নির্মল ধর: 'দেবাশিস' এই মুহূর্তের বাংলা নাটকে একটি উজ্জ্বল নাম। যে নামটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অভিনব কোনও বিষয় এবং পরিবেশনায় নাটকের শরীরে পরানো হয় নাট্যাপ্রকরণের অভিনব কোনও কৌশল, যা একই সঙ্গে চোখের আরাম এবং মনের খোরাক। এই নতুন প্রযোজনা চাকদহ নাট্যজন সংস্থার। পরিচালনা শুধু নয়, দেবাশিস নিজেই নাট্যকার। ত্রিপুরায় এক ওয়ার্কশপ পরিচালনা করতে গিয়ে ওখানকার এক প্রত্যন্ত গ্রামের অতি সাধারণ মানুষের জীবনযাপন দেখেই তাঁর চেতনায় ঢুকে পড়ে এই নাটকের ভ্রূণ। তখনই লিখে ফেলেন 'ইস্কুল'।
পাহাড় আর নদীতে ঘেরা গ্রাম। প্রকৃতির অকৃপণ দানে ওই গ্রামের মানুষ শহুরে কোলাহল, জটিল জীবনের থেকে শতহস্তে দূরে যেন এক অন্য গ্রহের বাসিন্দা। ওখানেই অতি সহজসরল তরুণ 'গাদা'র সঙ্গে দেখা হয় মহেন্দ্রের। ঠাম্মির ইস্কুলে জীবনের প্রকৃত পাঠ শেখে সে। যে ইস্কুলে বইখাতা নেই, মাস্টারের বকুনি নেই, পরীক্ষা নেই, পাস-ফেল নেই, আছে শুধু ভালবাসা। প্রকৃতি, জীবজন্তু এবং মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে জয় করার শিক্ষা। এ এক অভিনব ইস্কুল। মহেন্দ্র গাদা ও ঠাম্মির সংস্পর্শে এসে এই ইস্কুলেই শেখে জীবনের প্রকৃত পাঠ। এমন একটি ইউটোপিয়ান বা ভাবনা নিয়ে দৃশ্যের পর দৃশ্য সাজিয়েছেন দেবাশিস প্রাগৈতিহাসিক সারল্যে। যে কারণে গাদা, মহেন্দ্র বা ঠাম্মি, কিংবা সঙ্গে আসা বিল্লি, বগা, চড়াই, চাষি, পুলিশ সব্বাই কেমন প্রায় শিশুর মতো। শিল্পীরা বয়স্ক হলেও শিশু ছাত্রের মতো আচরণ করে। সত্যিই তো তাঁরা তখনও ওই নতুন জীবনচর্চার ছাত্র-ছাত্রী যে! পরিচালকের এমন অভিনব ভাবনাটিও নাটকের বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। ওই যে গোড়ায় বলেছিলাম, দেবাশিস যখন নির্দেশনা-সহ পুরো প্রোডাকশনের দায়িত্বে, তিনি অভিনব কিছু করবেনই। করেওছেন। দর্শক একাডেমির হলে ঢুকেই দেখতে পান পেঁজা-পেঁজা তুলোর মতো সাদা নীল আকাশে ঢাকা একটি গ্রামের এক চিলতে অংশ। পুরো নাটকের পাঠশালা ওই চত্বরটুকু। আলোর প্রক্ষেপণ বেশ সুন্দর।
নাটকটির বাহ্যিক সারল্যের সঙ্গে মিশে থাকে শিল্পীদের অভিনয়ও। বিশেষ করে তিনটি নাম বলতেই হয়- অমিত সাহা, অভীক ধর, ঐশী রায়। বাকিরাও একই স্কেলে ওদের যোগ্য সহযোগিতা করেছেন। আরও একটা কথা- দেবাশিস বললেই সাধারণভাবে যে জমকালো প্রোডাকশনের কথা চোখের সামনে ভাসে 'একটা ইস্কুল' সেটা থেকে যোজন দূরে হয়েও দর্শকের সমীহ আদায় করে নেয় মঞ্চে আলো-আবহের 'মিনিম্যালিস্ট' কৌশলী পরিবেশনায়।
