চারুবাক: কিছু বছর আগেও শিক্ষকতা এবং চিকিৎসা – এই দু’টি পেশাকে সেবামূলক মনে করা হত। ডাক্তারদের এখনও মানুষের সেবায় ব্রতী হওয়ার শপথ নেওয়া হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক উন্নতি ঘটেছে। নানা দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধও আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু এখন বেশিরভাগই বাণিজ্যের লাভের তাগিদ হয়ে উঠেছে। সারা পৃথিবী জুড়ে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি, চিকিৎসার পণ্য সরবরাহকারীরা কিছু অসৎ, লোভী, দুর্নীতিবাজ ডাক্তারদের সঙ্গে জোট বেঁধে চিকিৎসা-সেবার নামে ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। চারদিকে আমরা যেসব ‘মাল্টি বা সুপার স্পেশ্যালিটি’ হাসপাতাল, সেবাকেন্দ্র গজিয়ে ওঠা দেখছি, তার নিচে অর্থগৃধ্নু ডাক্তার ও ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে কীভাবে শুধু শোষণ করে, ছোট ছোট শিশুদের জীবন বিপন্ন করে, তা খবরে দেখা যায়। পরিচালক সপ্তাশ্ব বসুর নতুন ছবি ‘ডঃ বক্সী’ (Doctor Bakshi) আজকের সমাজের এমন দুর্নীতিবাজ ডাক্তার ও ‘সেবাব্রতী’ ব্যবসায়ীদের কীর্তিকলাপ নিয়েই।
‘বক্সী’ শব্দটির পূর্ণাঙ্গ রূপ নাকি “Brain Altering Key By Stimulating Hyperreal Image”। এটা অবশ্য সপ্তাশ্ব ও চিত্রনাট্যকার অর্ণব ভৌমিকের মস্তিষ্ক ও কল্পনাপ্রসূত। বিজ্ঞান ও কল্পনার এক সন্ধিকরণ। ছবিতে ‘ডঃ বক্সী’ হয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chattopadhyay), যিনি তাঁর পূর্বসুরী ‘ডঃ বক্সী’ (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের) মন্ত্রশিষ্য। পরমব্রতর স্ত্রী মৃণালিনীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শুভশ্রী (Subhashree Ganguly)। দু’জনে মিলে বিভিন্ন হাসপাতাল নার্সিংহোম ঘুরে ঘুরে দুর্নীতিপরায়ণ ডাক্তারদের খুঁজে বার করেন এবং শাস্তির ব্যবস্থাও করেন। এই দুর্নীতির উৎপাটনের কাজে সরকারের সঙ্গে গোপন সন্ধিও রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘এমার্জেন্সি’ ছবি তৈরি করতে সমস্ত সম্পত্তি বন্ধক রেখেছেন! কঙ্গনার পোস্ট ঘিরে জল্পনা]
এই পর্যন্ত ছবির উদ্দেশ্য স্পষ্ট এবং সামাজিক দায়ও বলা যায়। কিন্তু সেজন্য রহস্য ও থ্রিলার ঘরানার যে কাঠামোতে গল্প বলা হয়েছে, সেটা অনেকাংশেই বাণিজ্যিক সমঝোতা হয়ে উঠেছে। বিষয়টি যে সিরিয়াসনেস দাবি করে, সেটি থেকে সরে গিয়ে নাটক ও ঘটনার প্যাঁচগুলোতে যেন থ্রিলার ধর্মকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এমনকী চিত্রনাট্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জায়গাটাও কিঞ্চিৎ জটিল মনে হতেই পারে দর্শকের। সাইক্লডিক আলোর মধ্যে কিছু দৃশ্যের অবতারণা, বিশেষ করে কল্পনার এক মর্গকে দেখানো কি কল্পবিজ্ঞান আর বিজ্ঞানের সঠিক মিশ্রণ হয়েছে? প্রশ্ন থেকে যায়।
চিত্রনাট্যের ঘোরালো প্যাঁচালো ব্যাপারটা প্রথম দিকে যতটা উপভোগ্য, শেষে দিকে ততটাই বিভ্রান্তির কারণ। ছবির শুরুতে গীতা থেকে যে শ্লোকটি শোনানো হল, সেই ধারাটি কিন্তু পরের দিকে আর বজায় রইল না। ঘটনার ধারাবাহিকতা সবসময় যৌক্তিকভাবে বোঝানো সম্ভব? হয়তো না। তবে এটা মানতেই হবে পরমব্রত এবং শুভশ্রী জুটি ‘বৌদি ক্যান্টিন’ থেকেই বেশ ‘জেল’ করে গিয়েছেন। দর্শক এঁদের পছন্দ করবেন। ছোট্ট একটি চরিত্রে বনি সেনগুপ্ত (Bonny Sengupta) মন্দ করেননি। নবারুণ বসুর আবহ থ্রিলার মেজাজ মেনেই তৈরি। প্রসেনজিৎ চৌধুরীর ক্যামেরা সপ্তাশ্ব বসুকে নিশ্চিতভাবে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে।
ছবি- ডঃ বক্সী
অভিনয়ে – পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, বনি সেনগুপ্ত, অক্ষয় কাপুর, দেবতনু, মাহি কর, রাহুল রায়
পরিচালনায় – সপ্তাশ্ব বসু