shono
Advertisement

উজানস্রোতে নিজের কাছে ফেরার আশ্চর্য অভিযাত্রা, প্রকাশিত উজ্জ্বল সিনহার নতুন উপন্যাস

প্রকাশ অনুষ্ঠানে লেখকের সঙ্গী ব্রাত্য বসু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীজাত, প্রচেত গুপ্তরা।
Posted: 08:54 AM Jan 15, 2024Updated: 09:00 AM Jan 15, 2024

সরোজ দরবার: নাগরিক দোলাচলে বুকের ভিতর পুরনো দিঘি আর অমলতাস নিয়ে ঘোরে যে মানুষ, সময়তরুর শিকড় এসে তার কানে কানেই গল্প বলে। সে-গল্প ব্যক্তির হয়েও, যেন অতিক্রম করে যায় ব্যক্তিক পরিধি। আর শহর কলকাতা একদিন আবিষ্কার করে, নগরদোলায় ঘুরতে থাকা প্রতিটি মানুষের ভিতর বইতে থাকা উজানস্রোতের ফল্গুকে। উজ্জ্বল সিনহার ‘উজানযাত্রা’ উপন্যাসের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ এক অর্থে তাই যেন হয়ে ওঠে সকলেরই নিজের কাছে ফেরার বেহুলার ভেলা।

Advertisement

ছবি: কৌশিক দত্ত

১৪ জানুয়ারি, রবিবার অক্সফোর্ড বুকস্টোরে হল এই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। ‘আশ্চর্য অভিযাত্রা’– বলছিলেন বরেণ্য সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। স্বক্ষেত্রে কৃতী উজ্জ্বলবাবুর এটাই প্রথম উপন্যাস। তবে, উপন্যাসের ভাষা, গদ্যের ভিতর কবিতার অপূর্ব সঞ্চার এবং সর্বোপরি লেখকের জীবনবোধ যে অভিজ্ঞতায় জারিত, তা অতিক্রম করে যায় ‘নবীনের’ পরিধি। নিজের অভিজ্ঞতা ছেনে ছেনেই তিনি বলছিলেন, কীভাবে একটা গোটা জীবন হয়ে ওঠে টুকরো ‘আমি’র কোলাজ। আর সেই সূত্রেই ধরিয়ে দেন ‘উজানযাত্রা’র মোকামটিকে, বলেন, ‘জীবনের অভিঘাত আমাদের আন্দোলিত করে। বাবুর (উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র) মতো নানাভাবে আমরা ডুবে যাই– জলে, সমস্যায়, ভুলভ্রান্তিতে। আবার তার পাশেই থাকে ভেসে ওঠা। এ উপন্যাস সেই জীবনেই অবগাহন এবং আত্মানুসন্ধান। টুকরো টুকরো নিজেকে জুড়েই নকশা তৈরি করেছেন লেখক।’

উজ্জ্বলবাবুর উপন্যাস প্রসঙ্গে ফিরে ফিরে এসেছে ‘আত্মজৈবনিক’ শব্দটি। তবে, সেই আত্মকথনকে সার্বিক করে তুলতে পারাই লেখকের মুনশিয়ানা। এই উপন্যাসের পরতে তাই মিশে থাকে সম্ভাবনার সমূহ আলো। যা ধরিয়ে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্যকার-অভিনেতা ব্রাত্য বসু। বললেন, ‘এই উপন্যাস উত্তর-বিশ্বায়ন যুগের একজন মানুষের সময়ের জলে ডুবে হাঁসফাঁসের কথা বলে। বলে এক সার্বত্রিক রিজেকশনের কথা। আর তারই পাশে রয়ে যায় নিজেকে ঘিরে থাকা ছোট ছোট মায়া। বাবু হয়তো বর্জন করতে চায় যে সময়কে, তাকেই আলিঙ্গন করতে হয়। ‘উজ্জ্বল সিনহার উপন্যাস তাই ব্যক্তির অস্তিত্ব আর আত্মতার প্রতি মায়া এবং সংকট মোকাবিলা করতে করতেই যেন আধুনিকতার আবর্তে পড়া যে কোনও মানুষের যাপনের সর্বজনীনতা স্পর্শ করে।’

[আরও পড়ুন: ‘ফ্ল্যাশব্যাক’-এ কৌশিক-সৌরভের সঙ্গী বাংলাদেশের শবনম বুবলি, কোন গল্প বলবেন?]

এই সময়ের অগ্রগণ্য কথাসাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত তাই বলেন, এই উপন্যাস এক অর্থে ‘চেনা জীবনের অচেনা দলিল। বাবু চরিত্রের মধ্যে শুধু লেখক নন, পাঠকও আছেন।’ আবার এই যে ফুল-ফল-মফস্‌সল বুকের অন্দরে জমিয়ে বিশ্বে ঘোরা এক যুবকের অভিযাত্রা, তার ভিতর দিয়ে তো বাংলা সাহিত্যের মফস্‌সলি বৃত্তান্তের দিকটিও উন্মোচিত হয়। সেই কথাই উঠে এল মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা তথা বাংলা ভাষার আলোচক আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়। বঙ্কিম যুগ থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ হয়ে তিনি তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ী, অদ্বৈত মল্লবর্মন ছুঁয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কীভাবে উদ্ভূত সামাজিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার দরুন সাহিত্যে জন্ম নিয়েছিল এই মফসস্‌লি বয়ান, দেশভাগ পরবর্তী সময়ে তা খানিকটা হলেও অপসৃত।

ছবি: কৌশিক দত্ত

উজ্জ্বল সিনহার ‘উজানযাত্রা’ যেন সেই ঘরানাকে আর-একটু প্রসারিত করে। শুধু বিস্ময় আর মায়া নয়, তার সঙ্গেই থেকে যায় নিষ্ঠুরতার ইতিবৃত্তও। ‘নিরীহতা ও লোভ, নির্লোভতা ও ভয়’ একবৃত্তে থাকার দরুন বাংলা সাহিত্যের মফস্‌সল দর্শনে এই উপন্যাস যে নতুন আলো ফেলবে, এমনটাই প্রত্যয় তাঁর। অনুষ্ঠানে উপন্যাসের একটি অংশ পাঠ করেছিলেন কবি শ্রীজাত, আর তার আগে জানিয়ে দিয়েছিলেন মোক্ষম কথাটি– ‘এই লেখা আমাকে পুষ্ট ও তুষ্ট করেছে।’

আক্ষরিক অর্থেই এই উপন্যাস পাঠকের মেধা ও মননের কাছে ধরা দিতে চায় এহেন ব্যঞ্জনাতেই। মানুষ আদতে ফিরতে চায় তার স্মৃতি আর শিকড়ে। সেই যাত্রায় সময়ের গুঁড়ো মিশে গেলে আখ্যানের আদলে জীবনের ব্যাখ্যান হয়ে ওঠে সামূহিক। উজ্জ্বল সিনহার উপন্যাস তাই কেবল বাবু চরিত্রের ‘উজানযাত্রা’ নয়, লেখকের একারও নয়; বরং পাঠককে তা প্ররোচনা দেয় অক্ষরের মান্দাসে চেপে নিজের কাছে ফেরায়– ব্যক্তিগত এবং একান্ত উজানযাত্রায়।

[আরও পড়ুন: ইরার রিসেপশনে এলেন না আমিরের প্রাক্তন কিরণ, ফের অশান্তি? জবাব দিলেন আমির]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement