shono
Advertisement
Bengali Drama Review

স্মৃতি ও সমকালের এক আশ্চর্য কথোপকথন ব্রাত্যর 'পুরানো ট্রাঙ্ক'

ব্রাত্য বসুর নাটকে কিশোরের স্বপ্নে ফিরে আসে স্বপনকুমারের দীপক চ্যাটার্জি।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 04:00 PM Feb 12, 2025Updated: 08:34 PM Feb 13, 2025

ইন্দ্রনীল শুক্লা: ব্রাত্য বসু রচিত নাটকের সঙ্গে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা জানেন, তাঁর নাটকে কখনও অরণ্যদেব, কখনও স্কুল জীবনে মারা যাওয়া বন্ধু, কখনও জন্ম না হওয়া কন্যা, কখনও প্রয়াত মা কিংবা মৃত বাবা, -একেবারে রিয়েল চরিত্রের মতো করে মঞ্চে চলে আসেন। হেঁটে চলে বেড়ান, কথা বলেন, ফেলে আসা ভুলের ব্যাখ্যা করেন, কখনও বা উল্লাস কিংবা শোকও প্রকাশ করেন। এই সারিয়্যালিজম তাঁর নাটকের অঙ্গ। এহেন না-চরিত্রদের জাদু বাস্তবতা নির্মাণ ব্রাত্যর নিজস্ব একটা স্টাইল। আর এরকমভাবেই যদি কোনও কিশোরের সকাশে চলে আসেন স্বপনকুমার রচিত সেই দীপক চ্যাটার্জি! সেটাই ঘটেছে প্রদীপ মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দমদম ব্রাত্যজন পরিবেশিত ‘পুরানো ট্রাঙ্ক’ নাটকে।

Advertisement

পরিচালক অভি চক্রবর্তী এর আগে একবার স্বপনকুমার কেন্দ্রিক একটি নাটক করেছিলেন, সুতরাং এমন একটা থিমে তাঁর কাজ দেখার উৎসাহ তৈরি হওয়া অতি স্বাভাবিক। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র কিশোর বাবলু। প্রয়াত বাবার দেওয়া পুরানো ট্রাঙ্ক খুলে সে এক আশ্চর্য সম্ভার আবিষ্কার করে, যা তার জীবনকে বইয়ে দেয় এক ব্যতিক্রমী খাতে ও গতিতে। এই গতি আজকের সময়ে খানিক বেহাল, সামান্য বেমানান, স্মৃতিক্রান্ত, স্বপ্নকাতর। সেই বাবলুর স্বপ্নে দীপক চ্যাটার্জি তো বটেই, একে একে আসে এক স্বপ্নের রাজকুমারী এবং তার প্রয়াত বাবা! তবে বাস্তব জীবনে শুধু চাকুরিরতা বিধবা মা তার সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু সে তো পড়াশোনা করে চাকরি পাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি, তার সঙ্গে স্বপ্নের উড়ানের সম্পর্ক কোথায়!

মঞ্চ, আলোর কথা বলা দরকার। মঞ্চের পিছন দিকে উঠে গিয়েছে বহুতল। তা ঢেকে দিয়েছে দিগন্তের আকাশ। বুজে গিয়েছে বাবলুর বাবার প্রিয় পুকুর। প্রোজেকশনে উড়ন্ত দীপক চ্যাটার্জির যে অবয়ব তা-ও ক্রমাগত ধাক্কা খেতে থাকে বহুতলে। তবুও বইয়ের পাতার থেকে উঠে আসে সে চরিত্র, বাবলুর স্বপ্নে। পুরানো ট্রাঙ্ক খুলতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে আলো। আর বাবলুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হারিয়ে যাওয়া বিড়ির প্যাকেট, হারিয়ে যাওয়া মাঠ নিয়ে যেমন বাবলুর বাবা হাহাকার করে, তেমনই দীপক চ্যাটার্জিও হতাশ, কারণ তারও দিন ফুরিয়েছে। কাগজ বিক্রির দোকানে অনাদরে পড়ে থাকে তাঁর বইয়ের ছেঁড়া কপি। অথচ কী ঝলমলেই না ছিল আগেকার সেই দিন, যখন দীপকের অভিযানের উত্তেজনা ঘুমোতে দিত না পাঠককে। দীপক এ-নাটকে দাঁড়িয়ে আছেন আট ও নয়ের দশকের স্মৃতির দৃশ্যকল্পকে সঙ্গে করে, তাঁর বিধ্বস্ত বিস্মৃতিকেও সঙ্গে করে। মোটের উপর হারিয়ে যাওয়া দিনের, বিগত দিনের নস্টালজিয়ারও একটা চোরা কান্না রয়ে গিয়েছে নাটকে। দীপক বার বার জড়িয়ে পড়েছেন নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র বাবলুর সঙ্গে এক মায়াবী কথোপকথনে। রিয়েল, স্যুরিয়েলের মধ্যে বিস্ময়কর যাতায়াত ঘটেছে। এমন মোমেন্ট তৈরি হয়েছে, যার জেরে নাটকটি চলে যাওয়া সময়ের দিকে ঘাড় ফেরাতে বাধ্য করবে দর্শককে। দীপকের চরিত্রে সুমিত রায় কিংবা বাবলুর বাবার ভূমিকায় ভাল লেগেছে অশোক মজুমদারকে। তাঁরা সিজনড অভিনেতা। কিন্তু কিশোর বাবলুর ভূমিকায় অরিত্রলাল মৈত্রকে দেখে সম্ভাবনাময় মনে হল। তার মায়ের ভূমিকায় মেঘনা উপাধ্যায় সাবলীল।

মোটের উপর ‘পুরানো ট্রাঙ্ক’ মূলত স্মৃতি ও সমকালের এক আশ্চর্য কথোপকথন, নিরন্তর সংশ্লেষ, অনিবার্য সংযোগ। যেখানে এই ট্রাঙ্ক এমন এক চিহ্ন যাকে কেন্দ্রে রেখে নাটকের এক দৃশ্য থেকে আরেক দৃশ্যে বা এক ঘটনা থেকে আরেক ঘটনায়, এমনকি রিয়েলিটি থেকে নন-রিয়েলিটির পরিখা বরাবর মসৃণ গতিতে বিচরণ করেছেন নাটককার। যেখানে বাংলা কমিকস চরিত্রগুলি এবং বাংলার অন্যতম হার্ড বয়েল্‌ড ডিটেকটিভ দীপক চ্যাটার্জির উপস্থিতি নাটককে নিঃসন্দেহে ভিন্নতর মাত্রা দিয়েছে। মিউজিকে দিশারি চক্রবর্তী, আলোয় সৌমেন চক্রবর্তী, থিয়েটান্স-এ সুদীপ্ত কুন্ডু এবং অ্যানিমেশনে ঋতব্রত জোয়ারদার ভালো রকম সহায়তা করেছেন। আরও একটা ব্যাপার বলা দরকার। অহেতুক টেনে লম্বা করা হয়নি এই নাটককে। সোয়া এক ঘন্টার ছিমছাম উপস্থাপনা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মোটের উপর ‘পুরানো ট্রাঙ্ক’ মূলত স্মৃতি ও সমকালের এক আশ্চর্য কথোপকথন, নিরন্তর সংশ্লেষ, অনিবার্য সংযোগ।
  • বাংলা কমিকস চরিত্রগুলি এবং বাংলার অন্যতম হার্ড বয়েল্‌ড ডিটেকটিভ দীপক চ্যাটার্জির উপস্থিতি নাটককে নিঃসন্দেহে ভিন্নতর মাত্রা দিয়েছে।
Advertisement