shono
Advertisement

‘জলের উপর পানি’র দর্শনে স্বীকৃতি, সাহিত্য অকাদেমি পেলেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী

উচ্ছ্বসিত বাংলা সাহিত্যপ্রেমীরা।
Posted: 09:13 PM Dec 20, 2023Updated: 09:13 PM Dec 20, 2023

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সেই ‘চতুষ্পাঠী’ থেকে ‘জলের উপর পানি’। বাংলা সাহিত্যের এক দীর্ঘ ঋদ্ধ যাত্রাপথ। অভিজ্ঞতা আর দর্শনের সংশ্লেষে জন্ম নেওয়া ধ্রুপদিয়ানা। পাঠকের অবারিত ভালোবাসা জড়িয়ে ছিল সে-যাত্রাপথের পরতে পরতে। এবার তা উজ্জ্বল হয়ে উঠল দেশের সাহিত্যমহলের অনন্য অভিধায়। সাহিত্য অকাদেমি পেলেন সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী। বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এ বড় আনন্দের দিন।

Advertisement

স্বপ্নময় চক্রবর্তীর সাহিত্য মানেই মানুষের অন্তর্জীবনের উদ্ভাস। কত না চরিত্র! কত কিসিমের চরিত্র তাঁর গল্পে, উপন্যাসে। আমাদের চেনা জীবনের বৃত্তের ভিতর যে কত অচেনা বৈচিত্র- তা বরাবর তুলে ধরেছে তাঁর কলম। বিশেষত নগর পেরিয়েও যে বৃহত্তর জীবন, সেই জীবনের নানা সন্ধি-অভিসন্ধি, গূঢ় অভীপ্সার প্রকাশ তাঁর লেখায়। পাঠক সেই সব গল্পের সামনাসামনি এসে চমকে উঠেছেন, অবাকও হয়েছেন। সমাজের যে বাস্তবতার ছবি এঁকেছেন স্বপ্নময়, তা আমাদের অজ্ঞাত থাকার কথা নয়। তবু যেন সাহিত্যিকের কলম তা ধরিয়ে না দিলে আমাদের চোখ ফোটে না। সেখানেই সফল স্বপ্নময়ের সাহিত্যকীর্তি। বরাবর তিনি মানুষের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছেন মানুষকে। অভ্যস্ত জীবনের সামনাসামনি এনে দাঁড় করিয়েছেন জীবনের অনভ্যস্ত দিককে। আর তাতে যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে জীবনের শোণিতপ্রবাহ, হৃদস্পন্দন। পাঠক সেই সব লেখার সামনে এসে প্রতিবার বিস্ময়ে খেয়াল করেছেন, বিপুলা এ-জীবন কত অতর্কিতই না হতে পারে!

[আরও পড়ুন: শুভেন্দুর আচমকা ‘হানা’! নিরাপত্তা আরও বাড়ছে নবান্নের]

 

স্বপ্নময়ের সাহিত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে বরাবরই রাজত্ব করেছে এই মানবজীবন। মানুষ তার সবরকম বৈচিত্র নিয়েই তাঁর সাহিত্যভুবনকে ভরিয়ে তুলেছে। যে মানুষ হেলাফেলায় বেঁচে আছে, সেই সব অকীর্তিতের জীবন এসে দাঁড়িয়েছে তাঁর সাহিত্যভাবনার মূলে। হেরে-যাওয়া অকিঞ্চিৎ মানুষই যে আখেরে মহাকালের চাকা ঘুরিয়ে নিয়ে যায়, এই বোধ ক্রমশ সঞ্চারিত হতে থাকে। সে ভূমিসূত্রে জড়িয়ে থাকা মানুষ হোক বা সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতের সংকট, নাগরিক বৃত্তের জীবন হোক বা রূপান্তরকামীদের দুনিয়া- স্বপ্নময়ের সাহিত্যে সব অর্থেই দেখা মেলে জীবনের বর্ণময় উদ্ভাসের। ধর্মজনিত ভেদের ঊর্ধ্বেও যে জীবনের মহত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত, মানুষ যে শেষ পর্যন্ত মানুষের হাতই প্রত্যাশা করে, এই কথাটাই বোধহয় তিনি বলে যেতে চান। আর তাই আমাদের ভাবনার চেনা বৃত্তে তিনি হাজির করেন সেইসব দেখা কিংবা কম দেখা মানুষদের- যাঁদের বেঁচে থাকা আসলে জীবনসংগ্রাম। আসলে সংগ্রামই জীবনের রসদ। স্বপ্নময়ের চরিত্ররা – গল্পে হোক বা উপন্যাসে – সেই সংগ্রামের কথাই বলে যায়। তা একাধারে চিরায়ত আবার মানুষের নিজস্ব ইতিহাসও। কর্মজীবনের নানা সূত্রে পাওয়া অভিজ্ঞতা আর জীবনবোধ তাঁর সাহিত্যকে দিয়েছে অন্য মাত্রা। বিশ্লেষণ, দৃষ্টিভঙ্গি, কখনও আবার সরস উপাস্থাপনায় স্বাদু তাঁর লেখা। কখনও আবার সে সবের পরতে পরতে মিশে গিয়েছে বাংলার আবহমান চালচিত্র, সংস্কৃতি। স্বপ্নময়ের সাহিত্য তাই শুধু মুগ্ধই করে না, তা ভাবায়। পাঠককে রত করে নিজ অণ্বেষণে।

‘জলের উপর পানি’ উপন্যাস যখন ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল, তখনই পাঠকের মন জয় করেছিল। সমকালীন সময়ের নিরিখে এই উপন্যাস যে দর্শনে পাঠককে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল তার গুরুত্ব অপরিসীম। ধ্রুপদী সেই উপন্যাসের জন্যই এল সাহিত্য অকাদেমির সম্মান। বাঙালি পাঠকের কাছে তিনি বরাবরই সমাদৃত। তাঁর গল্প এবং উপন্যাসের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকেন বাঙালি পাঠক। তাঁর এই সম্মানপ্রাপ্তি তাই সামগ্রিক ভাবে বাঙালি পাঠকদের জন্যই আনন্দের দিন।

[আরও পড়ুন: বড়দিনে গভীর রাত পর্যন্ত চলবে মেট্রো, টেটের দিনও বাড়তি পরিষেবা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement