামিয়েছেন। ওঁকে নাকি সেন্টার থেকে বলা হয়েছিল ‘রাবণ’কে নিয়ে কিছু একটা করতে হবে। হাতে কোনও তৈরি স্ক্রিপ্ট নেই, একেবারেই তাৎক্ষনিক ভাবনা এবং সেই ভাবনাকে মহলা দিতে দিতে প্রস্তুত করা এই ‘রাবণ রিলোডেড’। নাটকটির দ্বিতীয় অভিনয় হল গত ৩১ আগস্ট। তখনও দেবাশিস জানান, লিখিত কোনো স্ক্রিপ্ট নেই, সেদিন বিকেল পর্যন্ত সহকারী স্ক্রিপ্ট লেখক ‘এবং ইপ্সিতা’ কলম ধরেছেন সংলাপের জন্য।

অভিনেতারা যে কে কেমন আচরণ করবেন তারও সঠিক কোনও নির্দেশ ছিল না। প্রায় সবটাই হয়েছে তাৎক্ষনিক। তাহলে এটা বলতেই হচ্ছে ৮৬ জন আবেদনকারীর মধ্যে যে দশজনকে দেবাশিস বেছে নিয়েছেন, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকে সত্যিই বেশ গুণধর নাট্যপ্রেমী এবং অভিনয় সম্পর্কে যথেষ্ট শিক্ষা নিয়েছেন। নাটকের পরিচালনা সম্পর্কেও বেশ ওয়াকিবহাল। বিশেষ করে দু’জনের নাম করতেই হবে – বাবা ও ছেলের ভূমিকায় অভ্যুদয় দে এবং ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। মঞ্চের পুরো জায়গা জুড়ে তাঁদের ঘোরাফেরা, সংলাপ বলার দাপট, মুম্বই নায়কদের কপি করা অভিনয় দেখানো থেকে বাবার দুঃখ-কষ্টের প্রকাশ, কোনও জায়গায় এতটুকু খামতি নেই।

গোটা শরীর দিয়ে অভিনয় করেছেন ভাস্কর। শুধু ওঁরা দু’জন নন, শবনম ও ছোট বোনের চরিত্রের দুই শিল্পীও(মঞ্জিমা চট্টেোপাধ্যায় ও মৌমিতা দেবনাথ)। বেশ পরিপাটি তাঁদের কাজে। অবশ্য বাকিরাও কেউই পিছিয়ে থাকেননি। কারণ এটা এমন এক যৌথপ্রচেষ্টা যেখানে কোনও শিথিলতার জায়গা নেই। সকলেই যেন এক সুর, এক লয়ে বাঁধা। এবং সেই কাজটি করিয়ে নেবার কৃতিত্ব দিতেই হবে দেবাশিসকে। নাটকের শেষমুহূর্তটিও একাধারে দারুণ ট্র্যাজিক আবার এক নতুন ‘রাবণ’ আবিষ্কারের ইঙ্গিতও দেয়। এমন অলিখিত স্ক্রিপ্ট বাস্তব হয়েও যেন পরাবাস্তবের এক চেহারা নেয়। এখানেই এই প্রযোজনার সার্থকতা ও সাফল্য। এত সুন্দর প্রযোজনা দেখেও প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। আজকের বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি কেন প্রায় কোনো বাংলা প্রযোজনায় জায়গা পাচ্ছে না? সেটা কি মেরুদণ্ডহীনতার কারণে? কেনো? কেনো? উত্তর কে দেবে? দেবাশিস দিতে পারেন?

[আরও পড়ুন: সলমনের বিগ বসে নুসরত জাহান! জোর গুঞ্জন টলিউডে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement