দেব গোস্বামী, বোলপুর :স্মৃতি বিজড়িত আমোদপুর থেকে কাটোয়া পর্যন্ত লাভপুরের গঞ্জ বেয়ে ছোট লাইনে ট্রেন এখন উধাও। ছোট লাইনের বদলে পরিবর্তিত হয়েছে বড় রেল লাইন। নেই আর সেই লাভপুর। তবুও কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর আছেন গানে-নাটকের-সাহিত্য-আলোচনায়। তাঁর অমর সৃষ্টি লাভপুরবাসীকে সমৃদ্ধ করেছে। লাভপুর এবং সংলগ্ন এলাকার মানুষ তাঁদের সুখ-দুঃখের কথাই উঠে এসেছে তারাশঙ্করের সাহিত্যে।সেই হাঁসুলী বাঁক এখনও আছে। কোপাই নদী তেমনি বয়ে যায়। শুধু বনোয়ারি আর করালী এখন নেই। জমিদার শাসিত লাভপুর এখন পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে।বাংলার পর্যটন মানচিত্রে জুড়ছে নতুন নাম,সেজে উঠছে লাভপুর। বর্তমানে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি ভবন পরিণত হয়েছে ভূত বাংলোয়। চলছে সমাজ বিরোধীদেরআড্ডা,উঠছে প্রশ্ন। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ভবন, হাঁসুলি বাঁক আজ ভুলুণ্ঠিত। কার্যত অবহেলিত তাঁর জন্মভূমি লাভপুরই।
প্রসঙ্গত সাল ২০০৮, বাম শাসন। সেই বছরই শতবর্ষ সম্পুর্ণ করেছেন সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত সেই স্মৃতিতেই লাভপুরের তারামাডাঙ্গায় তৎকালীন লোকসভার অধ্যক্ষ তথা বোলপুর লোকসভার সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য সভার সদস্য মৃণাল সেনের অর্থানুকূল্যে নির্মিত হয় তারাশঙ্কর ভবন। উদ্দেশ্য, লাভপুরের বুকে তারাশঙ্কর সংগ্রহশালা নির্মাণ, ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁরই রচিত বিভিন্ন নাটক ও সিনেমা প্রদর্শনী। কিন্তু কোথায় সেসব।ভবন নির্মাণের পর কেটে গিয়েছে ১৫টা বছর। বাম জমান শেষ হয়ে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য শুরু হয়েছে তৃণমূল শাসন।রাজ্য জুড়ে কার্যত প্রবাহিত হচ্ছে উন্নয়নের জোয়ার। কিন্তু সেই জোয়ার থেকে কার্যত দূরেই দাঁড়িয়ে ভূত বাংলোয় পরিণত হয়েছে তারাশঙ্কর ভবন। রাত নামলেই যেখানে বসছে অসামাজিক ক্রিয়া কলাপ। ভেঙে ফেলা হয়েছে দরজা,জানলা। ধাত্রীদেবতার মধ্যে তৈরি হওয়া মিউজিয়ামের উদ্বোধন হয়েছে।লাভপুরকে পর্যটন হিসাবে গড়ে তুলতে শুধু লাভপুর শহরের নয় লাভপুর ব্লকে স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ সিংহের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে থাকা স্থাপত্য গুলির উন্নয়ন করা হয়েছে ইতিপূর্বেই। হাঁসুলিবাঁকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা সত্ত্বেও কার্যকরী কিছুই হয়নি বলছেন লাভপুরের বাসিন্দারা।
[আরও পড়ুন: ২১ জুলাই মিছিল কোন কোন পথে? কোন রাস্তায় চলবে গাড়ি? জেনে নিন এক নজরে]
স্থানীয় ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী বলেন,”ভবনটি মূলত তৈরি হয়েছিল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে, এবং জেলার অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে। কিন্তু বিভিন্ন আইনি জটিলতা থাকার কারনে সেই কাজ থমকে যায়। তবে বর্তমানে লাভপুরের সংস্কৃতি প্রেমী মানুষ সেই থমকে যাওয়া কাজকে পুনরায় শুরু করার চেষ্টা চলছে। তবে সরকারি ভাবে এই ভবন অধিগ্রহণ করলে সেটা ভালো হবে।
লাভপুরের অন্যতম সাহিত্যিক সুনীল পাল,পরিমল চট্টোপাধ্যায়, নাট্যকার পার্থপ্রদীপ সিংহ বলেন,”ভবনটি যখন নির্মাণ হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল তারাশঙ্কর সংগ্রহশালা হবে, অডিটোরিয়াম হবে। কিন্তু সেসব তো হলই না, বর্তমানে জায়গাটি ভুতুরে বাড়ির মত পরে আছে, সমাজ বিরোধীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়ে বেদখল হচ্ছে। তবে জায়গাটি কাজে লাগানো হোক। প্রয়োজনে সেখানে বীরভূমের লোকসংস্কৃতি বিষয়েও সংগ্রহশালা করা যেতে পারে। যদিও বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেন,”হাঁসুলি বাঁক নিয়ে সৌন্দর্যায়ন পরিকল্পনা পর্যটন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখেই সম্মতি এলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে। শতবার্ষিকী ভবনটি নিয়ে পূর্ববর্তী সময়ে একটি কমিটি বা ট্রাস্ট তৈরি করা হয়। এখন বর্তমানে তারা দেখভাল করছেন না। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। ভবিষ্যতে তারাশঙ্কর ভবনটি ঠিক মতো কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে সেক্ষেত্রে লাভপুরবাসীর গর্বের বিষয় হবে।”